ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বিশ্ব অর্থনীতির পক্ষে জোর ধাক্কা, সন্দেহ নেই। তবে ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের কাছে আশীর্বাদ হয়েই দেখা দিতে পারে ব্রেক্সিট।
এমনটাই মনে করছেন ভারত ও ব্রিটেনের শিক্ষাগত আদানপ্রদানের সঙ্গে যুক্ত অনেকে। গণভোটের রায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে আসার পক্ষে যাওয়ায় ব্রিটিশ পাউন্ডের দাম পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এবং তার জেরেই উপকৃত হতে পারেন ভারতীয় পড়ুয়ারা।
কী ভাবে আসবে সেই উপকার?
ফি-বছরই ভারত থেকে অনেকে উচ্চশিক্ষার জন্য ব্রিটেনে পাড়ি দেন। শিক্ষা উপদেষ্টা কৌশিক মিত্র বলছেন, কেমব্রিজ, অক্সফোর্ডের মতো বিশ্বের প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ব্রিটেনে। ফলে সেখানে পড়তে যাওয়ার চাহিদা দীর্ঘদিনের। কিন্তু ব্রিটেনে পড়াশোনা করা বিপুল খরচসাপেক্ষ। যাতায়াতের খরচও অনেক। তাই ব্রিটিশ পাউন্ডের দাম কমে গেলে আখেরে লাভই হবে এ দেশের ছাত্রছাত্রীদের। তুলনায় কম খরচে যাতায়াত সম্ভব হবে ব্রিটেনে।
তবে পরিসংখ্যান বলছে, কয়েক বছর ধরেই বিলেতমুখী ছাত্রধারায় ভাটার টান চলছে। একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১০-’১১ শিক্ষাবর্ষে ৩০ হাজার ৮৯০ ছাত্রছাত্রী উচ্চশিক্ষার জন্য ব্রিটেন গিয়েছিলেন। পরের বছর সংখ্যাটা হঠাৎ কমে হয় ২৪ হাজার ৩০। তার পরের প্রতিটি শিক্ষাবর্ষে ভারতীয়দের মধ্যে ব্রিটেনে পড়াশোনা করার চাহিদা কমেই চলেছে। ২০১২-’১৩ শিক্ষাবর্ষে ১৮ হাজার ৫২৫ জন, ২০১৩-’১৪ সালে ১৬ হাজার ৪৮০ জন এবং ২০১৪-’১৫ সালে ভারত থেকে ১৫ হাজার ৪৭০ জন পড়ুয়া ব্রিটেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছেন পঠনপাঠনের জন্য।
ব্রিটেনে পড়তে যাওয়ার স্রোতে এমন ভাটার টান কেন?
কৌশিকবাবু জানান, ব্রিটেনে পড়াশোনার পরে সেখানে চাকরি করার জন্য ভারতীয় পড়ুয়ারা দু’বছরের একটি পারমিট পেতে পারতেন। গত দু’বছর হল সেই বন্দোবস্ত তুলে দিয়েছে ব্রিটেন। সেই জন্য ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের ব্রিটেনে পঠনপাঠন চালানোর চাহিদা অনেকটাই কমে গিয়েছে। তা ছাড়া ব্রিটেনে পড়তে ইচ্ছুকদের একটা মোটা অঙ্কের টাকা গুনতে হয়। ভিসা পাওয়ার জন্যও পোহাতে হয় হাজার ঝক্কি। এই সব কারণেই ভারতীয়দের ওই দেশে পড়ার চাহিদা কমে গিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
কলকাতার গ্লোবাল রিচ সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর রবিলোচন সিংহ বলেন, ব্রিটেনের চাকরির বাজার ভারতীয় পড়ুয়াদের কখনওই তেমন সুযোগ দেয়নি। ভবিষ্যতেও দেবে কি না, সেই বিষয়ে সন্দেহ আছে। তিনি জানান, এখন ব্রিটেনে যে-সব আইনকানুন রয়েছে, তা অনেকাংশেই ভারতীয় পড়ুয়াদের ওখানে থেকে পড়াশোনা বা কাজ বা করার অনুকূল নয়। ভারত থেকে যে-সব পড়ুয়া ওখানে গিয়েছেন, তাঁদের সেখানে কাজ করার অনুমতিটুকুও কেড়ে নিয়েছে ব্রিটেন সরকার। উপযুক্ত সাম্মানিকও মেলে না।
ভারত ও ব্রিটেনের শিক্ষাজগতের মানুষজন অবশ্য মনে করছেন, এ বার পরিস্থিতি পাল্টালেও পাল্টাতে পারে। অনেকে বলছেন, ইইউ থেকে বেরিয়ে আসা বা ব্রেক্সিটের প্রক্রিয়া এখনও শুরুই হয়নি। সেটা শেষ হতে অন্তত দু’বছর লাগবে। ফলে ব্রেক্সিটের প্রভাব এ দেশের পড়ুয়াদের উপরে কতটা কী পড়বে, তা অনেকটাই অনুমান-নির্ভর। অন্য একটি সংস্থা আই-ইনিশিয়েট লার্নিংয়ের সিইও সুদেষ্ণা চট্টোপাধ্যায়ও এই বিষয়ে একমত। সুদেষ্ণার কথায়, ‘‘ব্রিটেন ইইউ থেকে বেরিয়ে আসার ফলে চাকরি যাওয়ার একটা আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠছে। সে-ক্ষেত্রে ওখানকার চাকরির বাজারে এ দেশের পড়ুয়াদের সমস্যা হতে পারে। কিন্তু পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে কোনও বিরূপ প্রভাব পড়বে না বলেই মনে হয়।’’
কতখানি প্রভাব পড়তে পারে কলকাতার পড়ুয়াদের উপরে?
কলকাতার ব্রিটিশ কাউন্সিলের তরফে এই প্রশ্নের কোনও জবাব মেলেনি। ই-মেল করা হলেও তার কোনও উত্তর আসেনি। তবে ব্রেক্সিটের পরিপ্রেক্ষিতে উঠে আসা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের একটা প্রভাব এ দেশের পড়ুয়াদের উপরে পড়তে পারে বলে মনে করছেন শিক্ষা-উপদেষ্টার পেশায় থাকা অনেকেই।
আশার একটা দিক অবশ্য তুলে ধরছেন রবিলোচন সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘ব্রিটেন ওই দু’বছরের ওয়ার্ক পারমিট তুলে নিলেও স্কটল্যান্ড তা টিকিয়ে রাখার পক্ষে সওয়াল করবে নিশ্চয়ই। সে-ক্ষেত্রে স্কটল্যান্ড এবং ইংল্যান্ড আবার টানবে ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy