E-Paper

সোফিয়া: ‘দ্বিচারিতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে ধৃত অধ্যাপক

কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের বেছে বেছে খুন করার পরে পাক জঙ্গিদের আঁতুড়ঘরে হামলা চালায় ভারতীয় সেনা। যার নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’। সেনার ওই অভিযান নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে বিস্তারিত জানান কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কম্যান্ডার ব্যোমিকা সিংহ।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২৫ ০৭:৩৪

—প্রতীকী চিত্র।

কর্নেল সোফিয়া কুরেশির প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে শাসক শিবিরের দিকে দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। সমাজমাধ্যমে সেই মন্তব্য করার জন্য গ্রেফতার করা হল অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদকে। বিজেপির এক নেতার অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার সকালে দিল্লি পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছে। এর আগে তাঁকে নোটিস পাঠিয়েছিল হরিয়ানার রাজ্য মহিলা কমিশন। দিল্লি পুলিশের এসিপি রাজ অজিত সিংহ অধ্যাপকের গ্রেফতারির খবর জানিয়ে বলেন, “আলি খান মাহমুদাবাদকে দিল্লি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে সমাজমাধ্যমে তাঁর করা কিছু মন্তব্যের জেরেই এই গ্রেফতারি।”

অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদকে রবিবার সকালে পুলিশ গ্রেফতার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। আমরা পুরো মামলার বিশদ বিবরণ যাচাই করছি। এ নিয়ে তদন্তে পুলিশ এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্পূর্ণ সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বিশ্ববিদ্যালয়।”

কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের বেছে বেছে খুন করার পরে পাক জঙ্গিদের আঁতুড়ঘরে হামলা চালায় ভারতীয় সেনা। যার নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’। সেনার ওই অভিযান নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে বিস্তারিত জানান কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কম্যান্ডার ব্যোমিকা সিংহ। এ ভাবে সোফিয়াকে সামনে নিয়ে আসা নিয়ে সমাজমাধ্যমে মন্তব্য করতে গিয়ে মাহমুদাবাদ বিষয়টিকে ‘লোক দেখানো’ ও ‘দ্বিচারিতা’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন। এক্স-হ্যান্ডলে ওই অধ্যাপক লেখেন, “অনেক দক্ষিণপন্থী লোক কর্নেল সোফিয়া কুরেশির প্রশংসা করছেন। এটা ভাল। তবে তাঁরা যদি একই রকম জোরালো ভাবে গণপিটুনি, বুলডোজ়ার অভিযান ও ঘৃণার রাজনীতির শিকার মুসলিম নাগরিকদেরও রক্ষা করার দাবি তোলেন, তা হলে সেটাই হবে প্রকৃত দেশপ্রেম’।

তাঁর এই মন্তব্যের পরেই নেটিজ়েনদের একাংশ তীব্র সমালোচনা শুরু করেন। বিষয়টি নিয়ে হরিয়ানা রাজ্য মহিলা কমিশন তাঁকে নোটিসও পাঠায়। কমিশনের চেয়ারপার্সন রেণু ভাটিয়া পরে বলেন, “আমরা দেশের মেয়ে কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহকে অভিবাদন জানাই। রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়ান এমন অধ্যাপক তাঁদের জন্য যে ধরনের শব্দ ব্যবহার করেছেন, তা মানা যায় না। আমরা আশা করেছিলাম যে, তিনি অন্তত কমিশনের সামনে উপস্থিত হয়ে দুঃখপ্রকাশ করবেন।” মহিলা কমিশনের মতে, তিনি যে ধরনের শব্দ ব্যবহার করেছেন, তা সেনাবাহিনীর মহিলা সদস্যদের সম্মানহানি ঘটাতে পারে এবং সমাজে অশান্তি তৈরি করতে পারে। গ্রেফতারির আগেই অবশ্য অধ্যাপক মাহমুদাবাদ নিজের বক্তব্যের সপক্ষে মন্তব্য করে বলেছিলেন, “আমার মন্তব্যে কোনও নারীবিদ্বেষ নেই। আমি বরং প্রশংসা করেছি যে, একজন মুসলিম নারী অফিসারকে এমন গুরুত্বপূর্ণ ব্রিফিংয়ে শামিল করা হয়েছে। আমি শুধু বলতে চেয়েছি, এই অন্তর্ভুক্তির মানসিকতা যেন দেশের অন্য মুসলিম নাগরিকদের প্রতিও দেখানো হয়। মহিলা কমিশনের পাঠানো নোটিসে আমার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে। আমার পোস্ট সম্পূর্ণ ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আমি শান্তি ও সম্প্রীতির পক্ষে।” যদিও তাঁর এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নয় পুলিশ। তবে নাগরিক সমাজের অনেকেই মনে করছেন, অধ্যাপকের মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হাত দেওয়া হল। তিনি কারও প্রতি কোনও ব্যক্তিগত আক্রমণ করেননি, কোনও উস্কানিমূলক ঘৃণাভাষণও করেননি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

arrest India-Pakistan Operation Sindoor Sophia Qureshi Social Media Abuse

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy