E-Paper

সমাজমাধ্যমে বিদেশসচিব মিস্রীকে কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ, বাদ গেলেন না কন্যাও!

রবিবার সকাল থেকে এক্স-হ্যান্ডলে দেশের বিদেশসচিবকে কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ শুরু করল নেটিজ়েনদের একাংশ। এই ট্রোল-বাহিনীর হাত থেকে রেহাই পাননি বিদেশসচিবের কন্যা এবং তার গোটা পরিবার। এর পরেই বিদেশসচিব তাঁর অ্যাকাউন্টটি ‘লক’ করে দেন।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২৫ ০৬:২৭
বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী।

বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী। —ফাইল চিত্র।

সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের আবহে দেশের বিদেশসচিব হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। শনিবার নরেন্দ্র মোদী সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে তা সাংবাদিক সম্মেলন করে ঘোষণা করেন বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী। আর তার পরেই রবিবার সকাল থেকে এক্স-হ্যান্ডলে দেশের বিদেশসচিবকে কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ শুরু করল নেটিজ়েনদের একাংশ। এই ট্রোল-বাহিনীর হাত থেকে রেহাই পাননি বিদেশসচিবের কন্যা এবং তার গোটা পরিবার। এর পরেই বিদেশসচিব তাঁর অ্যাকাউন্টটি ‘লক’ করে দেন। দেশের বিদেশসচিব এবং তাঁর পরিবারকে এমন কুৎসিত আক্রমণ করার তীব্র সমালোচনা করেছেন অনেকেই। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে পুলিশকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই কুৎসাকারীদের গ্রেফতার করতে হবে।

ভারত-পাক সংঘাতের আবহে প্রথম থেকেই সরকারের বক্তব্য-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেছেন ১৯৮৯ ব্যাচের ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিসের (আইএফএস) এই আমলা। চার দিন ধরে চলা তীব্র সংঘর্ষে সরকারের প্রতিটি বক্তব্য সাংবাদিক বৈঠক করে দেশবাসীকে জানানোর গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে। শনিবার যুদ্ধবিরতি নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের সিদ্ধান্তও তিনিই সাংবাদিক বৈঠক করে জানান। তার পর থেকেই শুরু হয়েছে আক্রমণ।

পহেলগাম-কাণ্ডের পর থেকেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা নিয়ে মোদী সরকারের উপরে চাপ বাড়ছিল। প্রতিটি বিরোধী দল এই প্রশ্নে সরকারের পাশে একজোট হয়ে দাঁড়িয়ে পহেলগাম-কাণ্ডে দোষীদের শাস্তি এবং পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়। ভারত দেশের অন্দরে তৈরি হওয়া ক্ষোভের বিষয়টি নিয়ে একাধিক রাষ্ট্রের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি রাষ্ট্রপুঞ্জেও পাকিস্তানকে তাদের জঙ্গি-যোগ নিয়ে তুলোধোনা করে। এর মধ্যেই পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতি ভেঙে নিয়ন্ত্রণরেখার ওপার থেকে লাগাতার গুলি চালাতে শুরু করতে পাল্টা কড়া জবাব দেয় ভারতও। এই প্রতিটি বিষয়ই সাংবাদিকদের মাধ্যমে তুলে ধরার পাশাপাশি পাকিস্তানের জঙ্গিঘাঁটিতে ভারতের নিয়ন্ত্রিত হানার বিষয়েও বিশদে জানান তিনি।

কিন্তু শনিবার যুদ্ধবিরতি নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত সাংবাদিক বৈঠকে তিনি জানানোর পর থেকেই আক্রমণ শুরু হয়। দেশের বিদেশসচিবের পারিবারিক ছবির নীচে ‘দেশদ্রোহী’, ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে কুৎসা করার পাশাপাশি মানবাধিকার বিষয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করায় বিদেশসচিবের আইনপড়ুয়া মেয়েকেও আক্রমণ করা হয়। এমনকি বিক্রম-কন্যার ফোন নম্বরও ফাঁস করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবাদে নেমে নেট-নাগরিকদের একাংশ অভিযোগ করেন, উগ্র দক্ষিণপন্থীরাই এর পিছনে রয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, এর আগে পহেলগামে নিহত বায়ুসেনার আধিকারিক বিনয় নারওয়ালের স্ত্রী হিমাংশী নারওয়াল জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও মুসলিম-বিদ্বেষ না ছড়ানোর বার্তা দিলে তাঁকেও একই ভাবে আক্রমণ শানিয়েছিল এই উগ্র দক্ষিণপন্থীরা। তখন বারবার দাবি উঠলেও সরকার বা পুলিশ এ নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করেনি। জাতীয় মহিলা কমিশনও শুধু মাত্র নিন্দা করেই দায় এড়িয়ে গিয়েছে। এ বারে বিদেশসচিব ও তাঁর পরিবারকে যে ভাবে আক্রমণ করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিচত হয়ে ব্যবস্থা না নিলে আগামী দিনে এই ধরনের ঘটনা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। একই সঙ্গে নেট-নাগরিকদের একাংশের বক্তব্য, ক্রমাগত মুসলিম-বিদ্বেষ এবং যুদ্ধজিগির চালিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যেই পরিকল্পিত ভাবে এই ধরনের আক্রমণ করা হচ্ছে। এ জন্য বিজেপি-সঙ্ঘ পরিবারের উগ্র মতবাদকেই দায়ী করেছেন তাঁরা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Vikram Misri foreign secretary Social Media Abuse India-Pakistan

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy