অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস
সংসারে ঝগড়া-বিবাদ হয় না, এমন দম্পতি খুঁজে পাওয়া যাবে না। তা বলে একে অন্যের বিরুদ্ধে ৬৭টি অভিযোগ দায়ের! তার মধ্যে বধূ নির্যাতন, মারধর, গালাগালি, হাতাহাতি থেকে শুরু করে আদালত অবমাননার মামলা পর্যন্ত রয়েছে। বেঙ্গালুরুর ওই দম্পতির নালিশের বহর সামলাতে শেষ পর্যন্ত আসরে সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ, ওই তরুণী বা তাঁর স্বামীর আর কোনও অভিযোগ দায়ের করতে পারবে না কোনও থানা বা আদালত। একইসঙ্গে বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ, দাম্পত্য কলহের মাঝে পিষে নষ্ট হচ্ছে ৯ বছরের শিশুর শৈশব।
থানা-পুলিশ থেকে আদালত। কোথায় নেই অভিযোগ। এমনকী নিজেদের সন্তানের স্কুলে গিয়েও ঝগড়া-বিবাদ, হাতাহাতিতে জড়িয়েছেন দু’জন। সামান্য বিষয় নিয়েও অভিযোগ নথিবদ্ধ করেছেন থানা-পুলিশে। আর এটা করতে করতে জমেছে অভিযোগের পাহাড়। এবার তাই অভিযোগে লাগাম পরাল সুপ্রিম কোর্ট।
পাত্র সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার। মার্কিন প্রবাসী ভারতীয়। আমেরিকার নাগরিকত্বও রয়েছে পাত্রের। পাত্রী বেঙ্গালুরুর তরুণী। এমবিএ। ২০০২ সালে শুভক্ষণে ধুমধাম করে বিয়ে হয়েছিল। তারপর দু’জন চলে যান আমেরিকায়। মধুচন্দ্রিমার পর্ব কাটার পরও ভালই চলছিল সংসার। কিন্তু কয়েক বছর পর থেকে ধীরে ধীরে শুরু হয় তিক্ততা। তবু জোড়াতালি দিয়ে চলছিল। তার মধ্যেই ২০০৯ তাঁদের ছেলে হয়। তারপর থেকেই বিবাদ চরমে। শেষ পর্যন্ত ছেলেকে নিয়ে মার্কিন মুলুক ছেড়ে স্ত্রী চলে আসেন বেঙ্গালুরুতে। থাকতে শুরু করেন বাপের বাড়িতে। বেঙ্গালুরুর একটি বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করান ছেলেকে। শুরু হয় বিবাহ বিচ্ছেদের মামলাও।
আরও পড়ুন: ছেলে-বৌমা বেড়াতে, মায়ের ঠাঁই বারান্দায়, বরাদ্দ আধ প্যাকেট মুড়ি
কিন্তু বিবাদে ইতি পড়েনি। বরং বেড়েছে। ফোনে, ভিডিও কলে ঝগড়া-বিবাদ বেড়েই চলে। আর দেখা হলে তো কথাই নেই! একেবার রণচণ্ডী মূর্তি। আর প্রতিটি ঘটনায় যোগ হয়েছে নতুন অভিযোগ। কখনও স্বামী, তো পরক্ষণেই পাল্টা স্ত্রী। নয় নয় করে এভাবেই স্বামীর অভিযোগের সংখ্যা ৫৮, আর স্ত্রীর ৯।
কিন্তু আর নয়। ওই দম্পতির মামলা শুনানির পর সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি যোশেফ কুরিয়েনের বেঞ্চ স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে, থানা, পুলিশ বা আদালত কেউ ওই দম্পতি বা তাঁর পরিবারের কারও অভিযোগ নথিবদ্ধ করতে পারবে না। আর বেঙ্গালুরুর আদালতকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, ছ’মাসের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ, সন্তান কার কাছে থাকবে এবং বাকি মামলাগুলির নিষ্পত্তি করতে হবে।
আরও পড়ুন: ভালবেসে প্রায় ৪০০ পথকুকুরের দায়িত্ব নিয়েছেন দমদমের দম্পতি
দু’জনের এই ‘সংঘর্ষ’-এর সাক্ষী থেকেছে তাঁদের সন্তানের স্কুলও। একাধিকবার হাতাহাতিতে পর্যন্ত জড়িয়েছেন দম্পতি। তাই স্কুল চত্বরে সন্তানের সঙ্গে দেখা করার উপরও কার্যত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে শীর্ষ আদালত। বিচারপতিরা বলেছেন, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া স্কুল চত্বরে ছেলের সঙ্গে কেউ দেখা করতে পারবেন না। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না হলে স্কুল কর্তৃপক্ষও দু’জনকে একসঙ্গে ডেকে পাঠাতে পারবে না।
তবে একই সঙ্গে ওই দম্পতির সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়েও উদ্বিগ্ন বিচারপতিরা। বিচারপতি যোশেফের পর্যবেক্ষণ, দাম্পত্য কলহের বলি হচ্ছে অসহায় ৯ বছরের শিশু। মানসিক ভাবে সে বিপর্যস্ত। স্কুলে গিয়ে অশান্তি করে তাঁরাই নিজেদের সন্তানের ভবিষ্যৎ নষ্ট করছেন। উল্টো দিকে, তাঁরাও যাতে স্কুলে কারণে অকারণে যোগাযোগ না করেন, তার উপরও নিয়ন্ত্রণ জারি করেছে শীর্ষ আদালত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy