কৃষি থেকে প্রযুক্তি, উন্নয়নের শিখর ছুঁয়েছে গোটা বিশ্ব। যদিও এই পৃথিবীরই একাংশ এখনও ‘ক্ষুধার রাজ্য’, আর পূর্ণিমার চাঁদ সেই ‘ঝলসানো রুটি’।
সদ্য প্রকাশিত ‘গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স ২০২৫’ অনুযায়ী গোটা বিশ্বে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ১ জন খাদ্যাভাবে দিন কাটাচ্ছেন। কমপক্ষে ৬৭ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ প্রবল খাদ্যসঙ্কটে রয়েছেন। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এই সমীক্ষা রিপোর্ট চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থার যতই উন্নতি হোক, তার সঙ্গে খাদ্যের সমবণ্টনের কোনও যোগ নেই। যেমন, সর্বোচ্চ খাদ্য উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় প্রথম সারিতে থাকা ভারত ক্ষুধা সূচক-এ ‘গুরুতর’ বিভাগে স্থান পেয়েছে।
সমীক্ষা রিপোর্টে জানানো হয়েছে, এই খাদ্যসঙ্কটের বিবিধ কারণ রয়েছে। কোথাও দারিদ্র, যুদ্ধ, অর্থনৈতিক অচলাবস্থা তো কোথাও জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্বল সরকার। আফ্রিকা ও এশিয়ার খাদ্যসঙ্কটের কারণ মূলত এগুলোই। এ ছাড়াও কিছু দেশের মানুষ ঘর হারিয়ে স্থানান্তরিত, খরায় আক্রান্ত। তাঁদের কাছে খাবারের জোগান নেই। আবার খাদ্য উৎপাদন কিংবা কেনার ক্ষমতাও নেই।
‘গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স ২০২৫’-এ অনেকগুলি দেশ ‘বিপজ্জনক’ ও ‘গুরুতর’ বিভাগে রয়েছে। খাদ্যসঙ্কটের শীর্ষে রয়েছে সোমালিয়া (ক্ষুধা সূচক ৪২.৬)। তার পরে একে একে দক্ষিণ সুদান, ম্যাডাগাস্কার, দ্য ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব দ্য কঙ্গো, হাইতি। সোমালিয়ার এ রকম অবস্থার জন্য সে দেশে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা গৃহযুদ্ধ, বারবার খরা, লক্ষ লক্ষ মানুষের গৃহহারা হওয়াকে দায়ী করা হয়েছে রিপোর্টে। দক্ষিণ সুদানেও খাদ্যসঙ্কটের জন্য লাগাতার যুদ্ধকে দায়ী করা হয়েছে। কঙ্গোতে প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডার রয়েছে। তা-ও এই দেশের এই অবস্থার জন্য অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সঙ্কট, হানাহানিকে দায়ী করা হয়েছে। এ দেশে বহু ক্ষেত্রে গৃহযুদ্ধের জন্য জমি ছেড়ে পালাতে হয়েছে চাষিকে। ফলে উর্বর জমি থাকলেও তাতে ফলন নেই।
ভারত রয়েছে ‘গুরুতর’ বিভাগে, ১০২ স্থানে। ক্ষুধা সূচক ২৫.৮। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ভারতে শক্তিশালী কৃষি-ব্যবস্থা ও বিপুল খাদ্যভান্ডার থাকা সত্ত্বেও প্রতিবন্ধকতা হয়ে রয়েছে খাদ্যের অসম বণ্টন, দারিদ্র, শিশুদের অপুষ্টি, দুর্বল শৌচব্যবস্থা। এক দিকে, দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকা জনসংখ্যা, অন্য দিকে বিভিন্ন প্রদেশের পরিচালন ব্যবস্থায় অসাম্য, দেশের সার্বিক উন্নয়নে বাধা হয়ে রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ভারতের বিপুল খাদ্য উৎপাদন ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তাই ‘খাদ্যসঙ্কট’ একটি জটিল সমস্যা হয়ে রয়েছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)