Advertisement
E-Paper

সবুর করুন, ফলবে বুলেট ট্রেনের মেওয়া

১৮-২০ ঘণ্টা নয়। কলকাতা থেকে দিল্লি পৌঁছে যান ১৪ ঘণ্টাতেই। এ বছর না হলেও আসছে বছর। বুলেট বা হাইস্পিড ট্রেন চালু হচ্ছে নাকি! কিন্তু মন্ত্রকের তো টাকাই নেই। তা হলে? মন্ত্রক বলছে, তিষ্ঠ! হবে সবই।

অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৫ ০৩:১২

১৮-২০ ঘণ্টা নয়। কলকাতা থেকে দিল্লি পৌঁছে যান ১৪ ঘণ্টাতেই। এ বছর না হলেও আসছে বছর।

বুলেট বা হাইস্পিড ট্রেন চালু হচ্ছে নাকি! কিন্তু মন্ত্রকের তো টাকাই নেই। তা হলে?

মন্ত্রক বলছে, তিষ্ঠ! হবে সবই। তবে ধাপে ধাপে। বুলেট ও হাইস্পিড ট্রেন খরচসাপেক্ষ। তাই প্রাথমিক ভাবে সেমি হাইস্পিড ট্রেন চালু করতে চাইছে রেল মন্ত্রক। আগামী এক বছরের মধ্যেই পরীক্ষামূলক ভাবে তার দৌড় শুরু হয়ে যাবে বলে
মন্ত্রক জানিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে থেকেই বুলেট ট্রেনের স্বপ্ন ফেরি করছেন নরেন্দ্র মোদী। ঠিক হয়, প্রথম বুলেট ট্রেন চলবে আমদাবাদ-মুম্বইয়ের মধ্যে। এক বছর আগে মোদীর ক্ষমতায় আসার সময় ওই প্রকল্পের খরচ ছিল ৬৪ হাজার কোটি টাকা। সম্প্রতি রেল মন্ত্রক জানিয়েছে, বতর্মানে ওই প্রকল্পের খরচ বেড়ে হয়েছে ৯০ হাজার কোটি টাকা। স্বভাবতই রেলের পক্ষে ওই অর্থ বিনিয়োগ করা সম্ভব নয়। আর এত বড় মাপের প্রকল্পে টাকা ঢালতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না বিদেশি সংস্থাগুলিও। এই পরিস্থিতিতে ট্রেনের গতি বাড়ানোর প্রথম ধাপ হিসেবে তাই সেমি হাইস্পিডেই ভরসা করছে রেল মন্ত্রক।

সেই লক্ষ্যেই বিশেষ ধরনের ট্রেন সেট প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল। ইতিমধ্যেই ডাকা হয়েছে আন্তর্জাতিক দরপত্র। এর মধ্যে দু’টি ট্রেন সেট বিদেশ থেকে আনা হবে। বাকি ১৩টি ট্রেন সেট বানানো হবে ডানকুনিতে। মন্ত্রক জানিয়েছে, যে দু’টি ট্রেন সেট বিদেশ থেকে আনা হবে, প্রাথমিক ভাবে তার মধ্যে একটি ব্যবহার করা হবে রাজধানী হিসেবে। অন্যটি শতাব্দী এক্সপ্রেস হিসেবে।

এই প্রকল্পের ফায়দা পেতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গও। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী মোদীর মেক ইন ইন্ডিয়া যোজনাকে মাথায় রেখে বরাত পাওয়া বিদেশি সংস্থাকে ট্রেন সেট বানাতে হবে ভারতেই। মন্ত্রকের সিদ্ধান্ত, সেই ট্রেন সেট তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণ হবে রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষিত ডানকুনির ইলেকট্রিক লোকো ইউনিটে।

ট্রেন সেট প্রকল্পটি কী? মন্ত্রক বলছে, শহরতলিতে যে লোকাল ট্রেন চলে তারই উন্নত ধাঁচের সংস্করণ হল ট্রেন সেট। ইঞ্জিনবিহীন গোটা ট্রেনটি একটি ‘সিঙ্গল ইউনিট’। দু’দিকেই চলতে সক্ষম। সাধারণ দূরপাল্লার গাড়িগুলির তুলনায় এর কামরাগুলি পরস্পরের (স্কাফেনবার্গ কাপলারস্) সঙ্গে অনেক দৃঢ় ভাবে সংযুক্ত থাকে। ফলে এই ট্রেনের গড় গতিবেগ সাধারণ ট্রেনের চেয়ে অনেক বেশি। মন্ত্রকের এ কর্তা বলেন, ‘‘এরোডায়নামিক্সের কথা মাথায় রেখে প্রথম কামরাটি অনেকটা বুলেট ট্রেনের মতো ছুঁচলো হয়ে থাকে। যাতে বায়ুর ঘর্ষণজনিত বাধা উপেক্ষা করে ট্রেনটি দ্রুতগতিতে দৌড়তে সক্ষম হয়।’’ রেল মন্ত্রকের লক্ষ্য, অন্তত ১৬০ কিলোমিটার গতিতে ওই ট্রেন চালানো। ফলে কলকাতা-দিল্লি রুটে অন্তত চার থেকে ছয় ঘণ্টা সময় সাশ্রয় হবে বলেই দাবি মন্ত্রকের।

মন্ত্রক আরও জানিয়েছে, অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন এই ট্রেনগুলি দ্রুত স্পিড যেমন তুলতে পারে, তেমনি দ্রুত থামতেও পারে। সেই সঙ্গে নিরাপদও। এ ছাড়াও ট্রেন সেটের সব থেকে বড় ফায়দা হল বিদ্যুৎ সাশ্রয়। সাধারণ দূরপাল্লার ট্রেনের চেয়ে উন্নত প্রযুক্তির কারণে অনেক কম বিদ্যুতে দৌড়তে পারে এই ট্রেনগুলি। চিনের একটি সংস্থার দাবি, তারা সে দেশে ট্রেন সেটের মাধ্যমে ওই গতিতে ট্রেন চালায়। মন্ত্রক জানিয়েছে, ওই সংস্থা ভারতেও বিনিয়োগে আগ্রহী।

একটি ট্রেন সেটের আয়ু ৩৫ বছর। প্রথম সাত বছর সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকবে সংশ্লিষ্ট বিদেশি সংস্থাটি। পরে সেই দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে ভারতীয় রেলের হাতে। আর এই রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও বেছে নেওয়া হয়েছে ডানকুনিকে। মন্ত্রক বলছে, রেলমন্ত্রী থাকাকলীন মমতা ডানকুনিতে ১২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ইলেকট্রিক লোকো নির্মাণ ও অনুসারি কারখানার ঘোষণা করেছিলেন। ইতিমধ্যেই প্রায় ৭৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে ওই প্রকল্পে। মন্ত্রক জানিয়েছে, ওই প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণজনিত সমস্যা রয়েছে। তবে রাজ্যের সঙ্গে কথা বলে সেই সমস্যা দ্রুত মিটিয়ে ফেলার ব্যাপারে আশাবাদী রেলকর্তারা।

অতএব, পাকছে বুলেটের স্বপ্ন।

Delhi Train High speed train Kolkata Narendra Modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy