E-Paper

কাবুলকে কাছে টানার পিছনে সেই ‘ডিপ্লোম্যাট’

শান্ত চেহারার অত্যন্ত ঠান্ডা মাথার এবং মাটিতে পা রেখে চলা এই কূটনীতিককে বাইরের জগতে সম্প্রতি পরিচিত করেছে বলিউড।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৫ ১০:১৭
এস জয়শঙ্কর।

এস জয়শঙ্কর।

শুক্রবার তালিবান সরকারের বিদেশমন্ত্রী মাওলাই আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকে বসেছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। এখনও সরকারি ভাবে কূটনৈতিক স্বীকৃতি না পাওয়া তালিবান সরকারের সঙ্গে নয়াদিল্লির শীর্ষ পর্যায়ের এই বৈঠক কিন্তু আচমকা বা কয়েক সপ্তাহের প্রয়াসের ফল নয়। কূটনৈতিক সূত্র জানাচ্ছে, এই দীর্ঘ এবং প্রায় অভাবনীয় কাণ্ডের সূচনায় প্রথম যাঁর দৌত্য কাজে এসেছিল, তাঁরনাম জে পি সিংহ।

শান্ত চেহারার অত্যন্ত ঠান্ডা মাথার এবং মাটিতে পা রেখে চলা এই কূটনীতিককে বাইরের জগতে সম্প্রতি পরিচিত করেছে বলিউড। জন আব্রাহাম অভিনীত ‘দ্য ডিপ্লোম্যাট’ তৈরি হয়েছিল জে পি সিংহের কূটনৈতিক জীবনের এক কাহিনি নিয়ে। তবে সে কাহিনি ছিল পাকিস্তান দূতাবাস-কেন্দ্রিক। কিন্তু তালিবান সরকারের সঙ্গে কিছুটা আড়ালে থেকে দৌত্য করে গিয়েছেন জে পি, যার ফলস্বরূপ জয়শঙ্করের সঙ্গে এই বৈঠক সম্ভব হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। পরিচিত শিবিরের বক্তব্য, উচ্চকিত বলিউডি ব্যক্তিত্বের একেবারেই বিপরীত জে পি-র স্বভাব, তাঁকে ঘিরে আছে নম্রতা।

ঠিক এক বছর আগে অর্থাৎ গত বছরের অক্টোবর থেকে পাকিস্তান-আফগানিস্তান-ইরানের যুগ্মসচিব জে পি-কে দায়িত্ব দেওয়া হয় তালিবানের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করার। কিন্তু সেই দৌত্যকে ঢাকঢোল থেকে দূরে রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বিদেশ মন্ত্রক। নয়াদিল্লি থেকে কথোপকথন চলতে থাকে বিভিন্ন স্তরে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে কাবুলে পৌঁছন জে পি, সাউথ ব্লকের ‘ব্রিফ’ সঙ্গে নিয়ে।

মনে রাখতে হবে, এর আগে ১৯৯৯ সালে শেষ বারের জন্য তালিবানের তৎকালীন বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে বাজপেয়ী সরকারের তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী যশোবন্ত সিংহ আলাপচারিতা করেছিলেন কন্দহর বিমান ছিনতাই নিয়ে। তার পরে ছিল নিঃসীম যোগাযোগহীনতা, সঙ্গত কারণেই। ২০২১-এ হিংসার দাপটে ক্ষমতায় ফের আসার পরে তালিবানদের কোনও রকম মর্যাদাই দেওয়া হয়নি ভারতের পক্ষ থেকে।

নভেম্বরে জে পি কাবুলে গিয়ে তালিবান প্রতিরক্ষামন্ত্রী মৌলবি মহম্মদ ইয়াকুব মুজাহিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। আলোচনার দরজা খোলে মূলত তিনটি বিষয়ের মাধ্যমে। এক, চাবাহার বন্দরকে কাজে লাগানো, দুই আফগানিস্তানকে মানবিক সাহায্য দেওয়া এবং তিন, ভারতের বিভিন্ন প্রকল্পগুলি শুরু করা এবং বাণিজ্য সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তালিবান প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সে সময় বিবৃতি দেয়, ‘বৈঠকে দু'দেশ নিজেদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পরিধি বাড়ানো নিয়ে কথা বলেছে। বিশেষ করে মানবিক সহযোগিতা এবং দু’দেশের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানো নিয়ে ঐকমত্য হয়েছে।’ ভারতের সে সময় লক্ষ্য ছিল, চিন এবং পাকিস্তান একযোগে যাতে এই সুন্নি ইসলামি সম্প্রদায়কে চূড়ান্ত ভারত-বিরোধী করে না ফেলতে পারে, তার চেষ্টা করা। কোনও বাড়তি কথা না বলে কাজে সেটা করে দেখাতে পেরেছেন স্বভাব-মিতবাক জে পি সিংহ— এমনটাই মনে করা হচ্ছে আজ।

জে পি-র ওই বৈঠকে সম্পর্কের তালা খোলার পরে জানুয়ারি মাসে দুবাইয়ে মুখোমুখি বসলেন বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী এবং মুত্তাকি। আরও স্পষ্ট কথা হল চাবাহার বন্দর এবং বাণিজ্য নিয়ে। বৈঠকের পর মুত্তাকি জানালেন, ভারত আফগানিস্তানের ‘গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক সহযোগী’। আফগানিস্তানের দিক থেকে কোনও দেশেরই কোনও বিপদের সম্ভাবনা নেই বলেও মুত্তাকি ভারতের বিদেশসচিবকে আশ্বাস দেন।

ভারত জানায়, পাকিস্তানের করাচি ও গদর বন্দর এড়িয়ে ভারত চাবাহার বন্দরকে কাজে লাগাতে চায়। নয়াদিল্লিতে বিদেশ মন্ত্রক জানায়, দুবাইয়ের বৈঠকের পরে ভারত আফগানিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর পাশাপাশি, আফগানিস্তানের উন্নয়ন প্রকল্পে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে। তালিবান সরকারকে সরাসরি স্বীকৃতি না দিলেও ভারতের একটি ছোট্ট কূটনৈতিক দলকে কাবুলে সক্রিয় করা হয় মূলত বাণিজ্যিক সম্পর্ক, মানবিক সহায়তার কাজকর্ম দেখভালের জন্য। এর পর বিদেশ মন্ত্রক তথা বিক্রম মিস্রীর নেতৃত্বে চলে কয়েক মাসের নিরলস দৌত্য। আস্থা বাড়ানোর পদক্ষেপ হিসাবে সেপ্টেম্বরে কাবুলের ভূমিকম্পে দ্রুত ২১ টন ত্রাণ পাঠিয়ে দেয় ভারত। আর এই দীর্ঘ কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার পর সে দেশে দূতাবাস খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল গত কাল।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

taliban

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy