Advertisement
E-Paper

লিপস্টিক-সানগ্লাসে মৃত মেয়েকে সাজান ইন্দ্রাণী

নিহত মেয়ের সাদা হয়ে যাওয়া ঠোঁটে নিজেই লিপস্টিক লাগিয়ে দিয়েছিলেন মা। গালে বুলিয়ে দেন ফেস পাউডার। নিজের সংগ্রহ থেকে বেছে একটি সানগ্লাসও পরিয়ে দেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৫৬
এই গাড়িতেই শিনাকে নিয়ে যাওয়া হয় জঙ্গলে। — নিজস্ব চিত্র।

এই গাড়িতেই শিনাকে নিয়ে যাওয়া হয় জঙ্গলে। — নিজস্ব চিত্র।

নিহত মেয়ের সাদা হয়ে যাওয়া ঠোঁটে নিজেই লিপস্টিক লাগিয়ে দিয়েছিলেন মা। গালে বুলিয়ে দেন ফেস পাউডার। নিজের সংগ্রহ থেকে বেছে একটি সানগ্লাসও পরিয়ে দেন।

শুধু ঠান্ডা মাথায় মেয়েকে খুন করা নয়। শিনা খুন হওয়ার অব্যবহিত পরের পর্বেও ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায় অভাবিত নিষ্ঠুর আচরণের পরিচয় দিয়েছিলেন বলে দাবি মুম্বই পুলিশের।

পুলিশের বক্তব্য, ২০১২-এর ২৪ এপ্রিল শিনাকে গাড়ির মধ্যে শ্বাসরোধ করে খুন করেন সঞ্জীব খন্না। শিনার পা’দুটো চেপে ধরে ছিলেন চালক শ্যাম রাই। ইন্দ্রাণীও গাড়িতেই ছিলেন। সেদিনই দেহটি সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। সেই উদ্দেশ্যে তাঁরা ইস্টার্ন এক্সপ্রেস হাইওয়ে ধরে এগোতেও শুরু করেছিলেন। কিন্তু মাঝপথে ভিখরোলি-মুলুন্জের কাছে পুলিশের নাকাবন্দি দেখে সিদ্ধান্ত বদলান। গাড়ি ঘুরিয়ে ফিরে আসেন ওরলির বাড়িতে। সারা রাত শিনার দেহ গাড়িতেই ব্যাগবন্দি হয়ে ছিল।

পরের দিন সকালে শিনাকে সাজিয়েগুছিয়ে সঞ্জীব ও ইন্দ্রাণীর মাঝখানে বসিয়ে রায়গড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই আগুনে পুড়িয়ে পুঁতে দেওয়া হয় দেহ। সেই অভিশপ্ত গাড়িটি মুম্বই পুলিশের হাতে এসেছে। ২০১২ সালেই গাড়িটি আরও দু’বার হাতবদল হয়ে যায়। নাসিকে তৃতীয় মালিকের কাছ থেকেই গাড়িটি উদ্ধার করেছে পুলিশ।

আবার দেখা। জেরার জন্য খার থানায় আনা হচ্ছে ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়কে।

কাল শনিবার বান্দ্রা আদালতে পেশ করা হবে ইন্দ্রাণী, সঞ্জীব এবং গাড়িচালক শ্যামকে। তার আগে আজ সকাল থেকে তিন জনকে ফের ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ দিনই প্রথম বার খার থানায় নিয়ে আসা হয়েছিল ইন্দ্রাণীর ছোট মেয়ে বিধিকে। বিধি সঞ্জীবেরও মেয়ে। তবে সঞ্জীবকে ছেড়ে মুম্বই যাওয়ার সময়ে এই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে যান ইন্দ্রাণী। পরে পিটার মুখোপাধ্যায় বিধিকে দত্তক নেন।

পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন বিধিকে প্রধানত শিনার সঙ্গে ইন্দ্রাণীর সম্পর্ক নিয়েই জেরা করা হয়েছে। বিধি যখন বাড়ি থাকতেন, সেই সময়ে শিনা এলে ইন্দ্রাণী কেমন ব্যবহার করতেন, তাঁদের মধ্যে ২০১২ সালের এপ্রিলের আগে বড়সড় ঝগড়া হয়েছিল কি না, জানতে চাওয়া হয়। পুলিশের অনুমান, শিনার সঙ্গে তাঁর ঝামেলা নিয়ে বিধির সঙ্গে আলোচনা করতেন ইন্দ্রাণী। সে আলোচনা ফেসবুক ও ই-মেলেও হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সে কারণে এ দিন বিধিকে তাঁর ব্যক্তিগত ল্যাপটপ সঙ্গে নিয়ে থানায় আসতে বলা হয়েছিল। সকালে পিটার যখন বিধিকে নিয়ে থানায় ঢোকেন তখন বিধির সঙ্গে ছিল সেই ল্যাপটপ। পরে রাত আটটায় বিধিকে ছেড়ে দেওয়া হয় থানা থেকে। পিটার বেরোন রাত সওয়া দশটায়।

বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত খার থানাতেই ছিলেন শিনার বাবা সিদ্ধার্থ দাস। শুক্রবার ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ কড়া পুলিশি ঘেরাটোপে তাঁকে বের করে শহরের অজানা কোনও এক আস্তানায় রাখা হয়। শুক্রবার আবার তাঁকে নিয়ে আসা হয় থানায়। কবে সিদ্ধার্থকে কলকাতায় ফিরতে দেওয়া হবে, তা পরিষ্কার করে পুলিশ বলতে চায়নি।

তদন্তে নেমে পুলিশ ইন্দ্রাণীর তিনটি পাসপোর্টের কথাও জানতে পেরেছে বলে খবর। তার মধ্যে একটি ভারতীয়, বাকি দু’টি ইংল্যান্ড ও আয়ার্ল্যান্ডের। নিয়ম অনুযায়ী কারও কাছে বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট থাকলে তার সঙ্গে অন্য কোনও দেশের বৈধ পাসপোর্ট থাকতে পারে না। ভারতীয় নাগরিকেরা কখনওই যুগ্ম নাগরিকত্ব পেতে পারেন না। প্রশ্ন উঠেছে, ইংল্যান্ড বা আয়ার্ল্যান্ডের পাসপোর্ট নেওয়ার আগে কি ইন্দ্রাণী ভারতীয় পাসপোর্ট জমা দিয়েছিলেন? সেই পাসপোর্টের বৈধতা নিয়ে এ বার পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। প্রশ্ন উঠেছে, যদি ইন্দ্রাণী ভারতীয় পাসপোর্ট জমা দিয়ে থাকেন তা হলে তাঁকে ভারতীয় ভিসা বা পিআইও (পার্সন অব ইন্ডিয়ান অরিজিন) সার্টিফিকেট নিয়ে থাকতে হবে। দেখা হচ্ছে, তাঁর বিদেশি পাসপোর্টের সঙ্গে সেই সব নথি ছিল কি না। এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘ইন্দ্রাণী যদি ভারতীয় পাসপোর্ট সারেন্ডার না করে থাকেন, তা হলে তাঁর বিরুদ্ধে পাসপোর্ট আইনেও মামলা হবে।’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনও পিটারকে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ও টাকাকড়ি নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন করা হয়েছে। প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য এ দিন সকালে পিটার সঙ্গে করে এক চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে নিয়ে এসেছিলেন। সকাল থেকে সেই ব্যক্তিই টাকাকড়ি সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন। ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয় মুম্বই পুলিশও। এ দিন দুপুরে তারাও এক চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে এনে হাজির করে। সূত্রের খবর, পিটারকে জেরা করে জানা গিয়েছে ইন্দ্রাণীর এমন অনেক অ্যাকাউন্ট বা ফিক্সড ডিপোজিট ছিল যা নাকি পিটার নিজেই জানতেন না।

পুলিশের একাংশের মতে, মুম্বইয়ের এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার নামও এই মামলায় উঠে আসছে। মনে করা হচ্ছে ইন্দ্রাণী সেই নেতার ঘনিষ্ঠ ছিলেন। অভিযোগ, ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে শিনার মৃত্যুর পরে রায়গড় থানার পুলিশ যখন মাটি খুঁড়ে একটি মৃতদেহ পেয়ে তদন্ত শুরু করেছিল সেই সময়ে এই নেতার নির্দেশেই নাকি সেই তদন্ত ধামাচাপা দেওয়া হয়েছিল। কে সেই নেতা, খোঁজ শুরু করেছে মুম্বই পুলিশ।

ছবি: পিটিআই।

abpnewsletters sheena bora murder mystery sheena bora murder indrani mukerjea killer sanjib khanna killer sheena bora make up indrani mukerjea make up dead body make up lipstick sunglass sheena bora dead body
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy