Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
National News

মুকেশ অম্বানীর আয় চিকিৎসা-স্বাস্থ্য খাতে কেন্দ্র-রাজ্যের মিলিত বাজেটের চেয়ে বেশি!

সমীক্ষায় উঠে এসেছে, ২০১৮ সালে দেশের এক শতাংশ ধনীর প্রতিদিনের আয় বেড়ে হয়েছে ২২০০ কোটি অর্থাৎ ২২০০,০০,০০,০০০ টাকা। দেশের কোটিপতিদের সম্পত্তি বেড়েছে ৩৯ শতাংশ। অন্য দিকে আয় সূচকের নীচের দিকে থাকা দেশের অর্ধেক জনসংখ্যার আয় বেড়েছে মাত্র ৩ শতাংশ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

সংবাদ সংস্থা
জেনিভা শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ১২:৫৩
Share: Save:

এক শতাংশ ধনীর হাতে দেশের অর্ধেক সম্পত্তি!

মুকেশ অম্বানীর একার আয় কেন্দ্র-রাজ্য মিলিয়ে চিকিৎসা, স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা খাতে বরাদ্দের চেয়ে কম!

দেশের এক শতাংশ ধনীর এক দিনের আয় ২২০০ কোটি টাকা!

এমনই সব চোখ কপালে তোলার মতো পরিসংখ্যান উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অক্সফ্যামের সমীক্ষায়। তার মোদ্দা কথা, ধনীরা আরও ধনী হচ্ছেন। হাল ফিরছে না গরিবের। বরং আরও শোচনীয় হচ্ছে তাঁদের আর্থিক অবস্থা। ‘অচ্ছে দিন’-এর স্বপ্ন ফেরি করে ক্ষমতায় আসা নরেন্দ্র মোদী সরকারের পক্ষে যা যথেষ্টই উদ্বেগের। ফের লোকসভা ভোটের মুখোমুখি সরকার। আর এই সময়েই অক্সফ্যামের এই রিপোর্ট মোদী ব্রিগেডকে আরও বেকায়দায় ফেলতে পারে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

সমীক্ষায় উঠে এসেছে, ২০১৮ সালে দেশের এক শতাংশ ধনীর প্রতিদিনের আয় বেড়ে হয়েছে ২২০০ কোটি অর্থাৎ ২২০০,০০,০০,০০০ টাকা। দেশের কোটিপতিদের সম্পত্তি বেড়েছে ৩৯ শতাংশ। অন্য দিকে আয় সূচকের নীচের দিকে থাকা দেশের অর্ধেক জনসংখ্যার আয় বেড়েছে মাত্র ৩ শতাংশ।

ভারতে যে বিপুল আর্থিক বৈষম্য তার প্রমাণ বেআব্রু ভাবে উঠে এসেছে এই রিপোর্টে। দেশের ১ শতাংশ ধনী ব্যক্তির হাতেই রয়েছে ৫১.৫৩ শতাংশ জাতীয় সম্পদ। আবার১০ শতাংশ ধনীর হাতেই রয়েছে দেশের মোট সম্পদের ৭৭.৪ শতাংশ। সেখানে অর্থনীতির সূচকের নীচের দিকে থাকা ৬০ শতাংশ জনসংখ্যার হাতে রয়েছে মাত্র ৪.৮ শতাংশ জাতীয় সম্পদ। আবার দেশের মাত্র ৯ জন ধনীর সম্পত্তির পরিমাণই দেশের ৫০ শতাংশ জনসংখ্যার মোট সম্পদের সমান।

অর্থনীতির এই বৈষম্য স্পষ্ট করে বোঝাতে ভারতের ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে মুকেশ অম্বানীকে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, কেন্দ্র ও রাজ্য মিলিয়ে চিকিৎসা, স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা খাতের মোট ব্যয় বরাদ্দ ২ কোটি ৮ লক্ষ ১৬৬ কোটি টাকা। সেখানে মুকেশ অম্বানীর সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ২ কোটি ৮০ লক্ষ কোটি টাকা। আরও উল্লেখযোগ্য হল, যদি ভারতের এক শতাংশ ধনী ব্যক্তি তাঁদের সম্পত্তির উপর মাত্র ০.৫ শতাংশ অতিরিক্ত কর দেয়, তাহলে দেশের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বরাদ্দ ৫০ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব।

আরও পড়ুন: ব্রিগেড সমাবেশে কত খরচ হল? প্রশ্ন পৌঁছে গিয়েছে নির্বাচন কমিশনে, ইঙ্গিত মুকুলের

আবার গোটা বিশ্বের নিরিখে উদাহরণ দেওয়া হয়েছে আমাজনের। ২০১৮ সালে সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের আয় বেড়ে হয়েছে ১১ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার। তাঁর আয়ের মাত্র এক শতাংশের সমান ইথিওপিয়ার স্বাস্থ্য খাতের বাজেট বরাদ্দ। যেখানে জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ১১ কোটি।

আর এই নিয়েই উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে অক্সফ্যাম। ‘ভারতের এই আর্থিক বৈষম্য তীব্র উদ্বেগের’ মন্তব্য অক্সফ্যামের ইন্টারন্যাশনাল এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর উইনি বায়ানিমার। তিনি বলেন, ‘‘দেশের এক শতাংশ ধনী ব্যক্তির সঙ্গে বাকি জনসংখ্যার আয় এবং সম্পত্তির ব্যবধান কমাতে না পারলে এবং ভারসাম্য আনতে না পারলে গোটা অর্থনৈতিক, সামাজিক ও গণতান্ত্রিক কাঠামোই ভেঙে পড়বে।’’

আরও পড়ুন: মনমোহনের ১০০ দিনের কাজেই এখন মোদীর মুখরক্ষা!

অক্সফ্যামের ভারতের সিইও অমিতাভ বেহার আরও স্পষ্ট করেছেন বিষয়টি। ‘‘এতেই (সমীক্ষা রিপোর্ট) স্পষ্ট, ধনী-গরিবের পার্থক্য কতটা। অর্থাৎ আর্থিক বৈষম্য কতটা প্রকট। সরকার এক দিকে চিকিৎসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ কমাচ্ছে, অন্য দিকে ধনীদের কর কমিয়ে বা ছাড় দিয়ে বৈষম্য আরও বাড়িয়ে তুলছে। আর সেই বোঝা চাপছে গরিব ও নিম্নশ্রেণির গরিব-মধ্যবিত্ত মানুষের উপর।’’, বলছেন অমিতাভ বেহার। তাঁর মতে, অর্থনীতির এই বৈষম্যের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে মহিলা ও শিশুদের উপর।

সারা বিশ্বের নিরিখে ধনীতম অংশের আয় বেড়ে হয়েছে ২৫০০ কোটি টাকা। সম্পত্তি বৃদ্ধির হার ১২ শতাংশ। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার গরিব অর্ধেকের আয় কমেছে ১১ শতাংশ। সমীক্ষায় উঠে আসা ভারতের গত ১৫ বছরের ছবিটা আরও ভয়াবহ। দেশের জনসংখ্যার মধ্যে ১৩ কোটি ৬০ লক্ষ যাঁরা সবচেয়ে গরিব ১০ শতাংশ, তাঁরা ২০০৪ সাল থেকে ঋণের জালে ডুবে আছেন।

সুইৎজারল্যান্ডেরস্কি রিসর্ট শহরে আজ সোমবার থেকেই শুরু হয়েছে ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ)। তার আগে বার্ষিক সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে অক্সফ্যাম। মূলত কোনও নির্দিষ্ট দেশে এবং সারা বিশ্বে আর্থিক বৈষম্য কতটা, তা নিয়ে প্রতি বছরই এই সমীক্ষা করে অক্সফ্যাম। এই বৈষম্যের আশু বিপদ এবং তার মোকাবিলা কী ভাবে করা যায়, তা নিয়েও আলোকপাত করে এই সংস্থা। অক্সফ্যামের দাবি, সমীক্ষার ক্ষেত্রে সর্বসমক্ষে পাওয়া সর্বশেষ সরকারি তথ্যগুলি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে ক্রেডিট সুইস ওয়েল্‌থ ডেটাবুক, ফোর্বসের বিলিয়নেয়ার্স লিস্টের মতো রিপোর্ট বা তথ্য।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Income Rich Survey Mukesh Ambani
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE