Advertisement
E-Paper

উনি দেখলে গুড়িয়াও বেঁচে যেত, আক্ষেপ বাবার

চিনি কোথায়... আমার চিনি কোথায়? জ্ঞান ফিরলেই নাগাড়ে একই কথা বলে চলেছেন বছর ছাব্বিশের তরুণী শিখা খান্ডেলবাল। পরিবারের কারও বলার সাহসটুকু নেই, গত কাল দৌসার গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে তাঁদের দু’বছরের

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৫ ০৩:৫০

চিনি কোথায়... আমার চিনি কোথায়? জ্ঞান ফিরলেই নাগাড়ে একই কথা বলে চলেছেন বছর ছাব্বিশের তরুণী শিখা খান্ডেলবাল। পরিবারের কারও বলার সাহসটুকু নেই, গত কাল দৌসার গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে তাঁদের দু’বছরের

মেয়ে চিনি। ছোট্ট সোনমকে আদর করে ওই নামেই ডাকত সবাই। হাসপাতালের আইসিইউ-এ গুরুতর জখম অবস্থায় ভর্তি চিনির দাদাও। ছ’বছরের সৌমিলের দু’টো হাত, দু’পা-ই ভেঙে গিয়েছে।

মেয়ের মৃত্যুর খবরটা শোনার পর থেকে হাসপাতালে বসে কেঁদেই চলেছেন হনুমান খান্ডেলবাল। গত কাল তিনিই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। গাড়িতে ছিল তাঁর দুই ছেলেমেয়ে, স্ত্রী ও শ্যালিকা। উল্টো দিক থেকে ঝড়ের গতিতে এসে মুখোমুখি ধাক্কা মারে হেমা মালিনীর মার্সিডিজ। তার পরের কয়েকটা মুহূর্ত ভয়াবহ। হনুমান জানালেন, মেয়ের নিথর দেহ, রক্তে ভিজে গিয়েছে ছেলের ছোট্ট শরীরটা, তারই মধ্যে দেখলেন আহত অবস্থায় গাড়ি থেকে নেমে এলেন নায়িকা তথা সাংসদ। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে হাজির হল এক চিকিৎসকের গাড়ি। নায়িকা, তাঁর গাড়ির চালক ও সহকারীকে নিয়ে হুশ করে বেরিয়ে গেল হাসপাতালের উদ্দেশে। পিছনে পড়ে রইলেন তাঁরা। রক্তে

ভেজা অবস্থায়।

সংবাদমাধ্যমেকে খান্ডেলবাল পরিবারের এক আত্মীয় বললেন, ‘‘না হয় জানি উনিও (হেমা) আহত হয়েছিলেন। কিন্তু এক বার খোঁজ তো নিতে পারতেন অন্য পরিবারটি কেমন আছে! ...তাঁদের চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে কি না!’’ এক প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, দু’মিনিটের মধ্যে দুর্ঘটনাস্থল ছেড়ে বেরিয়ে যান হেমা। তার আধ ঘণ্টা পরেও অ্যাম্বুল্যান্স মেলেনি। শেষে অটোতেই চিনির পরিবারকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে।

চিকিৎসা অবশ্য শুরু হল না। ওই অবস্থায় দৌসার জেলা হাসপাতাল তাঁদের পাঠিয়ে দিল জয়পুরের বড় হাসপাতালে। হনুমান বললেন, ‘‘হেমা মালিনীর সঙ্গেই আমার গুড়িয়াকেও যদি ওই চিকিৎসক তাঁর গাড়িতে তুলে নিতেন, তা হলে হয়তো ও বেঁচে যেত...!’’ আক্ষেপ করে এক আত্মীয় বললেন, ‘‘দু’জনের সঙ্গে দু’রকম ব্যবহার! এটা ঠিক হল না।’’

টায়ারের ব্যবসা হনুমান খান্ডেলবালের। প্রতি পূর্ণিমায় দোকান বন্ধ রেখে জয়পুরে যেতেন। এ দিনও গিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘স্পষ্ট মনে করতে পারছি, জয়পুর-আগরা রোডের উপর দিয়ে বেশ আস্তেই গাড়ি চালাচ্ছিলাম। পাশ কাটিয়ে কয়েকটা গাড়ি চলে গেল। লালসোতের কাছে গাড়ি ঘোরালাম। তার পরই দুর্ঘটনা। আর কিছু মনে নেই।’’ কিছু ক্ষণ পরে ফের বললেন, ‘‘ওরা সবাই গান শুনছিল। গাড়ির সামনের আসনে চিনি ওর মায়ের কোলে বসেছিল। আমার মোবাইলটা নেবে বলে বায়না করছিল ও। ফোন খুব ভালবাসত...।’’ থেমে ফের বললেন, ‘‘মায়ের কোলেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। সেই ঘুম আর ভাঙল না।’’

হেমার গাড়ি-চালক রমেশচাদ ঠাকুরের নামে এফআইআর করা হয়েছিল কোতোয়ালি থানায়। পরে তাঁকে অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট পল্লবী শর্মার সামনে হাজির করানো হলে জামিনে মুক্তি দিয়ে দেন তিনি।

এ দিকে, যাঁকে নিয়ে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে সবচেয়ে বেশি হইচই, সেই ‘ড্রিম গার্ল’ ভাল আছেন। নাকের হাড় সামান্য ভেঙেছে। চোট লেগেছে কপালেও। অস্ত্রোপচার হয়েছে দু’জায়গাতেই। শোনা যাচ্ছে, আঘাতের চিহ্ন ঢাকতে সপ্তাহ ছয়েক পরে প্লাস্টিক সার্জারি করা হবে। আপাতত চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন হেমা। চিনির মৃত্যুর কথা শুনে দুঃখপ্রকাশ করেছেন তিনি। হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই বলেছেন, ‘‘শুনে খুব কষ্ট হচ্ছে। বুঝতে পারছি ওই পরিবারের উপর দিয়ে কী যাচ্ছে।’’ হেমাকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে। এসেছেন মেয়ে এষা দেওল ও জামাই ভরত তাখতানি। টুইটারে তাঁর আরোগ্য কামনা করেছেন শাবানা আজমি থেকে অনুপম

খের, ঋষি কপূর।

খান্ডেলবাল পরিবার নিয়ে কিন্তু বিশেষ হইচই নেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে। চিনির বাবা এখনও ভেবে চলেছেন, কী ভাবে বৌকে জানাবেন তাঁদের আদরের ‘গুড়িয়া’ আর নেই। বললেন, ‘‘আর কেউ বাড়ি ঢুকতেই ছুটে আসবে না। জড়িয়ে ধরে আধো আধো গলায় বলবে না, বাবা...।’’

Hema Malini Chinni kahan hai dead road accident
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy