Advertisement
E-Paper

বিজেপির খোঁচায় ফুঁসছে পাকিস্তান

লক্ষ্য চিন। ফুঁসে উঠল পাকিস্তান! কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের দাবি, উত্তর-পূর্বের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকে এক ছাতার তলায় আনার ব্যাপারে সাহায্য করছে চিনা সেনার একাংশ। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, আলফা, এনএসসিএন-খাপলাং এবং আরও ৭টি জঙ্গি সংগঠনকে একত্রিত করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ‘ইউনাইটেড ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট’ তৈরি করতে সব রকম ভাবে সাহায্য করেছে চিন।

অগ্নি রায় ও অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৫ ০৩:৩৭

লক্ষ্য চিন। ফুঁসে উঠল পাকিস্তান!

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের দাবি, উত্তর-পূর্বের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকে এক ছাতার তলায় আনার ব্যাপারে সাহায্য করছে চিনা সেনার একাংশ। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, আলফা, এনএসসিএন-খাপলাং এবং আরও ৭টি জঙ্গি সংগঠনকে একত্রিত করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ‘ইউনাইটেড ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট’ তৈরি করতে সব রকম ভাবে সাহায্য করেছে চিন। মায়ানমারের মাটিতে অভিযান চালিয়ে চিনের সেই উদ্যোগই ভেস্তে দিতে চাওয়া হয়েছে সোমবার।

কিন্তু আজ তেড়েফুঁড়ে আসরে নেমেছে পাকিস্তান। সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিসার আলি খান বলেছেন, ‘‘পাকিস্তান মায়ানমারের মতো নয়। আমাদের বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করছে, তারা একটা কথা ভাল করে জেনে রাখুক যে, সব রকম অ্যাডভেঞ্চারের জবাব দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত।’’

পাকিস্তানের এমন তীব্র প্রতিক্রিয়া কেন? ওয়াকিবহাল মহল বলছে, টানাপড়েনের বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল ঢাকায় নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতা থেকেই। সেখানে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী, পাকিস্তানই তার লক্ষ্য বলে মনে করা হয়েছিল। গত কাল মায়ানমারে সেনা অভিযানের পরে সেই ইঙ্গিতকেই আরও এক ধাপ তুলে নিয়ে গিয়েছেন বিজেপির মন্ত্রীরা। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী রাজ্যবর্ধন সিংহ রাঠৌর বলেছেন, ‘‘এই অভিযান আসলে অন্য দেশকেও একটা বার্তা।’’ পাশাপাশি কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরের মন্তব্য, ‘‘সব জঙ্গি গোষ্ঠীকে এটা বুঝিয়ে দেওয়া গেল যে, তাদের নিকেশ করার জন্য ভারত নিজের সীমান্ত পার হয়ে আঘাত হানতে দ্বিধা করবে না।’’

বিজেপি মন্ত্রীদের এই সব মন্তব্যের লক্ষ্য যে তারাই, সেটা বুঝতে দেরি হয়নি পাকিস্তানের। পাক সেনাপ্রধান রাহিল শরিফ পাল্টা বলেছেন, ‘‘ভারতের রাজনীতিকেরা শুধু রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদই লঙ্ঘন করছেন না, অন্যের দেশে নাক গলিয়ে শ্লাঘা অনুভব করছেন।’’ পাকিস্তানের ক্ষেত্রে ভারতের এই ষড়যন্ত্র সফল হবে না বলেও সাবধান করে দিয়েছেন শরিফ।

ঢাকায় মোদীর মন্তব্যের বিরোধিতাতেও এ দিন সরব হয়েছেন পাক রাজনীতিকেরা। পাক প্রধানমন্ত্রীর বৈদেশিক পরামর্শদাতা সরতাজ আজিজ আজ পাক পার্লামেন্টে বলেন, ভারত খোলাখুলিই স্বীকার করেছে যে তারা পাকিস্তানের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার চেষ্টা করেছেতাঁর কথায়, ‘‘১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের বিভাজনের ক্ষেত্রে ভারতের ন্যক্কারজনক ভূমিকা এবং সন্ত্রাসের মাধ্যমে পাকিস্তানের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার চেষ্টা আমরা ফাঁস করে দেব।’’

ভারত-পাক এই চাপানউতোরে অবশ্য কেন্দ্রের শাসক দলের লাভই দেখছেন রাজধানীর রাজনীতিকেরা। তাঁদের মতে, ভারতের সেনাবাহিনীর কাছে চিনের ছক ভেস্তে দেওয়া লক্ষ্য হতে পারে। কিন্তু বিজেপি নেতাদের কাছে চিনের চেয়েও পাকিস্তান অনেক বড় ‘শত্রু’। কারণ, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরব হলেই আমজনতার হাততালি কুড়নো যাবে অনেক বেশি। কিন্তু প্রশ্ন হল, মায়ানমারের মাটিতে যে অভিযান চালানো গিয়েছে, পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সেটা কি সম্ভব? প্রাক্তন এয়ার মার্শাল বি কে সিংহের কথায়, ‘‘পাক সীমান্তেও গোলাগুলি চালানো হয়। কিন্তু সে দেশের ভিতরে সেনা ঢুকিয়ে দেওয়াটা সম্ভব নয়। এটা মনে রাখতে হবে, পাক সরকার যতই ভারত বিরোধিতার দায় নন-স্টেট অ্যাক্টরদের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করুক না কেন, তারা এ কাজে ভারতীয় সেনাকে বিন্দুমাত্র সহায়তা করবে না। বরং সমস্যা তীব্র হয়ে যুদ্ধের আকার নেবে। মায়ানমারের কাছ থেকে আমরা যে সাহায্য পাচ্ছি, তা ইসলামাবাদের কাছ থেকে পাওয়ার কথা কল্পনাও করা যায় না।’’

সেনা কর্তারাও বলছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে কার্গিল-সহ মোট ৪টি যুদ্ধ লড়েছে ভারত। কিন্তু সে সব অতীতের কথা। এই মুহূর্তে পরমাণু শক্তিধর দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে পুরোপুরি যুদ্ধে যাওয়ার ঝুঁকি নেওয়া ভারতের পক্ষে সম্ভব নয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে সীমিত যুদ্ধ বলে কিছু হয় না। তা শেষ পর্যন্ত পুরোদস্তুর যুদ্ধেই পরিণত হয়। ফলে মায়ানমারে গিয়ে কিছু জঙ্গিকে নিকেশ করে আসা আর পাকিস্তানের ভিতরে সেনাবাহিনী ঢুকিয়ে দেওয়া— দু’টির আকাশপাতাল তফাৎ।

তবে বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, এই একই ধরনের অপারেশন পাকিস্তানের মাটিতে করা সম্ভব কি না, সেটা প্রশ্ন নয়। বড় কথা হল, এর ফলে যে প্রত্যাঘাতের বার্তাটি তৈরি হল, সেটা। পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়াকে তাদের আতঙ্কের প্রতিফলন হিসেবেই দেখছেন মন্ত্রকের কর্তারা।

terrorists Pak Pakistan Myanmar NSCN Agni Ray anamitra sengupta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy