Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
ভোটে কর্নাটক
National News

বৃহত্তম দল হলে প্রধানমন্ত্রী হব, গণিত রাহুলের

এ বারের প্রশ্ন আরও সরাসরি, ‘‘বিরোধী জোটের সরকার হলে আপনি প্রধানমন্ত্রী হবেন?’’ রাহুল গাঁধী এ বার পাঞ্জাবির বুকের বোতামের কাছটা টেনে ঠিক করে নিলেন। তার পরে বললেন, “যদি কংগ্রেস বৃহত্তম দল হয় তবে, হ্যাঁ।”

শ্রদ্ধা: চিক্কাবল্লাপুরে সুভাষচন্দ্রের মূর্তিতে মালা রাহুলের। ছবি: পিটিআই

শ্রদ্ধা: চিক্কাবল্লাপুরে সুভাষচন্দ্রের মূর্তিতে মালা রাহুলের। ছবি: পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা
বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৮ ১১:৩৪
Share: Save:

প্রশ্ন ছিল, ‘‘আপনি কি ২০১৯-এ প্রধানমন্ত্রী হবেন?’’ মাপা উত্তর এল, ‘‘সেটা নির্ভর করছে কংগ্রেস কতটা ভাল ফল করছে, তার উপর।’’ এ বারের প্রশ্ন আরও সরাসরি, ‘‘বিরোধী জোটের সরকার হলে আপনি প্রধানমন্ত্রী হবেন?’’ রাহুল গাঁধী এ বার পাঞ্জাবির বুকের বোতামের কাছটা টেনে ঠিক করে নিলেন। তার পরে বললেন, “যদি কংগ্রেস বৃহত্তম দল হয় তবে, হ্যাঁ।”

সেমিফাইনাল হওয়ার আগেই ফাইনালের যুদ্ধ ঘোষণা! কর্নাটক ভোটের প্রচার এখন মধ্যগগনে। ২০১৮-তে ভোট আছে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়ে। বস্তুত যা লোকসভা ভোটের সেমিফাইনাল। তার আগেই আজ ২০১৯-এর ভোটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিকল্প হিসেবে নিজেকে তুলে ধরলেন রাহুল।

মঙ্গলবার সকালে বেঙ্গালুরুতে বিশিষ্ট জনেদের সঙ্গে আলাপচারিতায় রাহুল আত্মবিশ্বাসী গলায় দাবি করেন, “মোদীর ফের প্রধানমন্ত্রী হওয়া কার্যত অসম্ভব। বিরোধীদের জোট ভারতের সব থেকে বিপজ্জনক বস্তু। এর সামনে যা পড়ে, সব গুঁড়িয়ে দেয়।’’ রাজনৈতিক অঙ্ক কষেই যে কথাটা বলছেন, তা বোঝাতে বাবার উদাহরণ টানেন রাহুল। মনে করিয়ে দেন, রাজীব গাঁধী ১৯৮৪-তে ৪০ শতাংশ ভোট পেয়ে ৪১৫ আসনে জিতে এসেছিলেন। তার পরেও ১৯৮৯ সালে বিরোধী ঐক্যের ধাক্কা সামলাতে পারেননি। যুক্তি শুনে মুগ্ধ বেঙ্গালুরুর বিশিষ্ট জনেরা। গত সেপ্টেম্বরে রাহুল তখন দলের সহ-সভাপতি। বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আলাপচারিতায় জানান, তিনি ২০১৯-এ প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে প্রস্তুত। এ বার সভাপতি হিসেবে রাহুল স্পষ্ট করে দিলেন, কংগ্রেস বৃহত্তম দল হলে তিনিই হবেন প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার।

আরও পড়ুন: অর্থ মন্ত্রক বন্ধ রাখা হচ্ছে, কটাক্ষ-টুইট রাহুলের

প্রশ্ন উঠেছে, বিরোধী শিবিরে নেতৃত্বের দাবিদার তো অনেক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রয়েছেন। তিনি বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জোটের প্রয়োজনীয়তা বোঝাচ্ছেন। এনডিএ ছেড়ে চন্দ্রবাবু নায়ডুও এই জোটে ঢুকতে চান। দৌড়ে নিজেকে রাখছেন মায়াবতীও। এঁরা কি রাহুলকে মেনে নেবেন? এই বিতর্ক চাপা দিতে কংগ্রেসের পি চিদম্বরমের জবাব, “জোট সরকার হলে সকলের সঙ্গে কথা প্রধানমন্ত্রী ঠিক হবে।’’

কর্নাটকে গত ক’দিনের প্রচারে রাহুল যে রকম সাড়া পেয়েছেন, তাতে তাঁর আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে গিয়েছে। এর মধ্যে রাহুল নিজেকে প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হিসেবে তুলে ধরায় কর্নাটকে কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা আরও উজ্জীবিত হবেন বলে দাবি দলের নেতাদের। তাঁদের মতে, বাকি রাজ্যেও কংগ্রেস কর্মীরা ২০১৯-এর জন্য স্পষ্ট দিশা পেলেন।

রাহুল আজ রীতিমতো অঙ্ক কষে বুঝিয়েছেন, মোদীকে হঠানো অসম্ভব নয়। তাঁর পাটিগণিত অনুযায়ী, এসপি, বিএসপি ও কংগ্রেসের জোট হলে উত্তরপ্রদেশে বিজেপি পাঁচটির বেশি আসন পাবে না। তাতেই বিজেপির আসন ২৭০ থেকে ২০০-তে নেমে আসতে পারে। বিহারেও ধাক্কা খেলে ক্ষমতায় ফেরা কঠিন হবে বিজেপির। কংগ্রেস যদি বিরোধীদের মঞ্চ হিসেবে কাজ করতে পারে, তা হলে বিজেপির সুযোগ কম। রাহুল বলেন, “২০০ আসন পেলে, মোদী এমনিতেই প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। কোনও শরিকই তাঁকে সমর্থন করবে না।’’

কেন মোদী হারবেন, তার ব্যাখ্যায় রাহুল আজ তাঁকে ও ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এক গোত্রে ফেলে বলেন, দু’জনেই ক্ষমতায় এসেছেন কর্মহীনদের ভোটে। চিনের সঙ্গে টক্করে এঁটে উঠতে না পেরে কাজ জোগাতে ব্যর্থ দু’জনেই।

বিজেপি তাঁর বক্তব্যকে দিবাস্বপ্ন বলে উড়িয়ে দিলেও ছেড়ে কথা বলেননি রাহুল। বেঙ্গালুরুর অনুষ্ঠানের পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি আরএসএসকে তুলনা করেছেন মিশর-তুরস্কের মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে। যারা রাজনৈতিক ভাবে ক্ষমতায় ফেরা সম্ভব নয় বুঝে বারবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দখল নেয়। অমিত শাহ সম্পর্কে রাহুলের মন্তব্য, ‘‘বিজেপি সততা, ভদ্রতার কথা বলে, তার সভাপতিই খুনে অভিযুক্ত। জেল-ফেরত ইয়েদুরাপ্পা ছাড়া কাউকে খুঁজে পায়নি মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে।’’ রাহুলের মতে, কর্নাটকে লড়াইটা তাই স্বচ্ছ ও নোংরা রাজনীতির। মাফিয়া বনাম মানুষের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE