বাবা আগেই পিতৃত্ব অস্বীকার করেছেন। সদ্যোজাতকে নিয়ে ফাঁপরে মা। মেয়ের বয়স কয়েক দিন। তাকেই টিশার্টে মুড়ে ময়লা ফেলার গাড়িতে ফেলে চলে গিয়েছিলেন জন্মদাত্রী। জীবিত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া শিশুটিকে দত্তক নিতে চেয়ে থানায় গিয়েছেন প্রায় ১০০ দম্পতি। মধ্যপ্রদেশের বরেলীর ঘটনা।
গত শুক্রবার সকালে বরেলী শহরের ১৩ নম্বরের ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি গৃহস্থের ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট তুলে আনতে গিয়েছিল পুরসভার গাড়ি। রাস্তায় হঠাৎ কান্নার শব্দ পেয়ে চমকে যান গাড়ির খালাসি। ব্যাপার কী?
গাড়ির মধ্যে ময়লার স্তূপে একটা রংচটা টিশার্ট গোল করে মোড়া ছিল। খালাসির নজর যায় সেই দিকে। সেটি খুলে দেখে চমকে যান তিনি। দেখেন, একটি মেয়ে! বয়স? কয়েক দিন। হুলস্থুল পড়ে যায় শহরে। শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যান সাফাইকর্মীরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। শুরু বাবা-মায়ের খোঁজ।
কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফেলা দেওয়া সদ্যোজাতের মায়ের খোঁজ পায় পুলিশ। চিনিয়ে দেয় ওই রংচটা টিশার্ট। বাড়ি বাড়ি জিজ্ঞাসাবাদের সময় এক যুবক জানান, ওই টিশার্টটি তাঁর। তবে হোলির সময় দু’জন মহিলা তাঁর বাড়িতে কাজ করতে এসেছিলেন। তাঁদের এক জনকে ওই টিশার্টটি দিয়েছিলেন। হাজারি থানার পুলিশের কাছে এই তথ্যই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু বিষয়টি যে যথেষ্ট স্পর্শকাতর, তা বুঝতে সময় লাগেনি তাদের।
কয়েক জন স্বাস্থ্যকর্মীকে নিয়ে শহরের কয়েকটি কলোনি এলাকায় যায় পুলিশ। পুলিশ আধিকারিকেরা সার্জেন চিকিৎসক। ম্যালেরিয়া পরীক্ষার নাম করে বাড়ি বাড়ি খোঁজখবরের সমাই এক মহিলাকে তাঁদের সন্দেহ হয়। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা নিশ্চিত করেন সদ্য মা হয়েছেন ওই মহিলা।
কেন এমন করলেন? পুলিশের প্রশ্নে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেন মহিলা। জানান, তিনি অসহায়। তিনি এ-ও জানান, হাসপাতাল বা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, কাউকে কিচ্ছু জানাননি। বাড়িতেই শিশুর জন্ম দেন। একা!
কেউ কাছে ছিল না। স্বামী ওই যুবতীকে ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। বেঁচে থাকার জন্য ঠিকার কাজ করেন। সেখানেই এক যুবকের সঙ্গে আলাপ। ভালবেসেছিলেন তাঁকে। কিন্তু তিনি সন্তানসম্ভবা হতেই ‘প্রেমিক’ দায় নিতে অস্বীকার করেছেন। ওদিকে সন্তানকে গর্ভে নষ্ট করার মতো সময় ছিল না। কিন্তু মা হয়ে শিশুকে মানুষ করবেন কী ভাবে? তা ছাড়া পাঁচকান হলে লজ্জা। তাই লোকের দেওয়া টিশার্টে সদ্যোজাতকে মুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন ময়লা ফেলার গাড়িতে।
আরও পড়ুন:
আইন মেনে মহিলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কন্যার পিতাকেও গত সোমবার পাকড়াও করে তারা। আদালতের নির্দেশে ধৃত দু’জনেই এখন জেলে।
বরেলী শহরজুড়ে এই খবর ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক নিঃসন্তান দম্পতি শিশুটিকে দত্তক নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। গত মঙ্গলবার থানায় গিয়েছিলেন কম করে ১০০ জন দম্পতি। তাঁরা সকলেই চান ‘অভাগিনী’র বাবা-মা হতে। অনেকে যোগাযোগ করেছেন রাইসেন জেলার শিশুকল্যাণ কমিটির সঙ্গে। প্রশাসন সূত্রে খবর, সকলের আবেদনপত্র খতিয়ে দেখা হবে। তার পর শিশুটিকে দত্তক দেবে তারা।