চিকিৎসকের মস্তিস্ক আর যন্ত্রের কৃত্রিম হাত— দুইয়ের যুগলবন্দি ‘রোবোটিক সার্জারি’ কি আগামী দিনে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভোল বদলাবে? বর্তমানে হাতে গোনা কয়েকটি ক্ষেত্রে রোবটের সাহায্যে অস্ত্রোপচার করা হলেও আগামী ১৫ বছরে এই পদ্ধতি আমূল বদল আনবে বলে মত চিকিৎসকদের। কনসোলে বসে থাকা চিকিৎসকের আঙুলের ছোঁয়ায় অস্ত্রোপচারের ৯০ শতাংশই যন্ত্র-মানব করবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী চিকিৎসকদের বড় অংশের।
মুম্বইয়ে কোকিলাবেন ধীরুভাই অম্বানী হাসপাতাল তাদের তৃতীয় ‘রোবোটিক সার্জিক্যাল সিস্টেম’-জনসমক্ষে এনেছে শনিবার। বছর কয়েক আগে মুম্বইয়ের এই হাসপাতালে রোবোটিক অস্ত্রোপচার চালু হলেও নতুন প্রজন্মের তৌমাই রোবোটিক সার্জারি সিস্টেমটি ভারতে সর্বপ্রথম বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেন, ‘‘নতুন এই রোবট দেশের চিকিৎসার ক্ষেত্রে মাইলফলক হতে যাচ্ছে। প্রযুক্তি এবং মানব দক্ষতা অবিশ্বাস্য সাফল্য এনে দেবে।’’
এ রাজ্যেও চিকিৎসা ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে রোবটের অগ্রগতি নজরে আসছে। কয়েক মাস আগেই রাজ্যের অন্যতম সরকারি হাসপাতাল এসএসকেএমে রোবোটিক সার্জারির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগের পাঁচতলায় অপারেশন থিয়েটারে প্রায় সাত কোটি টাকা খরচ করে বসানো হয়েছে কেমব্রিজে তৈরি রোবট। আগামীতে অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে কী ভাবে রোবটকে কাজে লাগানো হবে, তার রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের তরফে।
মুম্বইয়ের ওই হাসপাতালের ইউরো-অঙ্কোলজি এবং রোবোটিক সার্জারি পরিচালন কমিটির অন্যতম প্রধান চিকিৎসক টিবি যুবরাজ জানান, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে চিকিৎসকের মস্তিস্ক এবং রোবোটিক হাত অস্ত্রোপচারে দখল নেবে। সেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অর্থাৎ, এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স)-এর ব্যবহার বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকছে বলে জানান। যুবরাজ বললেন, ‘‘রোবোটিক সার্জারি নিয়ে বিভিন্ন দেশ গবেষণা করছে। মনে করা হচ্ছে আগামী ২০৪০ সাল অর্থাৎ, দেড় দশকে ৯০ শতাংশ অস্ত্রোপচারেই হাত থাকবে রোবটের।’’
বর্তমানে এ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ইউরোলজি, স্ত্রীরোগ, কর্কট রোগ, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল, বেরিয়াট্রিক্স, নাক-কান-গলার চিকিৎসায় রোবোটিক সার্জারির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। একাধিক অস্ত্রোপচারও হয়েছে। হাঁটু প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচারেও রোবটের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। আগামীকয়েক বছরে রোবোটিক সার্জারির বিস্তার আরও বাড়বে বলে মত চিকিৎসকদের।
এসএসকেএমের রোবট কমিটির আহ্বায়ক শল্য চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার জানাচ্ছেন, পাঁচ-ছয় বছরের চেষ্টায় রোবট আনা সম্ভব। আপাতত খরচ সাপেক্ষ মনে হলেও ভবিষ্যতে এই খরচ অনেকটা কমবে। একাধিক সংস্থা বাজারে অনেক কম দামে রোবট আনছে। ফলে এই খরচ কমতে বাধ্য। দীপ্তেন্দ্রের কথায়, ‘‘আগামী দশক রোবটের দশক। তবে চিকিৎসকদের ভূমিকাও অস্বীকার করা যাবে না। কারণ বুঝতে হবে রোবট অস্ত্রোপচার করবে না। মানুষের মস্তিষ্ক এবং কনসোলে বসে থাকা চিকিৎসকের আঙুল রোবটকে পরিচালনাকরবে। রোবট সেই আঙুলের নড়াচড়াকে আরও নিখুঁত করার কাজটাই করবে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)