ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ গিয়েছে। আর নাম তোলার জন্য আর্জি জানাতে গেলে নতুন ভোটার হিসেবে আবেদন করতে বলা হচ্ছে। বিএলও বা বুথ স্তরের অফিসাররা গণনাপত্রে ‘নট রেকমেনডেড’ লিখে দিচ্ছেন। কেন? বিহারের ভোটার তালিকায় বিশেষ পরিমার্জন নিয়ে সমীক্ষা চালিয়ে বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ এই সব প্রশ্ন তুলেছে। আজ সুপ্রিম কোর্টে বিহারের ভোটার তালিকা মামলাতেও এই সব প্রশ্ন উঠেছে।
লোকসভায় কংগ্রেসের বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী আগেই সাংবাদিক বৈঠক করে কর্নাটকের একটি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটার তালিকায় ‘ভোট চুরি’-র অভিযোগ তুলেছিলেন। আজ রাহুল আঙুল তুলেছেন, বিহারের খসড়া ভোটার তালিকায় ১২৪ বছর বয়সি বলে নথিভুক্ত নতুন ভোটার মিন্তা দেবীর নামের দিকে। তাঁর যুক্তি, ‘‘এমন অনেক উদাহরণ সামনে আসছে। পিকচার আভি বাকি হ্যায়।’’ সূত্রের খবর, রাহুল শীঘ্রই দফায় দফায় ৪৮টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোটার তালিকায় অনিয়মের নমুনা প্রকাশ করবেন। তাঁরই নেতৃত্বে ১৭ অগস্ট থেকে ২৫টি জেলায় ‘বিহার ভোট অধিকার যাত্রা’ শুরু হচ্ছে। তার আগে ১৪ অগস্ট দেশ জুড়ে ‘গণতন্ত্র বাঁচাও’ মশাল মিছিল করবে কংগ্রেস। ২২ অগস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব রাজ্যে ‘ভোট চোর, গদি ছাড়ো’ স্লোগানেজনসভা হবে।
গত ১ অগস্ট বিশেষ ভোটার তালিকা পরিমার্জনের প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করে। তাতে দেখাযায়, বিহারের প্রায় ৭.৯ কোটি ভোটারের মধ্যে ৬৫ লক্ষের বেশিনাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে। এরপরে কংগ্রেস নেতা কানহাইয়া কুমারের উদ্যোগেবিহারের বেগুসরাই জেলাতে সমীক্ষা চালানো হয়।
কলকাতা থেকে অর্থনীতির গবেষক প্রসেনজিৎ বসু সেই সমীক্ষায় কাজ করেছিলেন। সমীক্ষায় দেখা যায়, বিহারের খসড়া ভোটার তালিকা থেকে এমন অনেক ভোটারের নাম বাদ গিয়েছে, যাঁদের নামে নতুন ভোটার কার্ড তৈরি হয়েছে। অথচ ভোটাররাই সে কথা জানেন না। খসড়াভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ গেলে কেউ তা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে, নিজেকে খাঁটি ভোটার দাবি করে নির্বাচন কমিশনের কাছে আর্জি জানাতে পারেন। সে ক্ষেত্রেনির্বাচন কমিশনের ফর্ম-৭ পূরণ করতে হয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তাঁদের নতুন ভোটার হিসেবে নাম তালিকাভুক্ত করার জন্য ফর্ম-৬ জমা করতে বলেছে বলে অভিযোগকরেছে ‘ইন্ডিয়া’।
এ ছাড়া, বিরোধী জোটের অভিযোগ, ভোটার তালিকা পরিমার্জনের সময় বহু গণনাপত্রে দেখা গিয়েছে, বিএলও বা বুথ স্তরের অফিসাররা ভোটারদের ফর্মে ‘নট রেকমেনডেড’ লিখে দিয়েছেন। কিন্তু তার কোনও কারণ দেখানো হয়নি। সোমবার ‘ইন্ডিয়া’র নেতারা বেগুসরাইয়ের জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচন আধিকারিকেরকাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। তাতে এই অভিযোগও তোলাহয়েছে, নির্বাচন কমিশন ৬৫লক্ষের নাম বাদ গিয়েছে বলে জানিয়েছে ঠিকই। কিন্তু সেই সব নামের তালিকা প্রকাশ করেনি। ফলে ভোটারদের পক্ষে তাঁদের অবস্থান জানা কঠিন হয়ে গিয়েছে। কংগ্রেস নেতা কানহাইয়া কুমার বলেন, ‘‘গণতন্ত্রের যে কণ্ঠ রোধ করা হচ্ছে, তা এখন স্পষ্ট।’’
আজ সুপ্রিম কোর্টে ভোটার তালিকা পরিমার্জনের বিরুদ্ধে মামলাকারী সংগঠন এডিআর-এর আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণপ্রশ্ন তুলেছেন, যাঁর নাম এত দিন ভোটার তালিকায় ছিল, তাঁকে কেন নতুন ভোটার হিসেবে নাম তুলতে হবে? কীসের ভিত্তিতে বিএলও-দের ‘নট রেকমেনডেড’ লেখার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে? তিনি বলেন, ‘‘যাঁদের নাম বাদ পড়েছে, সেই তালিকা রাজনৈতিক দলগুলিকে দেওয়া হয়েছে। কারও নাম বাদ পড়লে তাঁকে কেন তালিকা দেখতে দলের কাছে যেতে হবে?’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)