Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Manipur Violence

মানবিকতা কখনওই দুর্বলতা নয়, অশান্ত মণিপুরে মহিলাদের বিক্ষোভে পিছু হটা নিয়ে বার্তা সেনার

গত দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি মণিপুরে। একশোরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি। সোমবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

photo of Manipur

মণিপুরে সেনার টহল। ছবি: পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
ইম্ফল শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২৩ ১১:০৫
Share: Save:

গত দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে তেতে রয়েছে মণিপুর। উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে অশান্তির আবহে গত শনিবার সেনাকে ঘিরে ফেলেছিলেন মহিলারা। যার জেরে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল ভারতীয় সেনা। যে ঘটনায় সেনার ‘মানবিক মুখ’ ধরা পড়েছিল। এ বার সেই ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে সেনার বার্তা, ‘‘মানবিকতা কখনওই দুর্বলতা নয়।’’

শনিবার সকাল থেকে স্থানীয় ‘বিদ্রোহী’দের সঙ্গে সেনা জওয়ানদের সংঘর্ষ চলেছিল। ১২ জনকে সেনা বন্দি করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু বহু মানুষ একত্রিত হয়ে বন্দিদের মুক্তির দাবি করেন। অন্তত ১২০০ জন ছিলেন ওই দলটিতে। যার নেতৃত্বে ছিলেন মহিলারা। প্রাণহানির সম্ভাবনা এড়াতেই দিনের শেষে সেনা তাদের সিদ্ধান্ত বদলায়। তাদের তরফে জানানো হয়, ‘‘পরিস্থিতি স্পর্শকাতর। তার গুরুত্ব বুঝেই বন্দিদের ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মহিলা পরিচালিত বিশাল বিক্ষুব্ধ জনতার বিরুদ্ধে বাহিনী শক্তি প্রয়োগ করলে বহু প্রাণহানি হতে পারত।’’ ইথাম গ্রামে ওই ঘটনায় কমান্ডার ইন-চার্জ ‘পরিণত সিদ্ধান্ত’ নিয়েছিলেন বলে প্রশংসা করেছিল সেনা। একই সঙ্গে ভারতীয় সেনার ‘মানবিক মুখ’ তুলে ধরা হয়েছিল। তবে সে দিনের পিছু হটাকে ‘দুর্বলতা’ ভাবা ঠিক নয় বলেই এ বার বার্তা দিল সেনা।

সোমবার রাতে সেনার তরফে এক টুইট বার্তায় বলা হয়েছে, ‘‘মণিপুরে মহিলা বিক্ষোভকারীরা পথ আটকে নিরাপত্তাবাহিনীর কাজে হস্তক্ষেপ করছেন। এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে জীবন এবং সম্পত্তি রক্ষায় এই ধরনের অহেতুক হস্তক্ষেপ ক্ষতিকর।’’ শান্তি ফেরাতে সব রকম ভাবে সাহায্য করার জন্য আর্জি জানিয়েছে সেনা।

গত ৩ মে মণিপুরের জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর বিক্ষোভ-মিছিল ঘিরে উত্তর পূর্বের ওই রাজ্যে অশান্তির সূত্রপাত। মণিপুর হাই কোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। তার পরেই জনজাতি সংগঠনগুলি তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই সংঘাতের সূচনা হয় সেখানে। মণিপুরের আদি বাসিন্দা হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেইতেই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কুকি, জ়ো-সহ কয়েকটি তফসিলি জনজাতি সম্প্রদায়ের (যাদের অধিকাংশই খ্রিস্টান) সংঘর্ষ ঠেকাতে গত ৬ মে মণিপুরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। নামানো হয় সেনা এবং অসম রাইফেলস বাহিনীকে।

গত দেড় মাসে মণিপুরে গোষ্ঠীসংঘর্ষে একশোরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে দাবি। বিদেশ প্রতিমন্ত্রী রঞ্জন সিংহের বাড়িতে পেট্রল বোমা ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে। মণিপুর সরকারের একমাত্র মহিলা মন্ত্রী কাংপোকপি কেন্দ্রের বিধায়ক নেমচা কিগপেনের বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিল বিক্ষুব্ধ জনতা। রাজ্যের জনস্বাস্থ্য, কারিগরি এবং ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের মন্ত্রী এল সুসীন্দ্র মেইতেইয়ের বাড়ি সংলগ্ন একটি গুদামঘরে আগুন লাগিয়ে দেন অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা। অশান্তির মধ্যেই সে রাজ্যে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু তার পরও পরিস্থিতির বদল ঘটেনি।

বিজেপি শাসিত মণিপুরে অশান্তি নিয়ে সরগরম জাতীয় রাজনীতি। সে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি তুলেছে বেশ কয়েকটি বিরোধী দল। মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কেন নীরব, সেই প্রশ্নও তুলেছে বিরোধীরা। গত শনিবার মণিপুর নিয়ে দিল্লিতে সর্বদল বৈঠক করেছিলেন অমিত শাহ। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংহের সঙ্গেও বৈঠক হয় শাহের। সাত দিনের বিদেশ সফর সেরে দেশে ফেরার পরই মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার শাহের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই পরিস্থিতিতে সে রাজ্যে শান্তি ফেরাতে সেনার ভিডিয়ো বার্তা প্রকাশ্যে এল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Manipur Indian Army
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE