সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতার আন্তর্জাতিক সূচকে আরও অবনতি হল ভারতের। আজ, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা দিবসে ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’ সংগঠনের তরফে প্রকাশিত ২০২২ সালের রিপোর্ট ও সূচক অনুযায়ী, এখন ১৫০তম স্থানে রয়েছে ভারত। ২০২১ সালের সূচকে ভারতের স্থান হয়েছিল ১৪২তম স্থানে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৪ সাল থেকে ভারত শাসন করছেন দক্ষিণপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রতীক নরেন্দ্র মোদী। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হিংসা ও রাজনৈতিক ভাবে একপেশে সংবাদমাধ্যমের উপস্থিতি বুঝিয়ে দিচ্ছে ভারতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কোভিড সঙ্কটের মোকাবিলা করার অছিলায় মোদী সরকার ও তাদের সমর্থকেরা সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে প্রায় ‘গেরিলা যুদ্ধে’ নেমেছিল বলে দাবি ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’-এর। তাদের দাবি, কোভিড নিয়ে সরকারি বিবৃতির সঙ্গে যে সব সংবাদমাধ্যমের বক্তব্য মেলেনি তাদেরই বিরুদ্ধে মামলা করেছে সরকার ও তাদের সমর্থকেরা।
ওই সংগঠনের মতে, স্বাধীনতা সংগ্রামের ফসল ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। এক সময়ে এই সংবাদমাধ্যমকে প্রগতিশীল বলেই মনে করা হত। কিন্তু মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই চিত্র বদলে যায়। ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’-এর মতে মোদী মনে করেন সাংবাদিকেরা ‘মধ্যস্থ’ হিসেবে তাঁর ও সমর্থকদের মধ্যে সম্পর্ককে ‘কলুষিত’ করেন। রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতীয় আইন তত্ত্বগত ভাবে সাংবাদিকদের রক্ষা করার পক্ষে। কিন্তু রাষ্ট্রদ্রোহ, মানহানি, আদালত অবমাননা ও জাতীয় সুরক্ষার ক্ষতি করার অভিযোগ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। সরকারের সমালোচনা করলে সাংবাদিকদের দেওয়া হচ্ছে ‘দেশদ্রোহী’ তকমা। বর্তমানে ১৩ জন সাংবাদিক জেলে রয়েছেন। বস্তুত উত্তরপ্রদেশের হাথরসে ধর্ষণ-খুনের খবর করতে গিয়ে জেলবন্দি রয়েছেন সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান।
মধ্যপ্রদেশে সম্প্রতি থানায় সাংবাদিককে বিবস্ত্র করার ঘটনা সামনে এসেছে। উত্তরপ্রদেশে প্রশ্ন ফাঁসের মামলায় সম্প্রতি জামিন পেয়েছেন তিন সাংবাদিক। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ দিতে পারেনি পুলিশ। ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’-এর রিপোর্টে জানানো হয়েছে, চলতি বছরে কাজ করতে গিয়ে বিস্ফোরণে ওড়িশায় এক সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে। ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’-এর মতে, ‘‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভয়াবহ প্রচার চালানো হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে খুনের হুমকি। মহিলা সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক। ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করে দেওয়া হচ্ছে। কাশ্মীরে সাংবাদিকদের ক্রমাগত হেনস্থা করছে পুলিশ ও আধাসেনা। অনেকে বছরের পর বছর বন্দি রয়েছেন।’’
আজ এই রিপোর্ট নিয়ে একটি যুগ্ম বিবৃতি দিয়েছে প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান উইমেন প্রেস কোর ও প্রেস অ্যাসোসিয়েশন। তাদের দাবি, ভারতে যে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বিপন্ন হচ্ছে সে কথা ওই রিপোর্টে ফুটে উঠেছে।