Advertisement
১৯ মে ২০২৪

গ্রেফতার স্বামী, আরও বিপাকে বিধায়ক রুমি

বিতর্কে ক্রমে আরও বেশি জড়িয়ে যাচ্ছেন কংগ্রেস বিধায়ক রুমি নাথ। গাড়ি চুরি চক্রে মদত দেওয়ার অভিযোগে গত রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁর স্বামী জ্যাকি জাকিরকে। করিমগঞ্জ জেলার ভাঙ্গায় অভিযান চালিয়ে বাড়ি থেকে জ্যাকিকে তুলে নিয়ে আসে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর আজ তাঁকে গুয়াহাটি নিয়ে যাওয়া হয়।

করিমগঞ্জ থানা থেকে জ্যাকি জাকিরকে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। মঙ্গলবার উত্তমকুমার মুহরীর তোলা ছবি।

করিমগঞ্জ থানা থেকে জ্যাকি জাকিরকে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। মঙ্গলবার উত্তমকুমার মুহরীর তোলা ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩৩
Share: Save:

বিতর্কে ক্রমে আরও বেশি জড়িয়ে যাচ্ছেন কংগ্রেস বিধায়ক রুমি নাথ। গাড়ি চুরি চক্রে মদত দেওয়ার অভিযোগে গত রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁর স্বামী জ্যাকি জাকিরকে। করিমগঞ্জ জেলার ভাঙ্গায় অভিযান চালিয়ে বাড়ি থেকে জ্যাকিকে তুলে নিয়ে আসে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর আজ তাঁকে গুয়াহাটি নিয়ে যাওয়া হয়।

পুলিশ সূত্রে খবর, সম্প্রতি গুয়াহাটিতে গ্রেফতার হওয়া গাড়ি চুরি চক্রের যে পাণ্ডাকে বিধানসভার কার-পাস দেওয়া নিয়ে রুমিদেবীর বিরুদ্ধে আঙুল উঠেছে, সেই অনিল চৌহানের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও স্ত্রীর বিরুদ্ধে অনেক কথা বলেছেন জ্যাকি। অভিযোগ, রুমিদেবীই তাঁর সঙ্গে অনিলের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। অনিল প্রায়ই ওই বিধায়কের সরকারি আবাসনে যেতেন।

এ দিন রুমি নাথের ব্যক্তিগত এক দেহরক্ষীকেও গুয়াহাটি থেকে গ্রেফতার করা হয়। ডিসি (অপরাধ দমন) স্বপ্ননীল ডেকা জানান, দেবব্রত বড়পাত্রগোঁহাই নামে ওই সরকারি দেহরক্ষীর সঙ্গে অনিলের যোগাযোগ ছিল। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতকে জেরা করে রুমিদেবী ও জাকিরের সঙ্গে অনিলের ঘনিষ্ঠতার বিষয়ে তথ্য মিলেছে। জানা গিয়েছে, রাজনৈতিক ও পুলিশি সুরক্ষা দেওয়ার বিনিময়ে অনিলের কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়েছেন জাকির। পুলিশ জানিয়েছে, কয়েক দিনের মধ্যে রুমিদেবীকেও জেরা করা হতে পারে। এ দিন সকালে রুমিদেবী দাবি করেন, বিএমডব্লু গাড়িটি ‘টেস্ট ড্রাইভের’ জন্য পাঠানো হয়েছিল।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ সালের মে মাসে রুমি-জ্যাকির বিয়ে নিয়েও জলঘোলা হয়। করিমগঞ্জের হোটেলে এক দল জনতা তাঁদের শারীরিক নিগ্রহ করে বলে অভিযোগ। তার জেরে বনধ, কার্ফু এমনকী গুলিও চলে। মৃত্যু হয় এক জনের। এখন দু’জনের সম্পর্কে চিড় ধরেছে। আইনি বিচ্ছেদ না-হলেও বিধায়ক রুমিদেবী থাকেন শিলচরের ভাড়াবাড়িতে। জ্যাকি করিমগঞ্জ জেলার ভাঙ্গায় পৈতৃক বাড়িতে। একে অপরের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যেই মন্তব্য করেন।

পুলিশি তদন্তে নতুন অনেক তথ্যই উঠে আসছে। জানা গিয়েছে একটি বিএমডব্লু গাড়ির কথাও। কাছাড় জেলার বড়খলা কেন্দ্রের দু’বারের বিধায়ক রুমিদেবী গত বছর জ্যাকির জন্মদিনে ওই মডেলের একটি গাড়ি তাঁকে উপহার দেন। পুলিশের অভিযোগ, সেটিও চোরাই গাড়ি। মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকে চুরি গিয়েছিল। রুমিদেবী বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন। তবে জ্যাকির দাবি, ওই গাড়িটি চোরাই নয়। পুরনো গাড়ি, কিন্তু কাগজপত্র পাকা। সব কিছু সেটি কেনা হয়েছিল। টাকা দিয়েছিলেন রুমিদেবী।

করিমগঞ্জ থানার ওসি ডি ঠাকুরিয়া জানান, গুয়াহাটির আজরা থানায় গাড়ি চুরির একটি মামলায় জ্যাকিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ দিন তাঁকে করিমগঞ্জ আদালতে তোলা হয়। আজরা থানার অনুরোধে ধৃতকে গুয়াহাটি নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেওয়া হয়। জ্যাকি অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি গাড়ি চুরির সঙ্গে জড়িত নন।

এ দিকে, গাড়ি চুরি চক্রের মামলা যতই গুটিয়ে আসছে, রুমিদেবীর পাস থেকে সরছে কংগ্রেস। ওই চক্রের পাণ্ডাকে বিধানসভার কার-পাস দেওয়ার সুপারিশ রুমিদেবী কেন করলেন, তা তদন্তের জন্য স্পিকার প্রণব গগৈ নির্দেশ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈও জানিয়ে দিয়েছেন, রুমিদেবীর বিরুদ্ধে তদন্ত করা হবে। গত কাল প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অঞ্জন দত্ত এ নিয়ে ওই দলীয় বিধায়ককে শো-কজ নোটিস ধরিয়েছেন। শিলচর জেলা কংগ্রেস কমিটি বা সাংসদ সুস্মিতা দেবও যে এই সময়ে তাঁর পাশে নেই— তা স্পষ্ট হয়েছে। সু্স্মিতা দেব বলেছেন, ‘‘দোষ প্রমাণিত হলে দল উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।’’ জেলা সভাপতি অরুণ দত্ত মজুমদারের মন্তব্য, ‘‘তদন্তের আগে কিছু বলব না।’’ রুমিদেবীর নিজের কেন্দ্রেও একাংশ কংগ্রেস নেতা তাঁকে গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন।

পুলিশ সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রীর সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পর গাড়ি চুরি চক্রের সঙ্গে বিধায়ক রুমিদেবীর সম্পর্কের অভিযোগ ভাল ভাবে খতিয়ে দেখতে চাইছেন তদন্তকারীরা। প্রাথমিক তদন্তে কিছু তথ্যপ্রমাণও মিলেছে। এখানেই ‘দাবার ঘুটি’ হয়েছেন জ্যাকি। আড়াই বছর তাঁর সঙ্গে সংসার করেছেন রুমিদেবী। তাঁদের একটি মেয়ে রয়েছে। কিন্তু বিবাদ বাঁধতেই বিয়ের কথা বেমালুম এড়িয়ে গিয়েছিলেন রুমিদেবী। এতে তাঁর উপর চটেছেন জ্যাকি। এমন পরিস্থিতিতে জ্যাকির কাছ থেকে বিধায়কের বিষয়ে তথ্য জানতে চাইছে পুলিশ। গাড়ি চুরি চক্রের সঙ্গে জ্যাকিরও যোগাযোগ রয়েছে বলে তদন্তকারীদের সন্দেহ।

এক পুলিশকর্তার যুক্তি— বিএমডব্লু গাড়িটি জন্মদিনের উপহার হলেও জ্যাকি বেশি দিন সেটি ব্যবহার করতে পারেননি। বিবাদের জেরে পুলিশে অভিযোগ করে জ্যাকিকে গ্রেফতার করিয়েছিলেন রুমিদেবী। হাইকোর্টে বিষয়টির মীমাংসা হলেও, জ্যাকি ফের গাড়িটির দখল পাননি। সেই বিএমডব্লু গাড়িটি চুরির নয়, তা প্রমাণে কেন তৎপর হলেন জ্যাকি?

২০০৬ সালে প্রথম বার বিধানসভা ভোটে জেতেন রুমি নাথ। সদ্য এমবিবিএস পাশ করে ভোটের ময়দানে নামায় মানুষের মন জয় করে নিয়েছিলেন। তখন তিনি ছিলেন বিজেপি প্রার্থী। ২০১০ সালে রাজ্যসভা ভোটে আরও চার দলীয় বিধায়কের সঙ্গে তিনি কংগ্রেস প্রার্থীকে ভোট দেন। বিজেপি তাঁকে বহিষ্কার করে। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস একই আসনে তাঁকে প্রার্থী করে। সে বারও জেতেন তিনি। এর পরই শুরু হয় ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে টানাপড়েন। সে সবের জেরে চাপে পড়ে কংগ্রেসও। পারিবারিক বিবাদ থানা-আদালত পর্যন্ত যায়।

সম্প্রতি দেশের গাড়ি চুরি চক্রের বড় পাণ্ডা অনিল চৌহানকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় দু’টি গাড়ি। দু’টিতেই বিধানসভার কার-পাস লাগানো। সেগুলি রুমিদেবীর সুপারিশে দেওয়া হয়েছিল। অনিলের ঘরে তল্লাশি চালিয়ে রুমিদেবীর সঙ্গে অনিলের স্ত্রীর ছবি পাওয়া যায়। রুমিদেবী দাবি করেন, তিনি ওই মহিলাকেই শুধু চেনেন। অনিলের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগ নেই। পরিচিত ওই মহিলার অনুরোধেই অনিলের নামে কার-পাসের সুপারিশ করেছিলেন।

তবে, রুমিদেবীর ওই বক্তব্য মিথ্যা বলে অভিযোগ করেছেন জ্যাকি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE