বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়ে ফের নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল ভারত। হাসিনার প্রত্যর্পণের অনুরোধ প্রসঙ্গে ভারত এবং বাংলাদেশের সরকারের মধ্যে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। সোমবার এমনটাই জানিয়েছে ভারত সরকার। এটির সঙ্গে যে বিচার বিভাগীয় এবং আইনি প্রক্রিয়া জড়িত রয়েছে, তা-ও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে নয়াদিল্লি।
মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার হাসিনার প্রত্যর্পণের জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ করেছে। সে বিষয়ে ভারতের অবস্থান নিয়ে সোমবার এক প্রশ্নের উত্তরে ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী জানান, এটির সঙ্গে আইনি বিষয় জড়িয়ে আছে। উভয় দেশের মধ্যে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তিনি বলেন, “আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি যে, এটি একটি বিচার বিভাগীয় এবং আইনি প্রক্রিয়া। এর জন্য দু’দেশের সরকারের মধ্যে আলোচনা এবং পরামর্শের প্রয়োজন রয়েছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি এবং এই বিষয়গুলি নিয়ে আমরা বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও একসঙ্গে কাজ করার জন্য তৈরি। এই মুহূর্তে এর বাইরে আর কোনও মন্তব্য করা গঠনমূলক বলে আমি মনে করি না।”
সোমবার দিল্লিতে বাংলাদেশ থেকে আসা সাংবাদিকদের এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দেখা করেন মিস্রী। তাঁদের সঙ্গে আলাপচারিতার সময়েই হাসিনার প্রসঙ্গ উঠে আসে। এ ছাড়া বাংলাদেশ এবং ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের বিভিন্ন আঙ্গিক নিয়েও আলোচনা হয়। আগামী বছরেই বাংলাদেশে নির্বাচন রয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে ভোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সে দেশে। তা নিয়েও সোমবার নয়াদিল্লির অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন মিস্রী। তিনি জানান, সাধারণ মানুষের দ্বারা নির্বাচিত বাংলাদেশের যে কোনও সরকারের সঙ্গেই কাজ করার জন্য ভারত প্রস্তুত।
আরও পড়ুন:
ভারতের বিদেশসচিব এ-ও জানান, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে নয়াদিল্লি। সেই নির্বাচনে যাতে সকলে অংশগ্রহণ করতে পারেন। মিস্রী জানান, ভারত চায় যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশে এই নির্বাচন আয়োজন করা হোক। তিনি বলেন, “বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ (অন্তর্বর্তী সরকার) যে নিজে থেকেই এই নির্বাচনের একটি সময়সীমার কথা বলেছেন, তা আমাদের ভাল লেগেছে। এই নির্বাচন আয়োজিত হওয়ার জন্য আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করব।”
বস্তুত, বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের জেরে গত বছরের অগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হন সে দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। পতন হয় তাঁর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের সরকারের। গত বছরের ৫ অগস্ট বাংলাদেশ ছাড়েন হাসিনা এবং সাময়িক ভাবে আশ্রয় নেন ভারতে। তার পর থেকেই ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে এক কূটনৈতিক চাপানউতর সৃষ্টি হয়েছে। প্রভাব পড়েছে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যেও। যদিও এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে মিস্রী স্পষ্ট করে দেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কিছু সিদ্ধান্তের কারণেই বাণিজ্যে এই প্রভাব পড়েছে। তবে বিদেশসচিব জানিয়েছেন, গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তি এবং তিস্তা চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য প্রস্তুত ভারত।
মঙ্গলবারই বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘বিবিসি বাংলা’য় বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। সেখানে হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেওয়া এবং ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের শীতলতার বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় তাঁকে। ওই প্রশ্নের উত্তরে তারেক বলেন, “এখন তারা যদি স্বৈরাচারকে সেখানে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের বিরাগভাজন হয়, সেখানে তো আমাদের কিছু করার নেই। এটা বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তাদের সাথে শীতল থাকবে। আমাকে আমার দেশের মানুষের সাথে থাকতে হবে।”