সাত বছরের মেয়ের মৃত্যুকে দুর্ঘটনা বলে চালিয়েছিলেন বাবা। তাতে সায় দেন মা। পুলিশও দুর্ঘটনায় মৃত্যু হিসাবেই মামলা দায়ের করেছিল। কিন্তু মেয়ে মারা যাওয়ার প্রায় এক মাস পরে মায়ের দাবি, খুন করা হয়েছে তাঁর মেয়েকে। খুনি আর কেউ নন, তাঁর স্বামী! অভিযোগ, পুত্রসন্তান প্রত্যাশী বাবা মাছ দেখানোর নাম করে খালে নিয়ে গিয়ে সাত বছরের কন্যাকে হত্যা করেছেন।
চলতি বছরের গত ১০ জুন গুজরাতের খেড়ার বাসিন্দা বিজয় সোলাঙ্কি এবং অঞ্জনা সোলাঙ্কির জ্যেষ্ঠকন্যা ভূমিকার মৃত্যু হয়। পুলিশ নর্মদা খাল থেকে ৭ বছরের মেয়েটির দেহ উদ্ধার করে। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই তখন পুলিশকে জানিয়েছিলেন, তাঁরা ছোট মেয়েকে বাড়ির লোকের কাছে রেখে বড় মেয়েকে নিয়ে বেড়াতে বেরিয়েছিলেন। খালে মাছ দেখতে গিয়ে পা ফস্কে জলে পড়ে গিয়েছে বড় মেয়ে।
কিন্তু মঙ্গলবার পুলিশের কাছে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন কন্যাহারা অঞ্জনা। তিনি জানান, মেয়েকে খুন করেছেন তাঁর স্বামী। কারণ, তিনি স্বামীকে পুত্রসন্তান ‘দিতে পারেননি।’ এক মাস ধরে এই সত্যি লুকিয়েছিলেন। কাউকে যন্ত্রণার কথা বলতে পারেননি। কিন্তু আর পারছেন না। অসহায় লাগছে তাঁর।
অঞ্জনা পুলিশকে বলেছেন, ভূমিকার জন্মের পর থেকেই স্বামী তাঁকে খোঁটা দিতে শুরু করেছিলেন। কারণ, তিনি কন্যাসন্তান চাননি। খেড়া জেলার পুলিশ সুপার রাজেশ গঢ়িয়া বলেন, ‘‘মহিলার দাবি অনুযায়ী, ১০ জুন বেড়াতে বেরিয়েছিলেন তাঁরা। স্বামী বাইক চালাচ্ছিলেন। পিছনের আসনে বসেছিলেন স্ত্রী এবং মেয়ে। নর্মদা খালের কাছে বাইক থামিয়ে তিন জন বেড়াচ্ছিলেন। সেই সময় মেয়েকে খালে ফেলে দেন বিজয়।’’
অন্য দিকে, অঞ্জনা জানিয়েছেন, মেয়েকে খুনের পর তাঁকে চুপ থাকতে বলেন স্বামী। তিনি বলেন, ‘‘আমাকে বলেছিল, ছেলে যখন দিতে পারোনি, চুপ থাকো। কাউকে এ নিয়ে একটা কথা বললে ডিভোর্স দেব।’’
আরও পড়ুন:
শেষে অবশ্য স্বামীর কাছে আর থাকেননি ওই মহিলা। তিনি বাপের বাড়ি চলে গিয়েছেন। সেখান থেকেই থানায় যোগাযোগ করেন। মহিলার দাবি, তাঁর ১১ বছরের দাম্পত্যে বহু বার তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন স্বামী। ভূমিকার পরে তাঁদের দ্বিতীয় সন্তান হয় তিন বছর আগে। কিন্তু দ্বিতীয় সন্তানও মেয়ে হওয়ার স্বামীর অত্যাচার বেড়ে যায়। সংসার ভেঙে যাওয়ার ভয়ে মুখ বুজেছিলেন। এমনকি, বড় মেয়েকে খুন করে যখন মাছের গল্প বানালেন স্বামী, তখনও তিনি সহ্য করেছেন। কিন্তু আর পারেননি।
স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে স্বামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার জানান, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।