রাজ্যের সংখ্যালঘু-প্রধান ও বাংলাদেশ সীমান্তে থাকা ‘অরক্ষিত ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে’ বসবাসকারী আদি বাসিন্দাদের নিজেদের সুরক্ষার জন্য অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হবে। গত মে মাসে এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অসম মন্ত্রিসভা। এ বার সেটি কার্যকর করা হল। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা ঘোষণা করলেন, এই লাইসেন্স পাওয়ার জন্য একটি অনলাইন পোর্টাল খোলা হয়েছে। সেখানে অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা যাবে।
রাজ্যের কিছু অংশে এই অস্ত্রের লাইসেন্স যাতে সহজেই পাওয়া যায়, তার জন্য এই ব্যবস্থা বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘যদি আমি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে থাকি অথবা দুই রাজ্যে সীমানাবর্তী এলাকায় বসবাস করি, অথবা এমন এক অরক্ষিত এবং সংবেদনশীল এলাকা থাকি, যেখানে আমার সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা কম অর্থাৎ অন্য সম্প্রদায় যদি ৯০-৯৫ শতাংশ থাকে, আর আমার সম্প্রদায়ের মানুষ যদি ৫ শতাংশ থাকে, তা হলে সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক এবং নানা কারণে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনার পরিবেশ তৈরি হতে পারে।’’
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘যদি এমন পরিস্থিতি হয়, তা হলে ছোট ছোট ঘটনা উত্তেজেনার আবহ তৈরি করতে পারে। সে ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালাতে পারে। ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিতে পারে। নানা কিছু ঘটতে পারে।’’ তিনি জানান, একটি থানায় ৬-১২ জন কনস্টেবল থাকেন। যদি কোনও উত্তেজনার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, জেলা সদর দফতর থেকে অতিরিক্ত বাহিনী আসতে ২-৩ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। আর ওই সময়ের মধ্যে অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে। তাই পুলিশ যত ক্ষণ না আসছে নিজেদের সুরক্ষা করা প্রয়োজন। যদি এটা অনেকে জেনে থাকেন যে, যাঁর বা যাঁদের উপর হামলার করতে যাচ্ছেন, তাঁদের কাছে সুরক্ষার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে, তা হলে তাঁরা হামলা চালানোর আগে দু’বার ভাববেন।
কারা অস্ত্রের লাইসেন্স পেতে আবেদন করতে পারবেন? সরকারের তরফে বলা হয়েছে যাঁরা ভূমিপুত্র তাঁরা পাবেন এই লাইসেন্স। আবেদনকারীদের বয়স অন্তত ২১ বছর হতে হবে। ‘অরক্ষিত, সংবেদনশীল এবং প্রত্যন্ত’ অঞ্চলের বাসিন্দা হতে হবে। আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি মামলা বা অপরাধের রেকর্ড আছে কি না, তা দেখা হবে। আবেদনকারীদের অবশ্যই ‘শারীরিক এবং মানসিক’ ভাবে সুস্থ হতে হবে। এ ছাড়াও, ২০১৬ সালের অস্ত্র আইন অনুযায়ী আবেদনকারীদের প্রশিক্ষণের শংসাপত্র থাকতে হবে। তবে কোন কোন এলাকাগুলি ‘অরক্ষিত এবং সংবেদনশীল’ বলা হচ্ছে সেগুলি আবেদন প্রক্রিয়ায় স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ নেই। আবেদনকারীদের পরিচয় স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, মে মাসে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত জানিয়েছিলেন, রাজ্যের ভূমিপুত্র ও জনজাতিরা নিজেদের জমিতেই ‘বাংলাদেশিদের’ আক্রমণ ও হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন। এমন আক্রমণ থেকে ভূমিপুত্ররা যাতে নিজেদের সুরক্ষিত করতে পারেন, তার জন্যই এই বিশেষ অস্ত্র প্রকল্পটি চালু করা হবে। ধুবুড়ি, নগাঁও, মরিগাঁও, বরপেটা, দক্ষিণ শালমারা এবং গোয়ালপাড়ার মতো জেলাগুলিতে প্রযোজ্য হবে বলেও তখন জানান তিনি।