জাপানের সঙ্গে বন্ধুত্ব দৃঢ় করতে চাইছেন মোদী।
সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় ভারতের সঙ্গে নিরাপত্তা ক্ষেত্রে সহযোগিতার বহর বাড়াতে চলেছে জাপান। চলতি বছরের শেষে প্রধানমন্ত্রী জাপান সফরে যাচ্ছেন। নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত কেঞ্জি হিরামাৎসু আজ বলেছেন ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আসন্ন সফরে নিরাপত্তা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। কথা হবে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার, চিনের শক্তি বৃদ্ধি ও ভারত-জাপান যৌথ সেনা মহড়া নিয়েও।’’
উরি কাণ্ড থেকে সদ্যসমাপ্ত ব্রিকস সম্মেলন— গত এক মাস ধরে সন্ত্রাসে মদত দেওয়া নিয়ে পাকিস্তান ও চিনের সঙ্গে ভারতের চাপানউতোর চলছে। এর মধ্যে দিল্লি-টোকিও ঘনিষ্ঠতায় দু’দেশেরই লাভ হওয়ার সম্ভাবনা। সাউথ ব্লকের এক কূটনৈতিক কর্তার বিশ্লেষণ, ‘‘বিদেশনীতিতে কেউ কারও স্থায়ী বন্ধু বা শত্রু নয়। জাতীয় স্বার্খের নিরিখে এক দেশ অন্য দেশকে ব্যবহার করে মাত্র। চিনের সঙ্গে কূটনৈতিক সংঘাত চলছে ভারত-জাপান দু’দেশেরই। ফলে দিল্লি-টোকিও কাছে আসাটাই এখন স্বাভাবিক।’’
সন্ত্রাস মোকাবিলার প্রশ্নে ভারতের পাশে দাঁড়িয়ে জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরামাৎসু বলেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদকে কোনও ভাবেই সমর্থন করা যায় না, তা সে যে মোড়কেই আসুক না কেন। উরির সেনাঘাঁটিতে আক্রমণের ঘটনার আমরা নিন্দা করেছিলাম। জাপানও একই ভাবে সন্ত্রাসবাদের শিকার। আইএস-এর হাতে ঢাকায় আমাদের দু’জন নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। এ ছাড়া সিরিয়া, আলজেরিয়ায় সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে জাপান। সে কারণেই ভারতের সঙ্গে নিরাপত্তা ক্ষেত্রে গাঁটছড়া আরও মজবুত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্য আদানপ্রদানও অনেকটাই বাড়ানো হবে দু’দেশের মধ্যে।’’
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, সন্ত্রাস মোকাবিলায় যৌথ সহযোগিতা বাড়ার পাশাপাশি ভারত ও জাপানের মধ্যে সামরিক সহযোগিতাও বাড়তে চলেছে। ভারত ও আমেরিকার নৌবাহিনী প্রতি বছর যে যৌথ সামরিক মহড়া আয়োজন করে, এ বছর জুন মাসে জাপানকেও তাতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মোদী। আরব সাগরে এই মহড়া নিয়ে সে সময় কড়া প্রতিক্রিয়া জানায় বেজিং। এটা ঘটনা যে দক্ষিণ চিনা সাগরের দখলদারি নিয়ে চিনের মনোভাব যত অনমনীয় হয়েছে, ততই কৌশলগত ভাবে কাছে এসেছে ভারত ও জাপান। এ বার মূলত চিনকে প্রশমিত করতেই বঙ্গোপসাগরে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ভারত-জাপান যৌথ সহযোগিতায় গড়ে উঠতে চলেছে ১৫ মেগাওয়াটের একটি ডিজেল বিদ্যু্ৎকেন্দ্র। বেজিং তার আধিপত্য কায়েমের জন্য অনেক দিন ধরেই ভারত মহাসাগরকে টার্গেট করায় কৌশলগত ভাবেই ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির জন্য আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জকে বেছে নিয়েছে ভারত ও জাপান। ওই এলাকায় দিল্লি-টোকিও যৌথ নজরদারি থাকলে মলাক্কা প্রণালীতে বেজিংয়ের ঘাঁটি গাড়ার ইচ্ছেটা খুব সহজে বাস্তবায়িত হবে না।
মোদীর জাপান সফরে যে বিষয় নিয়ে কথা হবে, তার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বিষয়ের পাশাপাশি প্রাধান্য পেতে চলেছে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বিষয়গুলিও। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে যাতে ভারতকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় সে জন্য চিনের সঙ্গে কথা বলা হবে বলেও জানান জাপানের রাষ্ট্রদূত। তাঁর কথায়, ‘‘আশা করব রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো দানের ক্ষমতাসম্পন্ন একটি দেশ হিসেবে চিন দায়িত্বশীল আচরণ করবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy