কুপ্রস্তাবে তিনি রাজি হননি। তাই গত কয়েক মাস ধরে তাঁকে নানা ভাবে হেনস্থা করছেন বিভাগীয় প্রধান। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়ে গত ১ জুলাই কলেজ কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছিলেন ওড়িশার বালেশ্বরের ছাত্রী।
পুলিশ সূত্রে খবর, চিঠিতে ওই ছাত্রী লেখেন, ‘‘গত কয়েক মাস ধরে বিএড বিভাগের প্রধান তথা সহকারী অধ্যাপক ক্রমাগত হেনস্থা করে চলেছেন। পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। শুধু তা-ই নয়, আমার ব্যক্তিগত সমস্ত তথ্য পরিবারকে জানিয়ে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল, বিভাগীয় প্রধান তাঁর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছেন বার বার। তাঁর প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় নানা ভাবে হেনস্থা করছেন। আমার মানসিক শান্তি কেড়ে নিয়েছেন তিনি। সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যারও চেষ্টা করেছিলাম।’’
ছাত্রী আরও লেখেন, ‘‘ভবিষ্যতে যদি কলেজ কর্তৃপক্ষ বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেন, তা হলে আত্মহত্যা করব। আর আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবেন কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং বিভাগীয় প্রধান।’’ ছাত্রীর সহপাঠীদের দাবি, তাঁর এই অবস্থার কথা জানিয়ে ওই ছাত্রী ১ জুলাই সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করেন। ২ জুলাই তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ যদি কোনও পদক্ষেপ না করেন, তা হলে তিনি আত্মহত্যা করবেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, কলেজের একটি অভ্যন্তরীণ কমিটি গঠন করা হয় এই ঘটনার তদন্তের জন্য। কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছিল। অধ্যক্ষের কাছে রিপোর্ট জমা দেয় সেই কমিটি। গত শনিবার তদন্তের অগ্রগতি এবং কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে তা নিয়ে অধ্যক্ষের কাছে জানতে চেয়েছিলেন ছাত্রী। তাঁকে জানানো হয়, তদন্ত শেষ। কিন্তু এই ঘটনায় কাউকে দোষী পাওয়া যায়নি। ছাত্রীর সহপাঠীদের অভিযোগ, বার বার কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করারও আর্জি জানানো হয়। কিন্তু অধ্যক্ষ জানিয়ে দেন, কেউই দোষী নন! অধ্যক্ষের কাছে থেকে এই জবাব পাওয়ার পরই তাঁর অফিসঘরের সামনে গিয়ে নিজের গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। ৪৮ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করার পর সোমবার ভুবনেশ্বর এমসে রাতে মৃত্যু হয় ওই ছাত্রীর। মঙ্গলবার সকালে বালেশ্বরে নিজের গ্রামে শেষকৃত্য হয় ওই ছাত্রীর। এই ঘটনার জোরালো প্রতিবাদ হচ্ছে রাজ্যে জুড়ে। বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে রাস্তায় বিক্ষোভে নেমেছে বিরোধী দল বিজেডি এবং কংগ্রেস। তাঁদের অভিযোগ, রাজ্য সরকারের ‘অকর্মণ্যতা’র জন্যই ছাত্রীটিকে নিজের প্রাণ দিতে হল।