Advertisement
০৩ মে ২০২৪
India and Bharat

দেশের নাম বদলে গেলে মোদীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র কী হবে? ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ স্লোগানেও পরিবর্তন?

শুধু ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ নয়, গত ন’বছরে ‘ইন্ডিয়া’ নাম দিয়ে নানা কর্মসূচি এবং স্লোগানের কথা বলেছেন মোদী। ‘ডিজাইনড ইন ইন্ডিয়া’, ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’, ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’ রয়েছে সেই তালিকায়।

If India renamed as Bharat what will happen of Make in India and other projects of PM Narendra Modi

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২১:৫২
Share: Save:

আগামী নভেম্বরে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র দ্বিতীয় পর্ব শুরু করলে কোনও নামবিভ্রাট বিতর্কে পড়তে হবে না কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যদি সত্যিই সংবিধান সংশোধন করে ‘ইন্ডিয়া’ ছেঁটে ফেলে শুধু ভারত নামটিকেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়, তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাধের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কী হবে? নাম বদলাতে হবে মোদী সরকারের অনেক কিছুরই।

জি২০ শীর্ষবৈঠকে অংশ নেওয়া বিদেশি রাষ্ট্রনেতাদের কাছে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্র প্রকাশ্যে আসার পরেই জল্পনা, লোকসভা ভোটের আগে দেশের নাম শুধুই ‘ভারত’ করতে চলেছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। এ সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী বিল পাশের জন্যই আগামী ১৮-২২ ডিসেম্বর সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে বলেও জল্পনা দানা বেঁধেছে। আর সেই সঙ্গেই আলোচনায় চলে এসেছে প্রধানমন্ত্রী মোদীর নানা প্রকল্প-কর্মসূচি-স্লোগানে ব্যবহৃত ‘ইন্ডিয়া’ নামের ভবিষ্যৎ।

শুধু ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্প নয়, গত ন’বছরের প্রধানমন্ত্রিত্বে ‘ইন্ডিয়া’ নাম সামনে রেখে একাধিক কর্মসূচি এবং স্লোগানের কথা বলেছেন মোদী। প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের নকশা প্রস্তুতির ক্ষেত্রে ‘ডিজাইনড ইন ইন্ডিয়া’, পরিষেবা ক্ষেত্রে ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র কথা বলেছেন তিনি। তাঁর সরকারের জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার নীতির কথা বলতে গিয়ে একাধিক বার তাঁর মুখে শোনা গিয়েছে ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’ স্লোগান। সংসদের আসন্ন বিশেষ অধিবেশনে দেশের নাম বদলে গেলে মোদীর ব্যবহৃত ‘ইন্ডিয়া’ কোথায় যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ইতিমধ্যেই। সূত্রের খবর, ওই অধিবেশনে বিজেপি সাংসদ প্রবেশ বর্মা একটি ‘প্রাইভেট মেম্বারস বিল’ আনতে পারেন। সেখানে সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে ‘ইন্ডিয়া’ শব্দটি বাদ দেওয়ার প্রস্তাব থাকবে।

প্রসঙ্গত, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু জি২০ সমাবেশে অংশ নেওয়া রাষ্ট্রনেতাদের একটি নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সেই উপলক্ষে আমন্ত্রণপত্রও যাচ্ছে নিমন্ত্রিতদের কাছে। সেই আমন্ত্রণপত্র ঘিরেই তোলপাড় পড়ে গিয়েছে জাতীয় রাজনীতিতে। কারণ, ভারতের রাষ্ট্রপতি কাউকে কোনও চিঠি লিখলে তাতে চিরাচরিত ভাবে লেখা থাকে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া’ কথাটি। কিন্তু জি২০-র রাষ্ট্রনেতাদের আমন্ত্রণ জানানোর চিঠিতে লেখা হয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ভারত’ কথাটি লেখা হয়েছে। এর পরেই প্রশ্ন উঠেছে, আচমকা এমন বদলের কারণ কি?

এই বিষয় নিয়েই বিজেপিকে আক্রমণ করেছে বিরোধীরা। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ এক্স-এ (সাবেক টুইটার) মঙ্গলবার লিখেছেন, ‘‘তা হলে যেটা শুনেছিলাম, সেটাই সত্যি! আগামী ৯ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি ভবনে জি২০ নেতাদের নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্রে লেখা হয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ভারত’, অথচ চিরাচরিত ভাবে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া’ লেখাই দস্তুর।’’

গত ১৮ জুলাই বেঙ্গালুরুতে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়ান্স’) আত্মপ্রকাশের পরেই ‘সক্রিয়তা’ দেখা গিয়েছিল বিজেপি শিবিরে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, নামমাহাত্ম্যের জেরে বিরোধী শিবির জাতীয়তাবাদে ভাগ বসাতে পারে বুঝেই মোদী খোঁচা দিয়েছিলেন, জঙ্গি সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন’ এবং নিষিদ্ধ সংগঠন ‘পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া’-র নামেও ‘ইন্ডিয়া’ রয়েছে। ভারত দখলকারী ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নামেও ‘ইন্ডিয়া’ রয়েছে। ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সঙ্গে নিষিদ্ধ সংগঠন ‘সিমি’-র (স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অব ইন্ডিয়া) তুলনা টেনেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, ‘‘বিরোধী জোটের নামের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে পাপ।’’ ইন্দিরা গান্ধীর আমলে কংগ্রেসের স্লোগান ‘ইন্দিরা ইজ় ইন্ডিয়া’-কেও কটাক্ষ করেছিলেন তিনি।

তবে বিরোধীদের জোট নয়, দেশের নাম বদলের জন্য মোদী সরকারের ‘সম্ভাব্য উদ্যোগ’ আসলে ‘ইন্ডিয়া বনাম ভারত’ তত্ত্ব নিয়ে আরএসএসের পুরনো অবস্থানের অনুসারী বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন। সঙ্ঘ পরিবার বরাবরই ‘ইন্ডিয়া’ নামটিকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার প্রতীক বলে চিহ্নিত করেছে। ভারতীয় সংবিধান যা-ই বলুক না কেন, আরএসএস নেতাদের যুক্তি, ব্রিটিশদের দেওয়া ওই নাম সনাতন সংস্কৃতি এবং ‘অখণ্ড ভারত’ চেতনার পরিপন্থী। এমনকি, মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে ২০১৩ সালে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত অসমের শিলচরে বলেছিলেন, ‘‘ধর্ষণের ঘটনা ইন্ডিয়ায় ঘটে, ভারতে নয়।’’

বিরোধীদের একাংশ মনে করছেন, লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির এই ‘ভারত-ভক্তি’র প্রচার আরও বাড়বে। কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল, তিন তালাক প্রথা রদ, আযোধ্যার রামমন্দির নির্মাণের পরে ‘ইন্ডিয়া বনাম ভারত’ এবং ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ প্রণয়নকেই পদ্ম শিবির প্রচারের মূল অভিমুখ করতে পারে বলে তাঁদের মত। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়, তেলঙ্গানা, মিজোরামের আসন্ন বিধানসভা ভোটেই তার ইঙ্গিত মিলতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE