Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

‘গোপন’ আধারে তর্ক সমকামও

ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে মোবাইল ফোন থেকে সরকারি প্রকল্প, আধার কার্ডের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করলে তা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার খর্ব করে কি না, এই প্রশ্নে শুনানি শুরু হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চে।

—নিজস্ব চিত্র।

—নিজস্ব চিত্র।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৭ ০৪:০৫
Share: Save:

আধার কার্ডের মামলা থেকে সমকামিতা, যোগসূত্র গোপনীয়তা। গোপনীয়তার অধিকার মৌলিক অধিকার কি না, সেই সওয়াল-জবাবে এ ভাবেই ঢুকে পড়ল যৌন স্বাধীনতার বিষয়টি।

ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে মোবাইল ফোন থেকে সরকারি প্রকল্প, আধার কার্ডের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করলে তা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার খর্ব করে কি না, এই প্রশ্নে শুনানি শুরু হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চে। সেখানেই বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় মন্তব্য করেন, ‘‘বিয়ে, প্রজনন, যৌন রুচি গোপনীয়তার মধ্যে পড়ে। যদি গোপনীয়তা মৌলিক অধিকার হয়, তা হলে নাজ ফাউন্ডেশনের মামলায় আমাদের রায়ও প্রশ্নের মুখে পড়ে যায়।’’

নাজ ফাউন্ডেশনের মামলাটি কী?

ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা অনুযায়ী সমকামিতা অপরাধ। এর বিরুদ্ধে মামলা করেছিল নাজ ফাউন্ডেশন। দিল্লি হাইকোর্ট ওই ধারাকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে আখ্যা দেয়। কিন্তু ২০১৩-য় সুপ্রিম কোর্ট বলে, ৩৭৭ ধারা অসাংবিধানিক নয়। যদিও সেই রায়ের সংশোধনী চেয়ে ফের আপিল করেছে ফাউন্ডেশন। তার এখনও নিষ্পত্তি হয়নি।

আরও পড়ুন: জঙ্গিদের ‘নিরাপদ আশ্রয়’ পাকিস্তান, ঘোষণা আমেরিকার

শুনানির প্রথম দিনে অবশ্য গোপনীয়তা নিরঙ্কুশ হতে পারে না বলেই আদালতের পর্যবেক্ষণ। প্রধান বিচারপতি জে এস খেহরের নেতৃত্বে নয় বিচারপতির বেঞ্চ বলেছে, গোপনীয়তার অধিকার নিরঙ্কুশ নয়, প্রশ্নাতীতও নয়। বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের মন্তব্য, দাম্পত্য সম্পর্ক গোপনীয়তার বিষয় হতে পারে। কিন্তু সন্তান কোন স্কুলে যাবে, সেটা গোপন বিষয় নয়।

সুতরাং আদালতের মতে, সরকার এমন আইন তৈরি করতেই পারে যাতে নাগরিকদের উপর কিছুটা বাধানিষেধ আরোপ হয়। ঘটনাচক্রে কেন্দ্রীয় সরকার আজই সংসদে জানিয়েছে, ২১০টি সরকারি ওয়েবসাইটে আধার সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

এখন আদালতের কাছে প্রশ্ন হল, গোপনীয়তার অধিকারের সীমা থাকা এক জিনিস। তা হলেও তো গোপনীয়তাকে অধিকার বলে মেনে নিতে হয়। গোপনীয়তা কি সাংবিধানিক অধিকারের মধ্যে পড়ে? কেন্দ্রের বক্তব্য ছিল, পড়ে না। অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল বলেছিলেন, সংবিধানে মৌলিক অধিকারের তালিকায় গোপনীয়তার অধিকার নেই।

পাল্টা যুক্তিতে প্রবীণ আইনজীবী সোলি সোরাবজি আজ বলেন, সংবিধানে উল্লেখ নেই বলেই তা অধিকার নয়, সে কথা বলা যায় না। সংবিধানে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার কথাও বলা নেই। তা বাকস্বাধীনতার অধিকার থেকে এসেছে। আইনজীবী গোপাল সুব্রহ্মণ্যম বলেন, জীবনের অধিকার এবং স্বাধীনতার অধিকার সংবিধান তৈরির আগে থেকেই স্বীকৃত। গোপনীয়তার অধিকার তার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।

কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে গোপনীয়তার প্রশ্নটি কতটা প্রাসঙ্গিক? আইনজীবী শ্যাম দিভানের যুক্তি, সোশ্যাল মিডিয়ায় কে কী তথ্য দেবে, সেটা তার স্বাধীন সিদ্ধান্ত। বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের মতে, মানুষ ইন্টারনেটে নিজের তথ্য দেওয়া মানে গোপনীয়তার অধিকার সমর্পণ করা নয়। বৃহস্পতিবারও শুনানি চলবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Aadhaar Card Homosexual PAN
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE