উমর মহম্মদ, শাহিন সইদ, মুজ়াম্মিল গনই, আদিল আহমেদ রাঠের, অহমেদ মহিউদ্দিন সইদ— পাঁচ জনই চিকিৎসক। পাঁচ জনই কাশ্মীর হয়ে ফরিদাবাদের বিস্ফোরক উদ্ধার থেকে দিল্লির লাল কেল্লা সংলগ্ন বিস্ফোরণের সঙ্গে কোনও না কোনও ভাবেই যুক্ত।
নিরক্ষর বা মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়া বা বেকার নয়— দিল্লির বিস্ফোরণের পিছনে ‘হোয়াইট কলার টেরর নেটওয়ার্ক’ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার অফিসারদের চিন্তায় ফেলেছে। নিরাপত্তা বাহিনীর অফিসারেরা বলছেন, সাম্প্রতিক অতীতে কোনও সন্ত্রাসবাদের ঘটনায় দু’একজন উচ্চশিক্ষিত জঙ্গির সন্ধান মিলেছে। কিন্তু একেবারে চিকিৎসকেরা মিলেই সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী তৈরি করে ফেলেছে, এমন উদাহরণ সাম্প্রতিক অতীতে দেখা যায়নি। ২০০৮-এ দিল্লিতে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের পিছনে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার পড়ুয়াদের নিয়ে তৈরি ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের সন্ধান মিলেছিল। কিন্তু সেখানেও এক সঙ্গে এত জন উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি জড়িত ছিল না। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক অফিসার বলেন, এ থেকেই স্পষ্ট কী ভাবে উচ্চশিক্ষিতদেরও মগজ ধোলাই করা হচ্ছে।
জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের প্রাক্তন ডিজি এস পি বৈদ্য আজ বলেছেন, ‘‘কাশ্মীরের যে কোনও তরুণের স্বপ্ন হল ডাক্তার হওয়ায়। ডাক্তার হওয়ার পরেও যদি কেউ চরমপন্থী হয়ে পড়ে, নিজের দেশের মানুষকে খুন করতে তৈরি হয়ে যায়, তা হলে কী পরিমাণে চরমপন্থার মগজধোলাই হচ্ছে, তা কল্পনা করা যায়। এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কী ভাবে এর মোকাবিলা করা যায়, তা দেখতে হবে। এই মগজধোলাই বা শিক্ষিতদের উগ্রপন্থায় উদ্বুদ্ধ করা ঠেকাতে পদক্ষেপ করতে হবে।’’ বৈদ্যের মতে, এই বিস্ফোরণ বা বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক মজুতের ষড়যন্ত্র এক দিনে হয়নি। বেশ কয়েক মাস ধরে চলেছে। জইশ-ই-মহম্মদের মডিউলকে সামনে রেখে আইএসআই পরিকল্পনা করেছে বলে মনে হচ্ছে। ভারতের মূল ভূখণ্ডে ২০১৪-র পর থেকে কোনও বড় মাপের হামলা হয়নি বলে পাক গুপ্তচর সংস্থা মরিয়া হয়ে উঠেছে।
ফরিদাবাদে বিস্ফোরক উদ্ধার থেকে দিল্লির বিস্ফোরণের তদন্তে মুজ়াম্মিল গনই-র সন্ধান মিলেছে। তিনি ফরিদাবাদের আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করতেন। এমবিবিএস ছাত্রদের পড়াতেন। তাকে গ্রেফতারের পরে ৩৫৮ কিলোগ্রাম অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, অ্যাসল্ট রাইফেল, পিস্তল, বোমা বানানোর যন্ত্রপাতি উদ্ধার হয়। এই সূত্র ধরেই ওই বিশ্ববিদ্যালয়েই কর্মরত ডাক্তার আদিলের সন্ধান মেলে। তার পরে আরও আড়াই হাজার কিলোগ্রাম বিস্ফোরক মেলে। লখনউ থেকে মুজ়াম্মিলের বান্ধবী ডাক্তার শাহিন সইদকে গ্রেফতার করা হয়। শাহিন ভারতে জইশ-এর মহিলা সংগঠন জামাত-ই-মোমিনাতের হয়ে কাজ করত বলে সন্দেহ। পাকিস্তানে মাসুদ আজ়হারের আত্মীয়া সদিয়ার সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। মুজ়াম্মিল ও আদিলের সন্ধান মিললেও আর এক ডাক্তার উমর মহম্মদকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। পরে তার গাড়িতেই লাল কেল্লার কাছে বিস্ফোরণ ঘটে। চিন থেকে ডাক্তারি পাশ করা মহিউদ্দিনকেও গ্রেফতার করা হয়।
গোয়েন্দারে বক্তব্য, এর আগে আমেরিকায় ৯/১১-র হামলায় বা জইশের বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী কাজে উচ্চশিক্ষিত বা নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করা জঙ্গিদের খোঁজ মিলেছে। মাওবাদী নেতাদের মধ্যেও অনেক উচ্চশিক্ষিত ছিলেন। কিন্তু শুধু ডাক্তারদের জঙ্গি গোষ্ঠীর দেখা মেলেনি।
চিকিৎসকদের মধ্যে জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে উদ্বিগ্ন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)। সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, যথাযথ তদন্তের পর যদি ওই ব্যক্তিরা দোষী প্রমাণিত হয়, তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)