তাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককের পরে এ বার মায়ানমারের সামরিক জুন্টা সরকারের প্রধান জেনারেল মিন আং হ্লাইংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় আগামী ডিসেম্বরে মায়ানমারের সাধারণ নির্বাচনের প্রসঙ্গ এসেছে। মোদী জুন্টাপ্রধানের গণতন্ত্র ফেরানোর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে মায়ানমার সরকারের দাবি।
গত এপ্রিলে ব্যাঙ্ককে বিমস্টেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে এই পার্শ্ববৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অগ্রগতি নিয়ে দুই রাষ্ট্রনেতা আলোচনা করেছিলেন। সে সময় গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে শান্তি ফেরাতে ভারতের সাহায্য চেয়েছিলেন জেনারেল হ্লাইং। জবাবে পড়শি দেশে দ্রুত গণতন্ত্র ফেরানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলেন মোদী। এর পরে জুলাই মাসে সামরিক জুন্টা সরকার জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করে গণতান্ত্রিক কার্যকলাপের উপর বিধিনিষেধ তোলার কথা ঘোষণা করেছিল। পাশাপাশি, জেনারেল হ্লাইং জানিয়েছিলেন আগামী ২৮ ডিসেম্বর থেকে সে দেশে সাধারণ নির্বাচন হবে।
আরও পড়ুন:
জুন্টার এই ঘোষণাকে সশস্ত্র বিদ্রোহী জোটের ধারাবাহিক অগ্রগতি এবং গণতন্ত্রপন্থীদের চাপের মুখে পিছু হটার বার্তা বলেই মনে করছেন কূটনীতিবিদদের অনেকে। ২০২০ সালের নভেম্বরে ভারতের পড়শি দেশটিতে শেষ বার পার্লামেন্টের দুই কক্ষের (উচ্চকক্ষ ‘হাউস অফ ন্যাশনালিটিস’ এবং নিম্নকক্ষ ‘হাউস অফ রিপ্রেজ়েনটেটিভস’) নির্বাচন হয়েছিল। গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী আউং সান সু চি-র দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গড়েছিল। কিন্তু ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে এনএলডি সরকারকে উৎখাত করেছিল মায়ানমার সেনা। শুরু হয়েছিল চিনের ঘনিষ্ঠ সামরিক জুন্টার শাসন। এর পরে গত সাড়ে চার বছরে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন জনজাতি গোষ্ঠীকে ধারাবাহিক ভাবে নিশানা করেছে মায়ানমার সেনা।
কিন্তু গত নভেম্বর থেকে সে দেশের তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ গড়ে সামরিক জুন্টা সরকারের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। ওই অভিযানের পোশাকি নাম ছিল ‘অপারেশন ১০২৭’। যার পরিণামে সে দেশের বড় অংশই জুন্টার হাতছাড়া হয়েছে। ঘটনাচক্রে, বিদ্রোহীদের একাংশের পিছনেও চিনের গোপন মদতের অভিযোগ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কোণঠাসা হ্লাইং শেষ পর্যন্ত ভোটের দিন ঘোষণা করলেও শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা হস্তান্তর পর্ব মসৃণ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের। মায়ানমারের নির্বাচনে মোট ৫৫টি রাজনৈতিক দলকে নথিভুক্ত করা হয়েছে বলে সে দেশের নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রবিবার হ্লাইংয়ের সঙ্গে বৈঠকে মোদী আশা প্রকাশ করেছেন, অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনে সমস্ত রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করবে।