Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Abhijit Vinayak Banerjee

Abhijit Banerjee: এই মুহূর্তে চরম কষ্টে রয়েছি আমরা, বলছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রথম ত্রৈমাসিকে ২০.১% লাফের পরে চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় তিন মাসেও ৮.৪% বৃদ্ধির মুখ দেখেছে দেশের অর্থনীতি।

অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়।

অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
আমদাবাদ শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:১৫
Share: Save:

দেশের মানুষ ভয়ঙ্কর কষ্টে আছেন। অর্থনীতি বিধ্বস্ত। কোভিড-হানার আগে আড়ে-বহরে তা যতটুকু ছিল, এমনকি সেখানেও তা ফিরতে পারেনি এখনও। পরিস্থিতি এতটাই সঙ্গিন যে, নিজেদের স্বপ্নের ‘ছোট্ট’ চৌহদ্দিকে ক্রমশ আরও ছোট করে আনতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। গুজরাতের আমদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের ‘ভার্চুয়াল’ সমাবেশে এই আশঙ্কার কথাই তুলে ধরলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়।

আমেরিকার প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় এমআইটি-র অধ্যাপক অভিজিৎ জানিয়েছেন, সম্প্রতি দিন দশেক পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে গিয়েছেন তিনি। কথা বলেছেন আমজনতার সঙ্গে। তা থেকেই তাঁর মনে হয়েছে এই চরম দুর্দশার কথা। নোবেলজয়ীর বক্তব্য, ‘‘এই মুহূর্তে চরম কষ্টে রয়েছি আমরা। ২০১৯ সালে (করোনা হানা দেওয়ার আগে) অর্থনীতি যেখানে দাঁড়িয়েছিল, এখন এমনকি তার থেকেও তা নীচে। কতখানি, তা নিশ্চিত ভাবে হয়তো এখনই জানি না। কিন্তু আমার ধারণা, অনেকখানি।’’ তিনি জানিয়েছেন, এ জন্য কাউকে দোষারোপ করা উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু গ্রাম বাংলায় ঘুরে সাধারণ মানুষের গল্প-গাছা শোনার সময়ে তাঁদের স্বপ্ন চুরমার হওয়ার এবং বহু ক্ষেত্রে বাধ্য হয়ে স্বপ্নের ছোট্ট গণ্ডিকে আরও ছোট করে আনার নির্মম বাস্তব ধরা পড়েছে তাঁর চোখে।

প্রথম ত্রৈমাসিকে ২০.১% লাফের পরে চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় তিন মাসেও (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৮.৪% বৃদ্ধির মুখ দেখেছে দেশের অর্থনীতি। কেন্দ্রের দাবি, এর দৌলতে বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির দেশগুলির মধ্যে দ্রুততম বৃদ্ধির শিরোপা ধরে রেখেছে ভারত। শুধু তা-ই নয়, ছ’মাসে এই বৃদ্ধির দৌলতে দেশের অর্থনীতির বহর করোনা-পূর্ববর্তী মাপকে পেরিয়ে গিয়েছে বলেও মোদী সরকারের দাবি। সব মিলিয়ে, উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে ভোটের মুখে যখন নরেন্দ্র মোদীর সরকার ও দল অর্থনীতি ফের মুখ তুলতে শুরু করেছে বলে প্রচারে নামতে প্রস্তুত, তখন অভিজিতের এই পর্যবেক্ষণ তাৎপর্যপূর্ণ।

জিডিপি বৃদ্ধির হার থেকে পরিকাঠামো কিংবা কল-কারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধি— কোভিডের ধাক্কা সামলে দেশের অর্থনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর ছাপ সর্বত্র স্পষ্ট বলে সম্প্রতি দাবি করতে শুরু করেছে বিভিন্ন সরকারি মহল। কিন্তু বিরোধী শিবির ও অর্থনীতিবিদদের একাংশ অবশ্য গোড়া থেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, প্রথম ত্রৈমাসিকে ২০.১% বৃদ্ধি এসেছিল আগের বছরের একই সময়ে ২৪.৪% সঙ্কোচনের সঙ্গে তুলনার ফলে।

দ্বিতীয় তিন মাসেও তুলনার ভিত আগের বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ৭.৪% চুপসে যাওয়া অর্থনীতি। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের অভিযোগ, ‘‘অর্থনীতির বহু ক্ষেত্র এখনও পঙ্গু এবং সাহায্যপ্রত্যাশী।’’ অনেকের মতে, দেশের অর্থনীতির ‘ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করার বিজ্ঞাপন’ এ দিন ফের ধাক্কা খেল নোবেলজয়ীর পর্যবেক্ষণে। যদিও পাল্টা প্রশ্ন উঠতে পারে, শেষমেশ গ্রাম বাংলার দৈন্যদশাও অভিজিতের বক্তব্যে উঠে এল কি না। যে রাজ্যে সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা তিনিই।

অর্থনীতির জটিল আলোচনার পাশাপাশি অবশ্য পড়ুয়াদের সঙ্গে হাল্কা গল্পেও মেতেছেন অভিজিৎ। শুনিয়েছেন, জেএনইউ থেকে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে গবেষণার জন্য পাড়ি দেওয়ার আগে কী ভাবে ছাত্র আন্দোলনে শামিল হওয়ার জন্য তিহাড় জেলে যেতে হয়েছিল তাঁকে। অনেকে ভয় দেখিয়েছিলেন এই বলে যে, শুধু ওই কারণে ভেস্তে যেতে পারে তাঁর আমেরিকা-যাত্রা।

পড়ুয়াদের বহু বার বলা খাঁটি কথাও এ দিন তিনি শুনিয়েছেন নতুন মোড়কে। বলেছেন, ‘‘বাড়ির চাপে নয়, কেরিয়ার বেছে নাও নিজের পছন্দ অনুযায়ী।’’ আর সেই প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দিয়েছেন, দুই প্রখ্যাত চিত্র পরিচালকের কথা। সত্যজিৎ রায় আর শ্যাম বেনেগল। অর্থনীতির স্নাতক হয়েও একটু অন্য রকম কেরিয়ার বেছে নিয়ে এই দুই ভদ্রলোক জীবনে নেহাত মন্দ করেননি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE