দ্বিতীয় বার মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে বসেই ডোনাল্ড ট্রাম্প নয়াদিল্লিকে ‘এফ-৩৫ লাইটনিং২’ যুদ্ধবিমান বিক্রির বার্তা দিয়েছিলেন। কিন্তু শুল্কযুদ্ধের আবহে সেই আহ্বানে সাড়া না দিয়ে ভারতের ছ’দশকের পুরনো সামরিক সহযোগী রাশিয়ার উপরেই ভরসা রাখতে পারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার। ‘দ্য প্রিন্ট’-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন জানাচ্ছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রস্তাব মেনে যৌথ উদ্যোগে পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ যুদ্ধবিমান ‘সুখোই এসইউ-৫৭’ (‘ফেলন’ নামে যা পরিচিত) নির্মাণের বিষয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের নেতৃত্বাধীন ‘প্রতিরক্ষা সামগ্রী ক্রয় বিষয়ক কমিটি’ (ডিএসি) সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে।
যৌথ উদ্যোগে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান নির্মাণের লক্ষ্যে ২০০৭ সালে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের জমানায় সমঝোতা করেছিল ভারত এবং রাশিয়া। তার পোশাকি নাম ছিল ‘এফজিএফএ (ফিফ্থ জেনারেশন ফাইটার এয়ারক্র্যাফ্ট) প্রোগ্রাম’। কিন্তু ২০১৮ সালে মোদী সরকার একতরফা ভাবে সেই সমঝোতা ভেঙে দিয়েছিল। এখন ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে’ আবার পুতিনের দেশের মুখাপেক্ষী হতে পারে নয়াদিল্লি।
প্রসঙ্গত, ফ্রান্সে তৈরি ৪.৫ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান রাফালের পরে ভারতীয় বায়ুসেনা পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান পেতে সক্রিয় হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে বেঙ্গালুরুর ইয়ালেহাঙ্কা বায়ুসেনা ঘাঁটিতে ‘অ্যারো ইন্ডিয়া ২০২৫’-এ যুদ্ধকৌশল প্রদর্শন করতে মার্কিন এফ-৩৫ এবং রুশ এসইউ-৫৭ আসার পরে এ নিয়ে জল্পনা আরও জোরালো হয়। ফেব্রুয়ারিতেই মোদীর আমেরিকা সফরের সময় ট্রাম্পের তরফে এসেছিল এফ-৩৫ বিক্রির প্রস্তাব।
সামরিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, মার্কিন এফ-৩৫-এর তুলনায় রুশ এসইউ-৫-র ‘স্টেলথ্ প্রযুক্তি’ (শত্রুপক্ষের রেডার নজরদারি ফাঁকি দেওয়ার কৌশল) নিম্নমানের। কিন্তু মস্কোর তরফে দেওয়া চুক্তির শর্ত অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। মার্চ মাসে ভারতকে ‘এসইউ-৫৭ই’ (এসইউ-৫৭-র এক্সপোর্ট ভ্যারিয়েন্ট) যুদ্ধবিমানের ‘যৌথ উৎপাদন’ এবং ‘সম্পূর্ণ প্রযুক্তি হস্তান্তরে’র প্রস্তাব দেয় রাশিয়া। পাশাপাশি, ক্রেমলিনের তরফে বার্তা দেওয়া হয়, তারা এসইউ-৫৭ ফাইটার জেটের গুরুত্বপূর্ণ ‘সোর্স কোড’ দিতেও রাজি। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের বড় অংশ গোড়া থেকেই রুশ বিমান কেনার পক্ষপাতী ছিলেন। কারণ, অতীতে কখনও আমেরিকার তৈরি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধবিমান ভারতীয় সেনা ব্যবহার করেনি।
আরও পড়ুন:
অন্য দিকে, মিগ-২১, মিগ-২৭, মিগ-২৯, সুখোই-৩০-সহ বিভিন্ন যুদ্ধবিমান ব্যবহারের অভিজ্ঞতা রয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনার ফাইটার পাইলটদের। তা ছাড়া, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ এবং ‘আত্মনির্ভর ভারত’ স্লোগানের মাধ্যমে দেশের মাটিতে উন্নত হাতিয়ার তৈরির উপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফলে বর্তমানে বিদেশ থেকে অস্ত্র আমদানির ক্ষেত্রে প্রযুক্তি হস্তান্তরের শর্ত রাখছে কেন্দ্র। সেই মাপকাঠির নিরিখে রুশ এসইউ-৫৭-র পাল্লা ভারী। কারণ, এফ-৩৫-এর নির্মাতা সংস্থা লকহিড মার্টিন নয়াদিল্লিকে প্রযুক্তি হস্তান্তরে নারাজ বলেই সূত্রের খবর। অন্য দিকে, রাশিয়ার সুখোই সংস্থা ইতিমধ্যেই ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, ‘হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড’ (হ্যাল)-এর সঙ্গে যৌথ ভাবে যুদ্ধ ও প্রশিক্ষণ বিমান উৎপাদন শুরু করেছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চুক্তি চূড়ান্ত হলে ২০৩৫ সাল থেকে যৌথ উদ্যোগে সুখোই-৩৫ নির্মাণের দায়িত্ব পাবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হ্যাল।