E-Paper

‘ধৈর্যের কূটনীতি’তে ট্রাম্পকে জবাব ভারতের

চিনের তিয়ানজিন শহরে বেজিং ও মস্কোর সঙ্গে পৃথক এবং একত্র বৈঠক করে নয়াদিল্লি বুঝিয়ে দিয়েছে, আমেরিকার প্রতিযোগীদের সঙ্গেও ভারত বাণিজ্য করতে সক্ষম।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:৪৯
(বাঁ দিকে) ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

ভারত-আমেরিকা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তৈরি করা গিঁট কি এ বার খুলতে শুরু করল? সম্প্রতি ট্রাম্প ভারত সম্পর্কে সুর নরমের পরে এই প্রশ্ন উঠেছে কূটনৈতিক শিবিরে। তবে সাউথ ব্লক সূত্রের বক্তব্য, সে কথা বলার সময় এখনও আসেনি। এর ফলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক চুক্তিতে কোনও রকম ইতিবাচক অগ্রগতি হবে কি না, তা-ও বলা যাচ্ছে না। কিন্তু চিনের তিয়ানজিন শহরে বেজিং ও মস্কোর সঙ্গে পৃথক এবং একত্র বৈঠক করে নয়াদিল্লি বুঝিয়ে দিয়েছে, আমেরিকার প্রতিযোগীদের সঙ্গেও ভারত বাণিজ্য করতে সক্ষম।

বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, গত কয়েক দিনে ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স, জাপান এবং ইইউ-কর্তাদের সঙ্গে ক্রমাগত বিভিন্ন স্তরে কথা বলে যাচ্ছে ভারত। হোয়াইট হাউসের কাছেএটাও একটা বার্তা। ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেন’ বা ট্রাম্পের ‘মাগা’ প্রকল্পের বিপরীতে দাঁড়িয়ে সাউথ ব্লক নিজের কৌশলগত স্বাধিকারের পতাকা ওড়াচ্ছে। এ কথাও বলা হচ্ছে, ‘ট্রাম্প-ফ্যাক্টর’ বরং বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্য থাকা রাষ্ট্রনেতাদের একজোট করতে সুবিধেই করে দিয়েছে। অনেক দেশই ট্রাম্পের শুল্ক-ধাক্কার মুখে নিজেদের মধ্যে বিরোধ থাকা সত্ত্বেও বৈঠকের টেবিলে বসে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের অগ্রগতির চেষ্টা করছে। রফতানির বিকল্প পথের সন্ধান করছে।

টোকিয়োর সঙ্গে ট্রাম্প বাণিজ্যচুক্তি ঘোষণার পরে জাপানে অভ্যন্তরে রাজনৈতিক গোলযোগ শুরু হয়, সে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি করলেও রাজনৈতিক ভাবে ওয়াশিংটনের কাছে হেনস্থার মুখে। সে দেশে তাদের একটি সংস্থার বিভিন্ন কারখানায় তল্লাশি চালিয়ে অনেক কোরিয়ানকে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সামান্য সৌজন্যও দেখানো হচ্ছে না। শরিক বা বন্ধু রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে ট্রাম্প সরকারের এই আগ্রাসী আচরণকে চিনের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে।

বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের দাবি, ভারতের ‘ধৈর্যের কূটনীতি’ ধীরে হলেও ফল পেতে শুরু করেছে। ভারত তাড়াহুড়ো করে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেয়নি ট্রাম্পের বিভিন্ন বক্তব্য, ভাষ্য এবং পদক্ষেপগুলির। কিন্তু একই সঙ্গে বিভিন্ন বিকল্প সুযোগগুলিকেও কাজে লাগাতে চেষ্টা করেছে। আমেরিকার সঙ্গে আলোচনার রাস্তা খোলা রাখায়, সুযোগ এবং সময়মতো দৌত্যেও ফিরতে পারছে।

নয়াদিল্লির মতে, সবচেয়ে বড় কথা, ট্রাম্পের ভারতকে ‘মৃত অর্থনীতি’-র দেশ বলা, রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়ে বারংবার কটূক্তি, আন্তর্জাতিক সমর্থন পায়নি। বরং বিশ্বের বড় অর্থনীতিগুলির কাছ থেকে সমানুভূতি পাওয়া গিয়েছে বলেই দাবি সাউথ ব্লকের। ভারত সন্তর্পণে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সর্বাধিক সুবিধাপ্রাপ্ত রাষ্ট্রগুলির বাইরে গিয়ে অংশীদারি তৈরি করছে। ট্রাম্প মুখে যা-ই বলুন, তাঁকে মাথায় রাখতে হচ্ছে ভারতের সুবিশাল বাজার। প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি ক্ষেত্রেও ভারত আমেরিকার বড় খদ্দের, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় সে দেশের সবচেয়ে সুস্থির নিরাপত্তা-অংশীদারও বটে। তাই ট্রাম্প চিন এবং পাকিস্তানের তাস খেলায় ব্রিকস-এ এবং এসসিও-তে পাল্টা চিনের তাস খেলার কূটনীতি অবলম্বন করেছে ভারত।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

US Tariff Donald Trump Narendra Modi

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy