টিকে থাকার অদম্য বাসনা তাঁর গল্পের প্রতিটি চরিত্রের। প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াইয়ে নেমে হার মানার কথা কখনও ভাবে না তারা। যেমন ভাবেননি লেখিকা নিজেও। ৭৭ বছর বয়সি সেই কন্নড় কথাসাহিত্যিক, আইনজীবী ও সমাজকর্মী বানু মুশতাককে এ বার আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারে সম্মানিত করা হল। এই প্রথম কন্নড় ভাষার কোনও লেখিকা এই আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মান পেলেন। ছোটগল্প লিখে বুকার-জয়ের এটিই প্রথম নজির। অনুবাদক দীপা ভাস্তির সঙ্গে ৫০ হাজার পাউন্ড (৫৭ লক্ষ টাকা) মূল্যের পুরস্কারটি ভাগ করে নেবেন বানু।
১৯৯০ থেকে ২০২৩ সালের এই দীর্ঘ সময়সীমায় বানুর লেখা অসংখ্য গল্পগুলি থেকে ১২টি বেছে নেন অনুবাদক দীপা। সেই ১২টি গল্পের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয় ‘হার্ট ল্যাম্প’ নামে। পুরস্কার গ্রহণ করে বানু বলেন, “কোনও কাহিনিই যে তুচ্ছ নয়, সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতার বুননে গাঁথা এই গল্পগুলি সে কথাই মনে করিয়ে দিতে চায়।” তাঁর লেখা গল্প ‘হৃদয়ে গ্রহণ করার জন্য’ পাঠকদের কৃতজ্ঞতা জানান লেখিকা। বলেন, “বাইরের পৃথিবী চায় মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করতে। সাহিত্যই সম্ভবত একমাত্র স্থান, যেখানে কোনও রকম পারিপার্শ্বিক প্রভাব ছাড়াই মানুষ একে অপরের সঙ্গে একাত্ম হতে পারে।”
কর্নাটকের মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম বানুর। স্কুল জীবন শুরু হয়েছিল এক উর্দুভাষী ধর্মীয় স্কুলে। কিন্তু কয়েক বছর পরেই বাবা ভর্তি করে দেন সরকারি স্কুলে। সেখানে পঠনপাঠনের মাধ্যম ছিল কন্নড়। সেই ভাষাকেই পরে আপন করে নেন বানু। লেখালেখি শুরু করে দেন স্কুলজীবন থেকেই।
২০২২-এ বুকার সম্মান পেয়েছিল হিন্দি ঔপন্যাসিক গীতাঞ্জলি শ্রী-র লেখা ‘টুম্ব অব স্যান্ড’। তার পরে এ বছরে একটি কন্নড় বইয়ের এই খেতাবে খুশি ভারতীয় সাহিত্যিক মহল। অনেকেই বলছেন, ভারতীয় আঞ্চলিক ভাষার সাহিত্য বার বার আন্তর্জাতিক স্তরে সম্মানিত হওয়া আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে আঞ্চলিক সাহিত্যকে আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এই প্রথম বুকার জিতলেন কোনও ভারতীয় অনুবাদক। দীপা ভাস্তির কথায়, “আশা করি এই খেতাব জয়ের পরে কন্নড়-সহ বিভিন্ন দক্ষিণ ভারতীয় ভাষার সাহিত্যের পাঠ ও অনুবাদের কাজ আরও বাড়বে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)