E-Paper

বিদেশি নাগরিক সংশোধনী আইন চালু দেশে, আটক শিবির গড়তে হবে, সব রাজ্যকে নির্দেশ কেন্দ্রের

গত বাজেট অধিবেশনে অভিবাসন ও বিদেশি নাগরিক সংশোধনী বিলটি পাশ হয় সংসদে, যা গত রাত থেকে কার্যকর হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, শুধুমাত্র নেপাল ও ভুটানের বাসিন্দারা বিনা ভিসায় কেবল পাসপোর্ট দেখিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারবেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৭:৩৫
অমিত শাহ।

অমিত শাহ। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

বিপদ কি বাড়ল অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে ধৃত বাংলাভাষী শ্রমিকদের! দেশে গতকাল থেকে অভিবাসন ও বিদেশি নাগরিক সংশোধনী আইন কার্যকর হয়েছে। যে আইনে বলা হয়েছে, কোনও অনুপ্রবেশকারী ধরা পড়লে তাঁকে নিজের দেশে ফেরত না পাঠানো পর্যন্ত ‘ডিটেনশন ক্যাম্পে’ (আটক শিবির) আটক রাখতে পারবে সংশ্লিষ্টরাজ্য সরকার।

গত বাজেট অধিবেশনে অভিবাসন ও বিদেশি নাগরিক সংশোধনী বিলটি পাশ হয় সংসদে, যা গত রাত থেকে কার্যকর হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, শুধুমাত্র নেপাল ও ভুটানের বাসিন্দারা বিনা ভিসায় কেবল পাসপোর্ট দেখিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারবেন। বাকি সব দেশের নাগরিকের ভারতে প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পাসপোর্ট ও ভিসা আবশ্যক। তবে ২০০৩ সালের আগে আসা তিব্বতিরা এবং ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে প্রতিবেশী বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে বৈধ কাগজ নিয়ে বা বৈধ কাগজ ছাড়া ভারতে আসা হিন্দু, জৈন, শিখ, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পার্সিরা এই আইনের আওতায় আসবেন না।

আইনে বলা হয়েছে, যথাযথ নথি না থাকায় ভারতে প্রবেশের সময়ে ধরা পড়লে বা অবৈধ ভাবে ভারতে রয়েছেন, এমন অনুপ্রবেশকারী ধরা পড়লে, তাঁদের নিজেদের দেশে না পাঠানো পর্যন্ত ‘ডিটেনশন ক্যাম্পে’ বন্দি রাখতে হবে। যে কারণে সব রাজ্যকে আটক শিবির তৈরির নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র।

প্রসঙ্গত, বৈধ নথি থাকা সত্ত্বেও, সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের একাংশকে (বাংলায় কথা বলায়) অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়েছে, বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যে। যাঁদের অনেককে আবার পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে ‘পুশ ব্যাক’ করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টও সম্প্রতি ব্যাখ্যা চেয়েছে, বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে কোন যুক্তিতে। তৃণমূল নেতৃত্বের আশঙ্কা, অভিবাসন আইন কার্যকর হওয়ায় নথি নিয়ে সামান্য সন্দেহ হলেই বাঙালি শ্রমিকদের বিদেশি বলে চিহ্নিত করে আটক-শিবিরে পাঠানো আরও সহজ হবে। ভোটমুখী পশ্চিমবঙ্গ ও অসমে মেরুকরণের হাওয়া তুলতেই ওই উদ্যোগ বলেই অভিযোগ বিজেপি-বিরোধীদের। বিজেপির পাল্টা বক্তব্য, যে সব বিদেশি ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও এ দেশে রয়েছেন, যাঁরা অনুপ্রবেশ করে এ দেশের মানুষের রোজগারে হাত দিয়েছেন, মূলত তাঁদের চিহ্নিত করে নিজেদের দেশে পাঠাতেই ওই আইন আনা হয়েছে। যাঁর কাছে বৈধ নথি রয়েছে, তাঁকে হেনস্থা করা হবে কেন।

বিজেপি ওই দাবি করলেও, গত কয়েক মাস ধরে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলাদেশি সন্দেহে ধরপাকড় করা হচ্ছে। এই নিয়ে সরব পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুপ্রিম কোর্টে পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদ জনস্বার্থ মামলা করেছে। পর্ষদের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের বক্তব্য, বাংলাভাষী মুসলিম মাত্রেই বাংলাদেশি বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। বাংলা ভাষাকে বাংলাদেশি ভাষা বলা হচ্ছে। পর্যদের চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল সাংসদ সামিরুল ইসলাম আজ বলেন, ‘‘বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ২২ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করেন। বিজেপি শাসিত রাজ্যে তাঁদের অহেতুক সন্দেহ করা হচ্ছে। কেউ রাজ্যের বাসিন্দা কি না তা পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনের কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে না। এই আইন যুক্তরাষ্ট্রীয়কাঠামোয় আঘাত।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Amit Shah Illegal Immigrants Central Government

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy