‘এয়ার ইন্ডিয়া’র বাহারি ‘ফ্লিটে’র প্রথম ৭৪৭ মডেলের বিমান ছিল এটি। আমেরিকার বোয়িং সংস্থার তৈরি পেল্লায় আকারেই সেই বিমান নিয়ে গর্বের শেষ ছিল না ‘এয়ার ইন্ডিয়া’র। অনেক সাধ করে বিমানটির নামও রাখা হয়েছিল ‘সম্রাট অশোক’। কিন্তু বিমান সংস্থার সেই গর্ব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ১৯৭৮ সালে বছরের প্রথম দিনেই আরব সাগরের বুকে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল এআই ৮৫৫ তথা সম্রাট অশোক। প্রাণ হারিয়েছিলেন বিমানের ২১৩ জন।
গত বৃহস্পতিবার আমদাবাদ থেকে লন্ডনের গ্যাটউইকগামী এআই ১৭১ বিমানটি দুর্ঘটনায় পড়ার পর থেকেই বার বার ফিরে আসছে সম্রাট অশোকের দুর্ঘটনার প্রসঙ্গ। এখনও পর্যন্ত যা জানা গিয়েছে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই এআই ১৭১’এর উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিলেন পাইলট। ঠিক একই ঘটনা ঘটেছিল এআই ৮৫৫ তথা সম্রাট অশোকের ক্ষেত্রেও।
ঘটনার আগের দিনের উড়ানে পাখির জোরালো ধাক্কা সয়েছিল এআই ৮৫৫-এর ডানা। সেই ধাক্কায় ভালই ক্ষতি হয়েছিল ডানায় থাকা ‘ফ্ল্যাপ’এর। সেই ক্ষত সারিয়ে ১ জানুয়ারি, ১৯৭৮ তারিখে রাত ৮টা ১২ মিনিটে মুম্বইয়ে সান্টাক্রুজ় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (অধুনা ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর) থেকে দুবাইয়ের উদ্দেশে উড়েছিল বিমানটি। যদিও সেই উড়ান স্থায়ী হয়েছিল মাত্র এক মিনিটের কিছু বেশি। মুম্বই সৈকত থেকে আরব সাগরের তিন কিলোমিটার গভীরে ভেঙে পড়েছিল বিমানটি।
বিমানবন্দর ছাড়াও পর কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিমানটি পৌঁছে গিয়েছিল আট হাজার ফুট উচ্চতায়। ওড়ার পর নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছতে ডান দিকে বাঁক নেয় বিমানটি। ঠিক সেই সময়েই বিগড়ে যায় ককপিটে থাকা ‘অ্যাটিটিউড ডিরেক্টর ইন্ডিকেটর’ (এডিআই)। প্রসঙ্গত, এই যন্ত্রের মাধ্যমেই দিগন্তরেখার প্রেক্ষিতে বিমানের নাক কত ডিগ্রি কোণে রয়েছে, তা বুঝতে পারেন পাইলট। যন্ত্রটি বিগড়ে যাওয়ায়, বিমানটি ডান দিকে বাঁক নিয়ে স্বাভাবিক উড়ান-অবস্থানে ফিরে এলেও, পাইলট তা বুঝতে পারেননি। অন্য দিকে, উড়ানের সময় রাত হওয়ায় ককপিটের জানলা গিয়ে বাইরে দেখেও কিছু বোঝার উপায় ছিল না। বিমানের ক্যাপ্টেনের আসনে ছিলেন মদনলাল কুকার (৫১)। যাঁর ছিল প্রায় ১৮ হাজার ঘণ্টার বিমান ওড়ানোর অভিজ্ঞতা। ফার্স্ট অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন ইন্দু ভিরমানি (৪৩)। ভারতীয় বায়ুসেনার কমান্ডার ইন্দুর কেরিয়ারে ছিল প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ঘণ্টার বিমান ওড়ানোর অভিজ্ঞতা। ব্ল্যাকবক্স উদ্ধারের পরে ঘটনার তদন্তে উঠে এসেছিল বিমানের ‘অ্যাটিটিউড ডিরেক্টর ইন্ডিকেটর’ খারাপ হওয়ার তত্ত্ব।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)