Advertisement
E-Paper

কেরলে লড়াই দুই বাহাত্তুরের

দুই বুড়ো আরব সাগরের ধারে পাঞ্জা লড়ছিলেন। হঠাৎ শোনেন, তাঁদের দল বাংলায় হাত মেলাতে চায়। এক জন ক্ষেপে উঠে বাধা দিয়েছিলেন। অন্য জন বলেছিলেন, আপত্তি নেই। চাইলে জোটের হয়ে প্রচারেও যেতে পারি।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৬ ০৩:৫৫

দুই বুড়ো আরব সাগরের ধারে পাঞ্জা লড়ছিলেন। হঠাৎ শোনেন, তাঁদের দল বাংলায় হাত মেলাতে চায়।

এক জন ক্ষেপে উঠে বাধা দিয়েছিলেন। অন্য জন বলেছিলেন, আপত্তি নেই। চাইলে জোটের হয়ে প্রচারেও যেতে পারি।

বাংলায় সিপিএম-কংগ্রেস হাত ধরাধরি করে তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই করে ফেলেছে। কিন্তু কেরলে দুই দলের দুই ধুরন্ধরের লড়াই চলছে।

সিপিএমের পিনারাই বিজয়ন। কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী উমেন চান্ডি। একসঙ্গে বাহাত্তরে পৌঁছে দুই নেতার পরীক্ষা ১৬ মে-র কেরল ভোট।

১৭ বছর এক টানা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক থাকার পর পিনারাই এ বার মুখ্যমন্ত্রী হতে চান। ভোটে প্রার্থী হয়েছেন। চান্ডি টানা ১১ বারের বিধায়ক। হাজারো দুর্নীতির অভিযোগ তাঁর ও তাঁর মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে। তাতেও জনপ্রিয়তা অটুট। বিনা যুদ্ধে তিনিও গদি ছাড়তে নারাজ।।

বাংলায় সিপিএম-কংগ্রেস জোটের ঘোর বিরোধী ছিলেন পিনারাই। যুক্তি ছিল, পূর্বে কংগ্রেসের সঙ্গে মাখামাখি হলে দক্ষিণে বামেদের ক্ষমতায় ফেরা কঠিন হবে। আপত্তি না টেকায় তেতো মুখে মেনেছেন। চান্ডি এখনও হাসিমুখে বলছেন, ‘‘এক বারও জোটের বিরোধিতা করিনি। অধীর চৌধুরীদের সিদ্ধান্তে নাক গলাইনি। তবে সিপিএম খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল।’’

কেরলে নিয়ম করে প্রতি পাঁচ বছরে সরকার বদলায়। সেই নিয়মে এ বার বাম জোটের ক্ষমতায় আসার পালা। কিন্তু সিপিএমকে নিশ্চিন্ত থাকতে দিচ্ছেন না চান্ডি। কেমন যেন ঘেঁটে দিচ্ছেন। কখনও বলছেন, ‘‘অনেক আসনে এ বার সিপিএমকে পিছনে ঠেলে বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসবে।’’ আবার বিজেপির কে রাজাশেখরন কমিউনিস্টদের দিকে রাজনৈতিক হিংসার অভিযোগ তুললে চান্ডি রুখে দাঁড়িয়ে বলছেন, ‘‘কমিউনিস্টরা স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশ্বাসঘাতকতা করলেও কেরলে তাঁরা শান্তিতে মিলেমিশে থাকেন। বিজেপি সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়াচ্ছে।’’

পিনারাইয়ের আশঙ্কা ছিল, কংগ্রেসকে দুর্নীতি নিয়ে আক্রমণ করলে চান্ডি বলবেন তা হলে বাংলায় হাত মেলালে কেন! চান্ডি সেই পথেই হাঁটছেন না। উল্টে বিজেপি-কে এমন আক্রমণ করছেন। যেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহই তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী, সিপিএম নয়। এর্নাকুলামে সিপিএম জেলা সম্পাদক পি রাজীব বলেন, ‘‘চান্ডি ধুরন্ধর রাজনীতিক। বাংলায় জোট নিয়ে বলছেন না, কারণ ওখানে ওঁরা ছোট শরিক। বিজেপিকে নিজেই বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছেন। যাতে বিরোধী ভোট ভাগ হয়। আবার বিজেপির জুজু দেখিয়ে মুসলিম ভোট ঝুলিতে পুরতে চাইছেন।’’

পিনারাই নির্দেশ দিয়েছেন, কংগ্রেস-বিজেপির গোপন আঁতাঁত হয়েছে বলে পাল্টা প্রচার করতে। নইলে মুখ্যমন্ত্রীর গদি ফসকানোর আশঙ্কা। এমনিতেই তিনি নাকি রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের ঝাড়েবংশে নিকেশে বিশ্বাসী। গোটা দশেক খুন-অপহরণের মামলা তাঁর নামে। নরেন্দ্র মোদীও প্রচারে বলেছেন, এক জন খুনে অভিযুক্ত মুখ্যমন্ত্রী হতে চান। আর একটা মুশকিল হল, পিনারাই আমজনতার মধ্যে মোটেই জনপ্রিয় নন। পছন্দসই মুখ্যমন্ত্রীর সমীক্ষায় তিনি চান্ডি বা নিজের দলের ভি এস অচ্যুতানন্দনের থেকে ঢের পিছিয়ে। কিন্তু দলের ক্যাডারদের তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রশ্নাতীত। গোটা সংগঠন হাতের মুঠোয়।

কোচির ইনফোপার্কের তরুণ ইঞ্জিনিয়ার অজিত বিজয়রাঘবের যুক্তি, ‘‘এমনটাই চাই। উনি শক্ত হাতে প্রশাসন চালাবেন। চান্ডির দলের নেতা-মন্ত্রী, এমনকী নিজের পিএ-পিএসদের উপরেও নিয়ন্ত্রণ নেই। সবাই দুর্নীতিতে জড়িত।’’ সে তো পিনারাইয়ের বিরুদ্ধেও বিদ্যুৎমন্ত্রী থাকার সময় লাভলিন-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে! অজিতের দাবি, ‘‘পিনারাই জলবিদ্যুতে জোর দিয়ে লোডশেডিং সমস্যা মিটিয়ে দিয়েছিলেন। পাশের তামিলনাড়ুতে ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিং হলেও কেরলে সে বালাই নেই।’’

আর একটা মিল রয়েছে দু’জনের। ঘরশত্রু বিভীষণ নিয়ে বাস করেন তাঁরা। চান্ডির ঘরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ভি এম সুধীরন। পিনারাইয়ের ঘরে অচ্যুতানন্দন। সেখানেও দুই ধুরন্ধর প্রথম রাউন্ডে বাজি মেরেছেন। প্রদেশ সভাপতির বদলে চান্ডির ইচ্ছানুযায়ী কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকা তৈরি হয়েছে। আর পিনারাই কান্নুরে নিজের ধর্মাদাম কেন্দ্রে অচ্যুতানন্দনকে প্রচারে তাঁর হয়ে প্রচারে আসতে বাধ্য করেছেন। দু’জনেই জানেন, ১৯ মে ভোটের ফলের পরে নিজেদের লড়াই ছেড়ে আবার ঘরশত্রুদের সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে হবে।

state assembly election 2016
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy