ভোটার তালিকার নিবিড় পরিমার্জনের (এসআইআর) বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আগামী সোমবার বিরোধী ইন্ডিয়া মঞ্চের সাংসদেরা মিছিল করে নির্বাচন কমিশনে যাবেন। তার আগে পর্যন্ত সংসদের দুই কক্ষ অচল রাখা হবে বলেই আজ সকালে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গের কার্যালয়ে বিরোধী সংসদীয় নেতাদের বৈঠকে ঠিক হয়। কথায় আর কাজে যাতে ফারাক না থাকে, সেই বার্তা দিতেই আজ দফায় দফায় দু’কক্ষে হট্টগোল করে অধিবেশন বন্ধ রাখা হয়। একই সঙ্গে, সংসদের বাইরে ধর্না প্রতিবাদ, রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যানকে লেখা খড়্গের আলোচনার দাবি সম্বলিত চিঠি, সংসদকে ঘিরে মিছিল, বিজয় চকে সাংবাদিক সম্মেলন করেও একই বার্তা দেওয়া হয়েছে।
অন্য দিকে, লোকসভায় সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু কেন্দ্রের একাধিকবার বলা অবস্থানের প্রতিধ্বনি করে বলেছেন, এসআইআর নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক মামলা চলছে, সেগুলি বিচারাধীন। তা ছাড়া লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার বলরাম জাখরের পুরনো রুলিং-এর উল্লেখ করে রিজিজুর বক্তব্য, নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক স্বয়ংশাসিত সংস্থা। তার কার্যকলাপ বা সিদ্ধান্ত নিয়ে সংসদে আলোচনা করা চলবে না।
কেন্দ্রের এই বক্তব্যে না দমে বিহার ভোটের আগে স্বর বরং আরও চড়াতে চাইছেন বিরোধী নেতারা। আজ কংগ্রেস, তৃণমূল, ডিএমকে, আরজেডি-র সংসদীয় নেতারা সকালে বিজয় চকে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। বিহার ভোটের আগে বিষয়টি নিয়ে নিরবচ্ছিন্ন চাপ তৈরি করে যাওয়া যেমন কংগ্রেস এবং আরজেডি-র মতো দলের অগ্রাধিকার, তেমনই তৃণমূলও আগামী বছরের গোড়ায় পশ্চিমবঙ্গ ভোটের হিসাব কষছে। তাই তৃণমূলকেও আজ দেখা গিয়েছে সক্রিয় ভূমিকায়। নতুন দায়িত্ব পাওয়া দলের লোকসভার মুখ্য সচেতক কাকলি ঘোষদস্তিদার আজ সকালের বৈঠকে গিয়েছিলেন রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের সঙ্গে। রাজ্যসভায় ফাঁকা ট্রেজারি বেঞ্চে যখন সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহণ বিলটি পাশ করাচ্ছিল সরকার, ডেরেক ওয়েলে নেমে টেবিল চাপড়ে ভোটাভুটি চেয়ে কিছু বিড়ম্বনায় ফেলে দেন তাদের।
খড়্গে আজ ডেপুটি চেয়ারম্যানকে লিখেছেন, ‘ভোটার তালিকার নিবিড় পরিমার্জন শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রথমে বিহারে এবং তার পর পশ্চিমবঙ্গ, অসম এবং অন্যান্য রাজ্যেও তা শুরু হবে। এই অধিবেশনের প্রথম দিন থেকে বিরোধী সাংসদরা বার বার দাবি তুলছেন জরুরি আলোচনার। এই বিষয়টি কোটি কোটি ভোটারের কাছে সর্বোচ্চ উদ্বেগের, বিশেষ করে যাঁরা সমাজের দুর্বল শ্রেণি, তাঁদের কাছে। আমি রাজ্যসভার বিরোধী দলগুলির পক্ষ থেকে আপনাকে অনুরোধ জানাচ্ছি, এই নিয়ে অধিবেশনে আলোচনা করতে অনুমতি দেওয়ার জন্য। প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর কথায়, এটা ভীষণ সরল একটি বিষয়। আমরা তো শুধু আলোচনা করতে চাইছি। ওঁদের উচিত অনুমতি দেওয়া।’ তাৎপর্যপূর্ণভাবে, আম আদমি পার্টি ইন্ডিয়া ছেড়ে বেরিয়ে গেলেও এসআইআর প্রশ্নে এক মঞ্চেই রয়েছে। আজ বিজয় চকের সাংবাদিক সম্মেলনে আপ-এর সাংসদ সন্দীপ পাঠকও ছিলেন।
সকালের বৈঠকে তৃণমূল, আরজডি, ডিএমকে, এসপি একযোগে জানায় যে, এখন ভোটার তালিকা নিয়ে আন্দোলন উচ্চগ্রাম উঠে গিয়েছে। ১১ তারিখ পর্যন্ত লাগাতার এটাই চলুক। এর মাঝে অন্য কোনও বিষয় নিয়ে আলোচনা করলে আন্দোলন লঘু হয়ে যেতে পারে। সর্বসম্মতিক্রমে এই প্রস্তাব মান্যতা পেয়েছে। পাশাপাশি লোকসভার নেতারা স্পিকারের সঙ্গে দেখা করে জানান, জাতীয় ক্রীড়া প্রশাসন বিলটি নিয়ে তাঁদের আপত্তি রয়েছে। বলেন, এটি পরে আনা হোক এবং সংসদীয় কমিটিতে পাঠানোহোক খতিয়ে দেখার জন্য। স্পিকার সম্মতি দিয়েছেন, এই সপ্তাহে বিলটি আসছে না।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)