দীর্ঘদিন ধরে দেশে একাই দশে দশ ছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। পরবর্তী কালে সুনাম কুড়িয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ও। কিন্তু মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের সাম্প্রতিক মান নির্ণয় পরীক্ষায় দেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সামগ্রিক তালিকায় প্রথম দশে তাদের কারও জায়গা হয়নি। ওই তালিকার প্রথম দশে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সবেধন নীলমণি আইআইটি খড়্গপুর। তাদের স্থান চতুর্থ। যাদবপুর পেয়েছে দ্বাদশ স্থান। কলকাতা পিছিয়ে গিয়েছে সাতাশে।
দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির তালিকায় যাদবপুর অবশ্য পঞ্চম। কলকাতা ষোড়শ। দেশের সেরা কলেজের তালিকায় ষষ্ঠ হয়েছে সেন্ট জেভিয়ার্স। লোরেটো কলেজ রয়েছে অষ্টাদশ স্থানে। প্রথম ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বিশ্বভারতীও আছে। তবে সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা প্রথম দেড়শো বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় ঠাঁই হয়নি প্রেসিডেন্সির।
বাংলার মুখ রেখেছে খড়গপুর আইআইটি। সেখানকার অধিকর্তা পার্থপ্রতিম চক্রবর্তী সোমবার বলেন, ‘‘গবেষণা এবং এখান থেকে পাশ করা যাওয়া ছাত্রদের কর্মকুশলতার জোরেই আমাদের এই র্যাঙ্ক হয়েছে।’’
গত বছর এই মান নির্ণয় শুরু হলেও প্রথম বার যাদবপুর ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাতে যোগ দেয়নি। এ বারেই প্রথম যোগ দিয়ে যাদবপুরের ফলাফলে উচ্ছ্বসিত উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। ‘‘এ-রকম ফলই আশা করেছিলাম,’’ বলেন তিনি। সুরঞ্জনবাবু জানান, যতটা অনুদান তাঁদের প্রয়োজন, কেন্দ্রের কাছ থেকে ততটা পাওয়া যায় না। দ্বাদশ যোজনায় প্রথম সারির কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যেখানে কেন্দ্রের কাছ থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা পাচ্ছে, সেখানে যাদবপুরের প্রাপ্তি ২৬ কোটি। মূলত, রাজ্য সরকারের আর্থিক সাহায্যে চলতে হয় তাঁদের। মান নির্ণয় প্রক্রিয়ায় দেখা গিয়েছে, পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে কম নম্বর পেয়েছে যাদবপুর। আর কম পেয়েছে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতের ক্ষেত্রে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সামগ্রিক ভাবে রয়েছে ২৭তম স্থানে। ‘‘এই ফলে আমরা খুশি। তবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি আমাদের থেকে গবেষণার ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে থাকে,’’ বলেন সেখানকার উপাচার্য আশুতোষ ঘোষ। তিনি জানান, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে সাম্প্রতিক কালে বেশ বিরূপ ধারণা তৈরি হয়েছে। সেটাও মান নির্ণয়ে প্রভাব পড়েছে বলে মনে হয়।
ওই তালিকায় প্রেসিডেন্সি ঠাঁই না-পাওয়ায় স্বভাবতই বিস্মিত শিক্ষা মহল। কেন নেই প্রেসিডেন্সি?
উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়ার যুক্তি, সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বদলে তাঁদের কলেজের কোড পাঠানো হয়েছিল। তাই আবেদন যথাযথ হয়নি। অনুরাধাদেবীর মন্তব্য, ‘‘আমরা ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।’’ গত বছর এই কেন্দ্রীয় মূল্যায়নে বিশ্ববিদ্যালয়-তালিকায় প্রেসিডেন্সির স্থান ছিল ৪১। সে-বার ঠিকঠাক আবেদন করলেও এ বার কেন যে এমন ভুল হয়ে গেল, সেটা প্রেসিডেন্সির শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীদের মাথায় ঢুকছে না।
দেশের প্রথম দশটি কলেজের মধ্যে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে সেন্ট জেভিয়ার্স। তারা ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল বা নাক-এর বিচারে এ++ গ্রেড পেয়ে দেশের সেরা কলেজ হয়েছিল। কলেজের অধ্যক্ষ ফেলিক্স রাজ বলেন, ‘‘আমরা আরও ভাল করার চেষ্টা করব।’’ কলেজ-তালিকায় লোরেটো রয়েছে অষ্টাদশ স্থানে। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলির মধ্যে শিবপুর আইআইইএসটি রয়েছে সপ্তদশে। গত বছর ছিল কুড়িতে। ‘‘আমাদের আরও উপরে যেতে হবে,’’ বলেন অধিকর্তা অজয় রায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy