Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
India-China Clash

গত তিন বছরে ভারত সীমান্তে দ্বিগুণ শক্তি বাড়িয়েছে চিন, বলছে রিপোর্ট

শুধু লাদাখ বা ভারতের পূর্ব দিকেই নয়, দক্ষিণ চিন সাগর এবং ভারত মহাসাগরেও চিন একই ভাবে আধিপত্য কায়েমের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৬:২৫
Share: Save:

লাদাখে চিনা বাহিনীর আগ্রাসন আসলে দীর্ঘ পরিকল্পনার ফসল। ডোকলামে সংঘাতের পর ভারতের সঙ্গে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) বরাবর এলাকাগুলি নিজেদের কব্জার মধ্যে নিয়ে আসাই লক্ষ্য ছিল ড্রাগনদের। তাই লাদাখ-সহ ভারতের পূর্ব দিকে এলএসি বরাবর সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে মনোনিবেশ করে চিন। তার পর থেকে গত তিন বছরে সেখানে নিজেদের শক্তি তিন গুণ বাড়িয়ে নিতে সফল হয়েছে তারা। ভূ-রাজনৈতিক সংক্রান্ত মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহকারী সংস্থা স্ট্র্যাটফরের একটি রিপোর্টে এমনটাই দাবি করা হয়েছে।

চলতি বছরের গোড়া থেকেই চিনের সম্প্রসারণ নীতি ঠেকিয়ে আসার চেষ্টা করছে ভারত। তা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েক বার সংঘর্ষও বেধেছে। লাদাখে স্থিতাবস্থা টিকিয়ে রাখতে এই মুহূর্তে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় আসতে চাইছে দুই দেশ। তার মধ্যেই এলএসি বরাবর চিনের শক্তি বৃদ্ধি নিয়ে মার্কিন সংস্থার রিপোর্ট দিল্লির মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

১৯৯৯ সালে কসোভের উপর ন্যাটো-র বিমানহানা নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করে প্রথম আন্তর্জাতিক মহলে খবরের শিরোনামে উঠে আসে স্ট্র্যাটফর। পরবর্তী কালে আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ কৌশল নিয়েও রিপোর্ট প্রকাশ করে তারা। স্যাটেলাইট ফুটেজ দেখে এলএসি বরাবর চিনা বাহিনীর সামরিক নির্মাণ ও পরিকাঠামোর অবস্থান পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বিশ্লেষণ করে এ বার নয়া প্রকাশ করেছে স্ট্র্যাটফর। তাতেই ডোকলাম এবং লাদাখ সংঘাতের পরের পরিস্থিতির মধ্যে বিস্তর ফারাক ধরা পড়েছে, যা ভারতের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত দুশ্চিন্তাজনক হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা কূটনীতি বিশেষজ্ঞদের।

আরও পড়ুন: হলিউড ছবির ক্লিপিংস চুরি করে ‘শক্তি জাহির’ চিনের​

ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, এলএসি বরাবর সংলগ্ন এলাকায় কমপক্ষে ১৩টি নতুন সামরিক অবস্থান গড়ে তুলতে শুরু করেছে চিন। তার মধ্যে তিনটি বায়ুসেনা ঘাঁটি, পাঁচটি স্থায়ী আকাশসীমা প্রতিরক্ষা কেন্দ্র এবং পাঁচটি হেলিপোর্ট রয়েছে। লাদাখ সংঘাতের পরই হেলিপোর্টগুলি তৈরির কাজ শুরু হয় বলে দাবি করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। এ ছাড়াও রেডিয়ো সিগন্যাল, র‍্যাডার এবং উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে শত্রুপক্ষের অবস্থান নির্ধারণ করার জন্য রয়েছে ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার স্টেশন।

এ নিয়ে একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেন স্ট্র্যাটফরে কর্মরত আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতি বিশেষজ্ঞ সিম ট্যাক। তিনি নিজে ওই রিপোর্টটি লিখেছেন। তিনি বলেন, ‘‘লাদাখে সংঘাত দানা বাঁধার আগে থেকে যে ভাবে ওই সংলগ্ন এলাকায় সামরিক শক্তি বাড়াতে শুরু করে চিন, তাতেই বোঝা যায় এই এর পিছনে বড় ধরনের কোনও মতলব রয়েছে। আসলে এলএসি সংলগ্ন সংলগ্ন অঞ্চলগুলিকে নিজেদের কব্জায় আনতে চায় ওরা।’’

তবে এলএসি-তে দুর্ভেদ্য সামরিক পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজ এখনও পর্যন্ত চিন সম্পূর্ণ করে উঠতে পারেনি বলেও দাবি করেন সিম। তিনি বলেন, ‘‘অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই সম্প্রসারণ এবং সামরিক পরিকাঠামো নির্মাণের কাজ এখনও মাঝপথে। এই মুহূ্র্তে চিনা বাহিনীর যে গতিবিধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তা একটা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার সূত্রপাত মাত্র।’’ লাদাখে দু’পক্ষের মধ্যে সাম্প্রতিক যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, তা সেই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার প্রস্তুতিপর্ব। সামরিক পরিকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন হলে ভবিষ্যতে চিনা বাহিনী বাড়তি সুবিধা পাবে বলেও দাবি করেন তিনি।

আরও পড়ুন: ‘কোভিড বায়ুবাহিত নয়’, সিডিসি অবস্থান বদলানোয় ক্ষোভ বিজ্ঞানীমহলে​

তবে শুধু লাদাখ বা ভারতের পূর্ব দিকেই নয়, দক্ষিণ চিন সাগর এবং ভারত মহাসাগরেও চিন একই ভাবে আধিপত্য কায়েমের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেখানে একটি প্রবাল দ্বীপ সংলগ্ন এলাকাকে নৌ-ঘাঁটি হিসেবে গড়ে তোলাই লক্ষ্য তাদের। এর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলি, যার মধ্যে অন্যতম হল ভারত। এ বছর মে মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একজোট হয়ে ভারত জানিয়ে দেয়, দক্ষিণ চিন সাগরে কারও একার আধিপত্য স্বীকার করা হবে না। ওই এলাকায় শান্তি এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখাই ভারতের প্রধান লক্ষ্য।

ভারতের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সৌহার্দ্য এমনিতেই চক্ষুশূল চিনের। তার উপর দক্ষিণ চিন সাগরে আধিপত্য কায়েম করার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ানোয়, ভারতের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি প্রদর্শনে তারা জোর দিচ্ছে এবং যেন তেন প্রকারেণ ভারতকে প্রতিহত করার চেষ্টা করছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। তার জন্য এলএসি সংলগ্ন এলাকায় আগে থেকে যে বিমানঘাঁটিগুলি ছিল, সেখানেও অতিরিক্ত রানওয়ে নির্মাণ থেকে শুরু করে, যুদ্ধবিমান রাখার বাড়তি জায়গা তৈরি করতে শুরু করে দিয়েছে তারা।

এর আগে, গত মে মাসে প্যাংগং হ্রদ থেকে মাত্র ২০০ কিলোমিটার দূরে তিব্বতের নারি-গুনসাতেও চিনাবাহিনী বিমান ঘাঁটি নির্মাণ করছে বলে তথ্য সামনে আসে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত স্যাটেলাইট ইমেজে দেখা যায়, সেখানে বৃহদাকার সামরিক নির্মাণকার্য চলছে, যাতে জে-১১, জে-১৬ এবং সুখোই-৩০-র মতো যুদ্ধবিমান মোতায়েন করতে পারে তারা। গত কয়েক মাসে সেই কাজ আরও এগিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE