Advertisement
১৮ মে ২০২৪

জাতপাতের অঙ্কেই জৈন রূপাণীকে ভার

নির্ভেজাল জাতপাতের অঙ্ক। আর তাতেই শেষ মুহূর্তে নাম কাটা গেল পটেল সমাজের নেতা নিতিন পটেলের। কুর্শিতে বসলেন বিজয় রূপাণী। বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, কৌশলগত কারণেই জৈন সম্প্রদায়ের ওই নেতাকে মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসানো হয়েছে।

 বিজয় রূপাণী

বিজয় রূপাণী

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৪২
Share: Save:

নির্ভেজাল জাতপাতের অঙ্ক। আর তাতেই শেষ মুহূর্তে নাম কাটা গেল পটেল সমাজের নেতা নিতিন পটেলের। কুর্শিতে বসলেন বিজয় রূপাণী। বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, কৌশলগত কারণেই জৈন সম্প্রদায়ের ওই নেতাকে মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসানো হয়েছে। দল আশা করছে, জাতিগত সমীকরণের প্রশ্নে ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী পটেল সম্প্রদায়ের সঙ্গে দলিত, ওবিসি-র যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে তা অনেকাংশেই মেটানো সম্ভব হবে এতে।

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আনন্দীবেন চাইছিলেন, তিনি চলে গেলেও ক্ষমতা থাকুক কোনও পটেল নেতার হাতে। তাই নিতিনের সমর্থনে সরব হন তিনি। বিধায়কদের একটা বড় অংশও নিতিনের সমর্থনে এগিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু শেষ বেলার বৈঠকে নিতিন পটেলকে টপকে যান বিজয় রূপাণী। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গত কাল দলীয় বৈঠকেই মুখ খোলেন আনন্দীবেন। রাজ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরানোর জন্য দলের সভাপতি অমিত শাহকে দায়ী করেন। মনে করিয়ে দেন, প্রশাসন চালানোর কোনও অভিজ্ঞতা রূপাণীর নেই। আনন্দীবেনের ঘনিষ্ঠ এক বিধায়কের বক্তব্য, আসলে আনুগত্যের পুরস্কার পেলেন রূপাণী। সোহরাবুদ্দিন মামলায় গুজরাতে যাওয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা থাকায় দীর্ঘ সময় দিল্লিতে থাকতে হয়েছে অমিত শাহকে। সে সময়ে রূপাণীর বাংলোই ছিল তাঁর বাসস্থান। এখন রামায়ণের ভরতের মতো আসনে পাদুকা রেখে অমিত শাহের নির্দেশ মতো রাজ্য চালাবেন রূপাণী।

এই সিদ্ধান্তে আনন্দীবেন ক্ষুব্ধ হলেও দল জানে এখনই তিনি নরেন্দ্র মোদী বা অমিত শাহের বিরুদ্ধে সরাসরি বিদ্রোহ করার সাহস পাবেন না। যদিও ভবিষ্যতে তিনি পিছন থেকে ছোবল মারতে পারেন। কারণ, দু’বছর মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকায় আনন্দীবেনের প্রতি দল ও প্রশাসনের একাংশে একটা আনুগত্য তৈরি হয়েছে।

তবে ভোটের আগের বছরে এসে প্রভাবশালী পটেলদের উপেক্ষা করা বা চটানোর ঝুঁকিও নিতে চাননি অমিত শাহ, নরেন্দ্র মোদীরা। রাজ্যে বিজেপি বিধায়কদের মধ্যে পটেলরাই সংখ্যায় ভারী। ফলে জৈন নেতা রূপাণীকে বেছে নেওয়ার প্রভাব পটেল সমাজে পড়তে বাধ্য। যার সুযোগ নিতে পারেন আনন্দীবেন ও নিতিন। দু’জনেই পটেল সম্প্রদায়ের ও মেহশনা এলাকার। এ ছাড়া, সংরক্ষণের দাবিতে গুজরাত জুড়ে সরব রয়েছেন পতিদার সমাজের হৃার্দিক পটেল। যুব সমাজের সমর্থন রয়েছে তাঁর দিকে। এই পরিস্থিতিতে পটেল সমাজকে তুষ্ট রাখতে ও ভোটব্যাঙ্ক অটুট রাখতে নিতিনকে উপমুখ্যমন্ত্রী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল।

সম্প্রতি হয়ে যাওয়া পুর নির্বাচনে প্রায় ৭ শতাংশ ভোট কমেছে বিজেপির। শহর ও শহরতলি এলাকায় সমর্থনে ধস, প্রশাসনিক ক্ষেত্রে রাজ্য প্রশাসনের ব্যর্থতা, আনন্দীবেনের মেয়ে-জামাইয়ের বিরুদ্ধে জমি দুর্নীতির অভিযোগ, দলিত নিগ্রহের ঘটনা, পটেল আন্দোলন— এই সব নিয়ে বার-বার অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছিল দলকে। দু’বছরের কার্যকালে বিভিন্ন ঘটনাতেই মোদীকে তাঁর ঘনিষ্ঠ আনন্দীবেনের ঢাল হতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত উনার দলিত নিগ্রহের ঘটনার পরে মোদী বুঝতে পারেন আনন্দীবেনকে সরানো ছাড়া আর কোনও রাস্তা খোলা নেই। গো-রক্ষার নামে উনার দলিত কাণ্ডে তিনি যে ক্ষুব্ধ তা নিয়ে আজ সরকারের অনুষ্ঠানে মুখ খুলতে বাধ্য হন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘কিছু দুষ্কৃতী নিজেদের পাপকর্ম ঢাকতে গো-রক্ষার নামে দোকান খুলে বসেছে।’’

তবে বিজেপিরই একাংশ বলছে, এ হল ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। এর আগেও যখন পটেল মুখ্যমন্ত্রীরা ব্যর্থ হয়েছেন, তখন সামাজিক ভারসাম্য রাখতেই পটেল নন এমন কাউকেই মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছে। কেশুভাই পটেল যখন ১৯৯৬ সালে দায়িত্ব ছাড়েন তখন মুখ্যমন্ত্রী হন জৈন সম্প্রদায়ের সুরেশ মেটা। একই ভাবে ২০০১ সালে এক বার ফের কেশুভাইকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় ওবিসি নেতা নরেন্দ্র মোদীকে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, এই কৌশলেই রাজ্যে পটেল সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অন্যান্য সম্প্রদায়ের ক্ষোভ কমিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়। আখেরে যার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে ভোটের বাক্সে। আগামী বছর বিধানসভা ভোটেও সেই ধারা বজায় থাকবে বলেই আশায় বুক বাঁধছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Vijay Rupani Gujarat CM Nitin Patel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE