Advertisement
E-Paper

চিনা সেনার চোস্ত হিন্দিতে হতবাক ভারতীয় জওয়ানরা

ভারতীয় সেনার ‘জয়’ কামনা করল চিনাবাহিনী! নিছক গদ্যে নয়, একেবারে গানে-নাচে জমজমাট সেই প্রার্থনা! কাল অরুণাচলপ্রদেশের সুবনসিরি জেলার অন্য পাশে, চিনা ভূখণ্ডের চেঙডু প্রদেশের ঝায়ু ঘাঁটিতে ভারত ও চিনের সেনা একসঙ্গে নববর্ষ পালন করে।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:২৬
উৎসবে একজোট। চিনের বায়ুসেনা ঘাঁটিতে নববর্ষ পালনে ভারতীয় সেনাও। ছবি সেনাবাহিনীর সৌজন্যে।

উৎসবে একজোট। চিনের বায়ুসেনা ঘাঁটিতে নববর্ষ পালনে ভারতীয় সেনাও। ছবি সেনাবাহিনীর সৌজন্যে।

ভারতীয় সেনার ‘জয়’ কামনা করল চিনাবাহিনী!

নিছক গদ্যে নয়, একেবারে গানে-নাচে জমজমাট সেই প্রার্থনা!

কাল অরুণাচলপ্রদেশের সুবনসিরি জেলার অন্য পাশে, চিনা ভূখণ্ডের চেঙডু প্রদেশের ঝায়ু ঘাঁটিতে ভারত ও চিনের সেনা একসঙ্গে নববর্ষ পালন করে। ওই অনুষ্ঠানেই চিনা সৈন্যরা ভারতীয় সেনাদের অবাক করে চোস্ত হিন্দিতে গেয়ে শোনান ‘স্লামডগ মিলিওনেয়ার’ ছবির অস্কারজয়ী গান ‘জয় হো’।

দামাই শিবিরে হওয়া ওই উৎসবে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন ব্রিগেডিয়ার এস এস ভোগাল। চিনা বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন সিনিয়র কর্নেল হু জিওয়াও বাও। প্রথমে সেনা কর্তারা জাতীয় সঙ্গীতের তালে স্বদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

সেনা মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুনীত নিউটন জানান, ভারতীয় প্রতিনিধিদের বিস্মিত করে চিনা সৈন্যরা দু’টি বলিউডি গান তুখোড় দক্ষতায় গেয়েছেন। একটি ছিল ‘জয় হো’, অন্যটি ‘মহব্বতেঁ’ ছবির গান ‘আঁখে খুলি হো ইয়া হো বন্ধ’। অনুষ্ঠানে হাজির এক সেনাকর্তার কথায়, ‘‘চিনাবাহিনী অন্তত অনুষ্ঠানের খাতিরে আমাদের উদ্দেশে বারেবারে ‘জয় হো’ বলায় শুনতে ভালই লাগছিল। সব মিলিয়ে সৌহার্দ্যপূর্ণ ছিল অনুষ্ঠান। কিন্তু ওরা যে দক্ষতায় হিন্দি গান গেয়েছে— তাতে অনুষ্ঠান নিয়ে নিজেদের মধ্যেও হিন্দিতে কোনও লঘু মন্তব্য করতে ভয় হচ্ছিল।’’ হিন্দি গানের পরে চিনা জওয়ানদের গানের তালে নাচেন ও’পারের মহিলা জওয়ানরা।

ভারতীয় সেনাকে খুশি করতে চিনা বাহিনী হিন্দি গান গাইলেও এর উল্টোটা কি কখনও হয়েছে?

৪ কোরের মুখপাত্র এবং দীর্ঘদিন তাওয়াং-এ কাটানো এক সেনাকর্তা— কেউই তেমনটা মনে করতে পারলেন না। সেনা মুখপাত্র নিউটন বলেন, ‘‘আমরা ১৫ অগস্টের সীমান্ত-বৈঠকে চিনাদের খুশি করতে অনেক অনুষ্ঠান করি। খানাপিনার আয়োজন রাখা হয়। কিন্তু চিনা গান গেয়ে শোনাতে পারিনি।’’

কিন্তু তাওয়াং সেক্টর বা সুবনসিরি সেক্টরে মোতায়েন সেনাকর্মীদের মতে কেবল আনন্দ অনুষ্ঠানে ভারতীয় বাহিনীকে খুশি করতেই নয়, ভারতের উপরে নজরদারির কাজেও এই হিন্দির দক্ষতাকে ভালই কাজে লাগাচ্ছে চিন। অরুণাচলে মোতায়েন সেনাকর্মীদের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হিন্দি। পাশাপাশি, অরুণাচলের বিভিন্ন উপজাতির মানুষও নিজেদের মধ্যে হিন্দিতেই পারস্পরিক যোগাযোগ রাখেন। তাই, সীমান্তের অপর পারেও দ্রুত হিন্দি শিখে নিয়েছে চিনা সৈন্যরা। তাতে সাধারণ মানুষ ও সেনা— উভয়ের বার্তাই বুঝতে সুবিধে। এ পারে পাঠিয়েছে হিন্দি জানা গুপ্তচরও।

নিউটনের মতে, ভাষাগত গঠনের দিক থেকে হিন্দি শেখাও বেশি সোজা। চিনা সেনারা অল্প কিছুদিন আয়ত্ত করেই তা শিখে নিচ্ছে। সেই সঙ্গে দেখছে বলিউডের ছবিও। কিন্তু সেনার অভিজ্ঞতা বলছে— চিনা ভাষা শেখার ল্যাঠা অনেক বেশি। আর চিনা সিনেমাও এ পারে তেমন আসে না। তাই চিনা খবর বোঝা চিনা খাবার রান্না করার মতো অত সোজা নয়। অবশ্য তাওয়াং সেক্টরের বাসিন্দা মন পা উপজাতির ভাষার সঙ্গে ও পারের তিব্বতি ভাষার মিল আছে।

নিউটনের কথায়, ‘‘চিনা খাবার যেমন আমাদের জনপ্রিয়, তেমনই আমাদের ভাষা ওঁদের জনপ্রিয় হলে ক্ষতি নেই। ভাষা ও সংস্কৃতির আদান-প্রদান চলুক, শুধু গুলি না চললেই হল। দু’পক্ষের মধ্যে ‘মহব্বত’-এর জয় হোক— সেটাই সকলের কাম্য।’’

MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy