ভারত মাতিয়ে দেওয়ার দু’বছর পরে চিনে পাড়ি দিয়েছিল র্যাঞ্চো, ফারহান ও রাজু রাস্তোগি। তার পরেও মাও জে দংয়ের দেশ মাতিয়ে দিয়েছিল তিন বন্ধু। তিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়ার সমস্যা দেখে চিনের ছেলেমেয়েদের মনে হয়েছিল, আরে, এতো আমাদেরও সমস্যা। দু’সপ্তাহে ১৯ লক্ষ ডলারের ব্যবসা করেছিল ‘থ্রি ইডিয়টস’।
বৃহস্পতিবার থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর চিন সফর শুরু হচ্ছে। সে দিনই চিনে মুক্তি পাচ্ছে ‘পিকে’। আমির খান নিজেও থাকবেন সেখানে। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রক চাইছে, দু’একটা থ্রি ইডিয়টস, পিকে নয়, আরও ভারতীয় সিনেমার জন্য দরজা খুলে দিক চিন।
মোদীর সফরেও চিনের কাছে সেই দাবি জানানো হবে। দু’দেশের মধ্যে বিপুল পরিমাণ বাণিজ্যিক ঘাটতি কমিয়ে আনার ক্ষেত্রেও সলমন-আমির-শাহরুখ অন্যতম বাজি হতে পারে বলে ভারতীয় শিল্পমহলের মত। চিনে বলিউডি তারকাদের জনপ্রিয়তার নতুন প্রমাণও পাওয়া গিয়েছে সম্প্রতি। গাড়ি চাপা দিয়ে অনিচ্ছাকৃত হত্যার মামলায় সলমন খানের জামিনের খবর প্রকাশিত হয়েছিল চিনা সংবাদমাধ্যমে।
কিন্তু বলিউডের চিনযাত্রায় বাধা সে দেশেরই গোঁড়ামি। বছরে মাত্র ৩৪টি বিদেশি সিনেমা চিনে ঢোকার অনুমতি পায়। বলা বাহুল্য, হলিউডই তার সিংহভাগ দখল করে ফেলে। তার পরেও রয়েছে চিনের হাজারো নিয়ম এবং কড়া সেন্সর। চিনের প্রাচীরের মতো সেই আইনি কড়াকড়ি পেরনো সম্ভব হয় না বলিউডের পক্ষে।
শুধু সিনেমা-বিনোদন নয়, তথ্যপ্রযুক্তি, ওষুধ বা অটোমোবাইল — সব ক্ষেত্রেই চিনা বাধানিষেধের জেরে ভারতের সংস্থাগুলি চিনের বাজারে ঢুকতে পারছে না বলেই মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রক।
এ দিকে চিনের পণ্যে ছেয়ে যাচ্ছে এ দেশের বাজার। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে বাণিজ্যিক ঘাটতি। চিন এ দেশে যত রফতানি করছে আর ভারত চিনে যত রফতানি করছে, তার মধ্যে শেষ অর্থ বছরে ফারাক ছিল ৪৮০০ কোটি ডলার। এক বছর আগে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩৫০০ কোটি ডলার।
বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর বলেন, ‘‘চিনের সঙ্গে বাণিজ্যিক ঘাটতির দু’টি দিক রয়েছে। এক, আমদানি-রফতানি। দুই, বিনিয়োগ। শুধু বিনিয়োগে ঘাটতি মিটবে না। ওরা অনেক বেশি রফতানি করে। ওষুধ ও তথ্যপ্রষুক্তিতে ভারত গোটা বিশ্বে ছাপ ফেলেছে। কিন্তু আক্ষেপের বিষয় হল, চিনের বাজারে আমাদের ঢুকতে দেওয়া হয় না।’’ শিল্পমহলের অভিযোগ, এ দেশের নামজাদা তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলিও চিনের সরকারি দফতরে কল্কে পায় না।
নরেন্দ্র মোদীর চিন সফরের অন্যতম লক্ষ্যই হবে, বাণিজ্যিক ঘাটতি কমিয়ে আনার রাস্তা খোঁজা। মোদীর প্রতিনিধি দলে এ জন্য দেশের প্রথম সারির শিল্পপতিরাও থাকবেন।
সেই প্রতিনিধি দলের সদস্য, সিআইআই-এর সভাপতি সুমিত মজুমদার বলেন, ‘‘মূলত চারটি ক্ষেত্রের জন্য চিনের বাজার আরও খুলে দেওয়া দরকার। ওষুধ, তথ্যপ্রযুক্তি, গাড়ির যন্ত্রাংশ এবং সিনেমা-বিনোদন।’’
কূটনীতিকরা মনে করছেন, বাণিজ্যিক ঘাটতি মেটাতে বলিউড এ ক্ষেত্রে তুরুপের তাস হতে পারে। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘শাহরুখ খান ওদেরও ডিএনএ-তে ঢুকে গিয়েছে। আদালতে সলমন খানের জামিনের খবর চিনা সংবাদপত্রে ফলাও করে ছাপা হচ্ছে। ভারতীয় সিনেমা যত জনপ্রিয় হবে, চিনের মননে ভারত সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণাও কমবে। বলিউড মানে ভারতীয় পণ্যেরও প্রচার। ফলে সেই বাজারও বাড়বে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy