ডোকলাম সঙ্কটের পর ছ’মাসও কাটেনি। ফের সীমান্ত লঙ্ঘন করে রাস্তা তৈরির চেষ্টায় চিন। তা নিয়ে অরুণাচল সীমান্তে বাড়ল উত্তেজনা। —প্রতীকী ছবি।
ফের সীমান্ত লঙ্ঘন করল চিন। এ বারও রাস্তা বানানোর অছিলায়।
ভারত-ভুটান-চিন সীমান্তের ডোকলামকে কেন্দ্র করে যে সঙ্কট ঘনিয়েছিল, তা নিরসনের পরে ছ’মাসও কাটেনি। এর মধ্যেই ফের সীমান্তবর্তী এলাকায় রাস্তা তৈরিকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তৈরি হল। অরুণাচল প্রদেশে লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) পেরিয়ে ভারতীয় এলাকায় ঢুকে পড়ল চিনের রোড কনস্ট্রাকশন পার্টি। ভারত অবশ্য এ বারও আটকে দিয়েছে রাস্তা তৈরির কাজ। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে চিনের নির্মাণ সরঞ্জামও।
ভারত-তিব্বত সীমান্তের যে এলাকায় চিন সীমান্ত লঙ্ঘন করেছে, সেখানে পাহারার দায়িত্বে ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশ (আইটিবিপি)। চিনা কনস্ট্রাকশন পার্টি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতীয় অংশে ঢুকেছে এবং রাস্তা তৈরির কাজ করছে— এই খবর পাওয়ার পর সেনা এবং আইটিবিপি-র যৌথ বাহিনী পৌঁছয় ওই এলাকায়। রাস্তা তৈরির কাজ থামিয়ে দিয়ে চিনা নির্মাণ কর্মীদের ফেরত পাঠায় ভারতীয় বাহিনী।
স্থানীয় সূত্রকে উদ্ধৃত করে ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ জানিয়েছে, গত ২৬ ডিসেম্বর চিনা রোড কনস্ট্রাকশন পার্টি এলএসি পেরিয়ে ভারতীয় এলাকায় ঢুকে পড়ে। টুটিং এলাকার বিশিং-এর কাছে তারা সীমান্ত লঙ্ঘন করে। বিশিং-এর কাছেই ব্রহ্মপুত্র নদ (স্থানীয় নাম সিয়াং) তিব্বত থেকে অরুণাচল প্রদেশে ঢুকেছে। এলএসি পেরিয়ে চিনারা ভারতীয় এলাকায় ঢুকেছিল ঠিকই, তবে ব্রহ্মপুত্র পেরনোর চেষ্টা তারা করেনি।
গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ।
যে এলাকায় সীমান্ত লঙ্ঘন করে চিন রাস্তা তৈরির চেষ্টা করছিল, সেখানে এর আগে কখনও চিনা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেনি বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। প্রায় ১২ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত ওই এলাকায় শীতের মরসুমে রাস্তা তৈরির চেষ্টা করাও বেশ অস্বাভাবিক, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন: ‘বদলা’ নিল ক্ষিপ্ত বিএসএফ, পাক রেঞ্জার্সের অন্তত ১২ জওয়ান হত
যে এলাকা দিয়ে ভারতে ঢুকেছিল চিনা রোড কনস্ট্রাকশন পার্টি, সেখান থেকে নিকটবর্তী আইটিবিপি পোস্টের দূরত্ব ২ কিলোমিটার। স্থানীয় বাসিন্দারাই আইটিবিপি-র কাছে খবর পৌঁছে দেন। গত ২৮ ডিসেম্বর ভারতীয় সেনা এবং আইটিবিপি-র যৌথ দল ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বলে খবর। চিনা রোড কনস্ট্রাকশন পার্টিকে কাজ বন্ধ করে নিজেদের এলাকায় ফিরে যেতে বলে ভারতীয় বাহিনী। দু’টি জেসিবি এবং অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে ভারতীয় এলাকায় ঢুকেছিল চিনারা। সে সব বাজেয়াপ্ত করা হয়। টিউব থেকে হাওয়া বার করে দেওয়া হয়, জেসিবি-র চেন খুলে নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: ভারত ভয় দেখিয়েছে মা-স্ত্রীকে, যাদবকে দিয়ে বলাল পাকিস্তান
২০১৭-র জুন থেকে অগস্টের প্রায় শেষ পর্যন্ত ভারত-ভুটান-চিন সীমান্তের ডোকলামে বেনজির সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছিল নয়াদিল্লি ও বেজিং। ভুটানের এলাকায় ঢুকে চিন রাস্তা তৈরি করার চেষ্টা করায় বাহিনী পাঠিয়ে বাধা দিয়েছিল ভারত। তার জেরে ডোকলামে ৭৩ দিন পরস্পরের মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছিল দু’দেশের সশস্ত্র বাহিনী। প্রবল স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত কূটনৈতিক চ্যানেলেই সে সঙ্কটের সমাধান হয়। কিন্তু সীমান্তবর্তী অঞ্চলে আগ্রাসন দেখানোর চেষ্টা করলে পরিস্থিতি কতটা জটিল হয়ে উঠতে পারে, ডোকলাম পরিস্থিতি থেকে তা বেশ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তার পরেও অরুণাচল প্রদেশে কেন সীমান্ত লঙ্ঘন করল চিন, ভারতীয় এলাকায় ঢুকে রাস্তা তৈরির চেষ্টা করে কী বার্তা দিতে চাইল, তা নিয়ে কূটনীতিক এবং প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও ধোঁয়াশা রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy