E-Paper

‘এপ্রিল ফুল’ নয়, ২ তারিখ থেকে চড়া বৃদ্ধি শুল্কহারে

দ্বিতীয় বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে এই প্রথম আমেরিকান কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে বক্তৃতা দিলেন ট্রাম্প।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৫ ০৮:৩২
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে শুল্ক আঘাত যে আসতে চলেছে, এমন আশঙ্কা ছিলই সাউথ ব্লকের। আর তার প্রকোপ কমানোর জন্য তড়িঘড়ি বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালকে ওয়াশিংটন পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তাতে কাজ হল না!

আজ সকালে (ভারতীয় সময়) আমেরিকার কংগ্রেসে যৌথ অধিবেশনে বক্তৃতা দেওয়ার সময়ে সে দেশের প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, ভারতের চড়া শুল্কের জবাবে আমেরিকাও পাল্টা চড়া শুল্ক চাপাবে ভারতের উপর। কবে থেকে আমেরিকায় ভারতীয় পণ্যের উপর পাল্টা শুল্ক চাপানো হবে, সেই তারিখও জানিয়ে দিলেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট। ভারত ছাড়াও চিন, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা, মেক্সিকোর মতো দেশগুলির উপর পাল্টা শুল্ক চাপানোর কথা বললেন তিনি। সেই চড়া শুল্কের সূত্র হল, যে দেশ আমেরিকার উপর যত কর চাপিয়েছে, তার বিরুদ্ধেও ততটাই কর চাপাবে ওয়াশিংটন। স্বাভাবিক ভাবেই ত্রাসের সঞ্চার হয়েছে ভারতীয় উৎপাদন শিল্পক্ষেত্রে। ওয়াকিবহাল শিবির বলছে, আমেরিকার পাল্টা চড়া শুল্ক চাপানোর ফলে বছরে আনুমানিক ৭০০ কোটি ডলারের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে ভারতীয় রফতানি ক্ষেত্রের।

দ্বিতীয় বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে এই প্রথম আমেরিকান কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে বক্তৃতা দিলেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দেশ আমাদের উপর শুল্ক চাপিয়ে আসছে, এ বার আমাদের পালা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চিন, ব্রাজ়িল, ভারত এবং আরও অসংখ্য দেশ আমাদের উপর যত বেশি শুল্ক আরোপ করে, আমরাও তত শুল্ক আরোপ করব।’’ তার পরেই ট্রাম্প আলাদা করে ভারতের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘‘ভারত আমেরিকা থেকে রফতানি করা গাড়ির উপর ১০০ শতাংশেরও বেশি শুল্ক বসায়। এই ব্যবস্থা আমেরিকার প্রতি ন্যায্য নয়, কখনওই ছিল না।’’ ট্রাম্পের ঘোষণা, ‘‘আমরা ২ এপ্রিল থেকে নতুন শুল্ক বসাব। আমি চেয়েছিলাম ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর করতে। কিন্তু অনেকে ভাবতে পারেন, আমি এপ্রিল ফুল করছি। তাই ২ এপ্রিল থেকে পারস্পরিক শুল্ক চালু করব।’’

আমেরিকার বন্ধু দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার কথা পৃথক ভাবে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেছেন, তারা সাধারণ ভাবে চারগুণ বেশি শুল্ক বসায়। অথচ দক্ষিণ কোরিয়াকে সামরিক ভাবে তো বটেই অন্য
নানা ভাবেও সহায়তা করে
থাকে আমেরিকা।

ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর ময়দানে নেমেছে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতে বলেন “প্রশ্ন এই যে, মোদী আমেরিকা সফর থেকে ফিরে আসার পর তাঁকে বিজেপি তাঁকে পরাক্রমশালী হিসেবে তুলে ধরল। ভিডিয়ো পোস্ট করে মোদী নিজেই দেখাচ্ছেন যে তিনি সিংহের সঙ্গে খেলা করছেন। এখন তিনি আমেরিকা থেকে কী নিয়ে এলেন? ট্রাম্প তো এখন শুধু হুঁশিয়ারিতেই আটকে নেই। তিনি ঘোষণাই করে দিয়েছেন ২ এপ্রিল থেকে চড়া শুল্ক ধার্য করার।” কংগ্রেসের প্রশ্ন, মোদী যে দৌত্য করতে গয়ালকে আমেরিকায় পাঠাল, তিনি কী করছেন?

মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, বাণিজ্যমন্ত্রী সে দেশের বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রির এবং বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিকের সঙ্গে দেখা করবেন। মন্ত্রকের বক্তব্য, মোদীর আমেরিকা সফরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে যে প্রাথমিক কথা হয়েছে তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ রয়েছে গয়ালের উপর। ভারত মনে করছে, যে কারণে আমেরিকা হুঁশিয়ারি দিচ্ছে তার মূল বিষয় হচ্ছে ওরা চাইছে আমেরিকা থেকে যে গাড়ি ভারতে আসবে তার উপর যে শুল্ক বসে, সেটাকে শূন্য করে দিতে। কারণ ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি ইলন মাস্কের টেসলা গাড়ি ভারতের বাজারে ঢুকবে শীঘ্রই। আমেরিকার এই ব্যাটারিচালিত গাড়ির বিনাশুল্কে ভারতে প্রবেশের ঘোর বিরোধিতা করছে ভারতীয় গাড়ি সংস্থাগুলি যারা টেসলার মতো বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) তৈরি করে। তাদের বক্তব্য, ইভি শিল্প একেবারেই গোড়ার দিকে রয়েছে ভারতে। এখনই টেসলাকে ছাড়
দিয়ে দেওয়া হলে এই শিল্প ভারতে ধাক্কা খাবে।

প্রসঙ্গত, এ বারের বাজেটে আমেরিকায় তৈরি গাড়ির উপর শুল্ক ইতিমধ্যেই কিছুটা কমানো হয়েছে। এখন বসে ১১০ শতাংশ শুল্ক। বাণিজ্য মন্ত্রকের বক্তব্য, মোদীর সফরেই ভারত আমেরিকা থেকে তেল, গ্যাস, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম— এগুলো আরও বেশি করে কিনতে রাজি হয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

america new delhi

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy