ফাইল চিত্র।
জ্ঞানী জৈল সিংহ তখন ভারতের রাষ্ট্রপতি। ঠাকুরদা কিশোরীমোহন ত্রিপাঠীর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়েছিল ছোট্ট বিপ্লব। স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন কিশোরীমোহন। বিধায়কও হয়েছিলেন। সেনাবাহিনীর উর্দি পরে দেশের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার মন্ত্র নাতিকে তিনিই দিয়েছিলেন।
১৯৯৪ সালে মারা যান কিশোরীমোহন। বিপ্লবের বয়স তখন ১৪। দুই নাতিই ঠাকুরদার কথা রেখেছিলেন। বড় হয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অফিসার হয়েছিলেন বিপ্লব আর তাঁর ভাই অনয়। কিন্তু বড় অসময়েই ছত্তীসগঢ়ের রায়গড়ের বাড়িতে ফিরছেন কর্নেল বিপ্লব ত্রিপাঠী। ফিরছেন সপরিবার কফিনে শুয়ে। মণিপুরের জঙ্গলে গত কাল জঙ্গিদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া বিপ্লব, তাঁর স্ত্রী অনুজা এবং পাঁচ বছরের ছেলে আবিরের দেহ রায়পুর হয়ে বাড়িতে আসার কথা ছিল আজই। কিন্তু সেনাবাহিনীর বিমানের যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে আজ আর তা হয়নি। আগামিকাল দেহ পৌঁছলে তাঁদের শেষকৃত্য হওয়ার কথা।
বিপ্লবের মামা রাজেশ পট্টনায়ক বলছিলেন, ‘‘ঠাকুরদার অনুপ্রেরণায় ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিল বিপ্লব। ওর বাবা-মাও ওকে উৎসাহ দিয়েছিল। দেশের সেবা করতে গিয়েই ও শহিদ হল। আমরা গর্বিত।’’ বিপ্লব-অনয়ের বাবা সুভাষ ত্রিপাঠী স্থানীয় একটি সংবাদপত্রের সম্পাদক। মা আশাদেবী প্রাক্তন গ্রন্থাগারিক এবং সমাজকর্মী। ১৯৮০ সালের ৩০ মে বিপ্লবের জন্ম। রায়গড়ের স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণি পেরোনোর পরেই তাঁকে ভর্তি করে দেওয়া হয়েছিল মধ্যপ্রদেশের রেওয়ার সৈনিক স্কুলে। তার পর একে একে ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি, ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমির গণ্ডি পেরিয়ে ২০০১ সালে লেফটেন্যান্ট হিসেবে রানিখেতের কুমায়ুন রেজিমেন্টে যোগ দেন বিপ্লব। পরে ডিফেন্স সার্ভিস স্টাফ কলেজের কোর্সে উত্তীর্ণ হন সসম্মানে।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল অনয়ও রেওয়ার সৈনিক স্কুলের প্রাক্তনী। দাদার মতো তিনিও আসাম রাইফেলসের অফিসার। এ বছর হইহই করে গোটা পরিবার একসঙ্গে দীপাবলি কাটিয়েছিল মণিপুরে। বিপ্লবের বাবা-মা রায়গড়ে ফিরে আসেন গত ৬ নভেম্বর। অনয় বাড়ি এসেছিলেন শুক্রবার। কাল দুপুরে সহকর্মীদের কাছে দাদা-বৌদি-ভাইপোর মৃত্যুর খবর পেয়েই আবার রওনা হন দেহ আনতে।
আগামিকাল রায়গড়ের রামলীলা ময়দানে শেষ বারের মতো বিপ্লব ও তাঁর পরিবারকে বিদায় জানাবে আমজনতা। তার আগে আজ দিনভর প্রতিবেশী থেকে জনপ্রতিনিধি— মানুষের ভিড় লেগেই রইল ত্রিপাঠীদের বাড়িতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy