E-Paper

সমন্বয় বাড়িয়ে শরিকদের কাছে টানলেন রাহুল

‘ভোট চুরি’ স্লোগান তুলে ভোটার তালিকায় বিশেষ পরিমার্জনের বিরুদ্ধে বিরোধীদের ইন্ডিয়া মঞ্চ সংসদ ভবনের সামনে সাম্প্রতিক অতীতে সব থেকে বড় আকারে শক্তি প্রদর্শন করল।

প্রেমাংশু চৌধুরী ও অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২৫ ০৮:৫১
প্রতিবাদ কর্মসূচি চলাকালীন সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন আরামবাগের তৃণমূল সাংসদ মিতালি বাগ। তাঁর শুশ্রূষায় রাহুল গান্ধী, সায়নী ঘোষ।

প্রতিবাদ কর্মসূচি চলাকালীন সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন আরামবাগের তৃণমূল সাংসদ মিতালি বাগ। তাঁর শুশ্রূষায় রাহুল গান্ধী, সায়নী ঘোষ। ছবি: পিটিআই।

অখিলেশ যাদব পুলিশের ব্যারিকেড পেরিয়ে লাফ দিলেন। তৃণমূল কংগ্রেস ইন্ডিয়া মঞ্চ থেকে দলছুট আম আদমি পার্টির সঙ্গে সমন্বয়ের কাজ করল। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র, মিতালি বাগ অসুস্থ হয়ে পড়ায় রাহুল গান্ধী শুশ্রূষায় নেমে পড়লেন। সংসদ ভবন থেকে নির্বাচন কমিশন পর্যন্ত বিরোধী সাংসদদের মিছিলে কংগ্রেস নেতৃত্ব দিল ঠিকই। তবে নিজের হাতে রাশ রাখার চেষ্টা করল না। বরঞ্চ রাহুল গান্ধী প্রতিটি পদক্ষেপে ইন্ডিয়া-র শরিক অখিলেশ যাদব, ডেরেক ও’ব্রায়েনদের কাছে জানতে চাইলেন, এর পরের পরিকল্পনা কী? তাঁদের সিদ্ধান্ত কী? হাঁটতে না পারলেও প্রবীণ শরদ পওয়ার কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের সঙ্গে মিছিলে যোগ দিলেন।

‘ভোট চুরি’ স্লোগান তুলে ভোটার তালিকায় বিশেষ পরিমার্জনের বিরুদ্ধে আজ বিরোধীদের ইন্ডিয়া মঞ্চ সংসদ ভবনের সামনে সাম্প্রতিক অতীতে সব থেকে বড় আকারে শক্তি প্রদর্শন করল। প্রমাণ মিলল, নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকায় বিশেষ পরিমার্জন এবং নির্বাচন কমিশন-বিজেপির বিরুদ্ধে ভোটার তালিকায় কারচুপির অভিযোগ ইন্ডিয়া মঞ্চকে ফের এককাট্টা করে দিয়েছে। কিছু দিন আগেও যে ইন্ডিয়া-র নেতারা বলতে শুরু করেছিলেন, ওই মঞ্চ শুধু গত লোকসভা নির্বাচনের জন্যই ছিল।

ভোটার তালিকায় বিশেষ পরিমার্জনের বিরুদ্ধে বিরোধী শিবিরের প্রায় তিনশো সাংসদ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় সংসদ ভবনের মকর দ্বার থেকে মিছিল শুরু করেছিলেন। তার আগেই বিরোধীদের হট্টগোলের জেরে লোকসভা, রাজ্যসভা মুলতুবি হয়ে যায়। নির্বাচন কমিশন মাত্র ৩০ জন সাংসদের সঙ্গে দেখা করবে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু বিরোধীরা সবাই মিলে নির্বাচন কমিশনের দিকে এগোতে থাকেন। হাতে ছিল বাংলায় লেখা ‘চুপি চুপি ভোটের কারচুপি’ থেকে হিন্দি, মরাঠি-সহ নানা ভাষায় প্ল্যাকার্ড। সংসদ চত্বর থেকে বেরিয়ে সংসদ মার্গ ধরে পরিবহণ ভবন পেরিয়ে নির্বাচন কমিশনের দিকে এগোতেই পুলিশের লোহার ব্যারিকেড মিছিলের পথ আটকায়। সঙ্গে ছিল দিল্লি পুলিশ, আধাসেনা, র‌্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সের বিশাল বাহিনী। প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা, সায়নী ঘোষ, কানিমোঝিরা রাস্তাতেই বসে পড়েন। হাততালি দিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান ওঠে— ‘ভোট চোর, গদি ছোড়’।

প্রথমে সুস্মিতা দেব, মহুয়া মৈত্র, জ্যোতিমণিরা ব্যারিকেড টপকানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পারেননি। পুলিশকে চমকে দিয়ে বাহান্ন বছরের অখিলেশ যাদব সমাজবাদী পার্টির সাংসদদের নিয়ে ব্যারিকেড টপকে লাফ দেন। তাঁরাও ব্যারিকেডের উল্টো দিকে রাস্তায় বসে পড়েন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন। ডেরেক পুলিশের সঙ্গে কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশ জানিয়ে দেয়, নির্বাচন কমিশন ৩০ জনের সঙ্গে দেখা করবে বলেছে। ৩০০ জন সাংসদ যেতে পারবেন না। মিছিলেরও কোনও অনুমতি নেই। পৌনে একটা নাগাদ পুলিশ পাঁচ-ছয়টি বাসে চাপিয়ে সাংসদদের আটক করে সংসদ মার্গ থানায় নিয়ে যায়। রাহুল গান্ধী বলেন, ‘‘দেশে গণতন্ত্রের অবস্থা দেখুন। তিনশো সাংসদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন দেখা করতে চাইছে না। কারণ কমিশন সত্যকে ভয় পাচ্ছে। এটা এখন রাজনৈতিক লড়াই। দেশের আত্মা, সংবিধানকে বাঁচানোর লড়াই। নির্বাচন কমিশনের এখন লুকোনো মুশকিল।’’

পুলিশ আটক করার পরে থানার মধ্যেই বিরোধী সাংসদদের পরবর্তী রণকৌশল নিয়ে বৈঠক বসে। ঠিক হয়, বিরোধীরা সংসদে ফিরে গিয়ে প্রতিবাদ করবেন। থানার ওসি-কে চিঠি লিখে জানানো হয়, সাংসদদের বেআইনি ভাবে আটক করে রাখা হয়েছে। পুলিশ চাপের মুখে সকলের নাম-ধাম লিখে সাংসদদের ছেড়ে দেয়। রাজ্যসভায় ফিরে খড়্গে অভিযোগ তোলেন, বিরোধীরা নির্বাচন কমিশনে গিয়ে ভোটার তালিকায় সংশোধন ও কারচুপির স্মারকলিপি দিতে চাইলেও তাঁদের বাধা দেওয়া হয়েছে।

বিরোধী জোটের আজকের মসৃণ সমন্বয়ের কথা উল্লেখ করে তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “বিরোধীদের কর্মসূচিতে কারও কোনও ‘ইগো’ ছিল না। খুব ভাল সমন্বয় হয়েছে। আগে থেকেই পুরো পরিকল্পনা তৈরি ছিল। এ বার পটনায় ভোটার তালিকা সংশোধনের বিরুদ্ধে ১ সেপ্টেম্বর ফের বিরোধীদের শক্তি প্রদর্শন হবে।” সোমবারের মিছিলের পরে রাতে কংগ্রেস সভাপতি খড়্গে বিরোধী সাংসদদের নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। মঙ্গলবার ফের সংসদে প্রতিবাদ জানাবেন বিরোধীরা।

তৃণমূল আজ দাবি তুলেছে, লোকসভা ভোট, তার পরে মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানায় ভোটার তালিকায় কারচুপির জন্য প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে এফআইআর করতে হবে। বিরোধীদের হাতে ডিজিটাল ভোটার তালিকা দিতে হবে। কোনও রাজ্যে ভোটার তালিকায় বিশেষ পরিমার্জন করা যাবে না। তালিকায় গন্ডগোল থাকলে আগে মোদী সরকারকে ইস্তফা দিতে হবে। কোনও রাজনৈতিক দল বুথ স্তরের এজেন্টদের তালিকা কমিশনকে দেবে না। রাহুল গান্ধী ভোটার তালিকায় ভুয়ো ভোটারের অভিযোগ তোলায় নির্বাচন কমিশন তাঁকে শপথ নিয়ে অভিযোগ জমা দিতে বলেছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আজ রাহুল বলেছেন, “আমি তো নির্বাচন কমিশনের তথ্যই উদ্ধৃত করেছি। তা নিয়ে শপথ করতে হবে কেন? নির্বাচন কমিশন নিজের ওয়েবসাইট থেকেই যাচাই করতে পারে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Special Intensive Revision INDIA Alliance TMC Congress Rahul Gandhi Monsoon Session of Parliament

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy