Advertisement
E-Paper

যোগসূত্রে মিলিত গোটা বিশ্ব

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আফগানিস্তান। প্যালেস্তাইন থেকে ইজরায়েল। রাশিয়া থেকে আফ্রিকার ক্ষুদ্র দেশ বুরকিনা ফাসো। এক কথায়, গোটা বিশ্বকে ‘যোগ’ সূত্রে গেঁথে ভারতীয় বিদেশ নীতিতে রবিবার একটি মাইলফলক রচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৫ ২১:৫৩
যোগাভ্যাস। রবিবার ভোপালে  পিটিআইয়ের তোলা ছবি।

যোগাভ্যাস। রবিবার ভোপালে পিটিআইয়ের তোলা ছবি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আফগানিস্তান। প্যালেস্তাইন থেকে ইজরায়েল। রাশিয়া থেকে আফ্রিকার ক্ষুদ্র দেশ বুরকিনা ফাসো। এক কথায়, গোটা বিশ্বকে ‘যোগ’ সূত্রে গেঁথে ভারতীয় বিদেশ নীতিতে রবিবার একটি মাইলফলক রচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

১৫২টি দেশের প্রায় দু’শো জন কূটনৈতিক প্রতিনিধি রবিবার ভোরের রাজপথে একই আকাশের তলায় বসে আসন করলেন। পাশাপাশি ভারতের বাইরে ১৯১টি দেশে ভারতীয় দূতাবাসের উদ্যোগে এবং নেতৃত্বে উদ্‌যাপিত হল যোগ দিবস। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, পাঁচ হাজার বছরের পুরনো ভারতীয় ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে নিয়ে এসে নতুন করে আর্ন্তজাতিক স্তরে বিপণনকরীর কাজটি সফলভাবে এ দিন সারলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সঙ্গে অর্থ, অস্ত্র, দরকষাকষি ব্যতিরেকেই ভারতীয় যোগকে ‘সফ্‌ট পাওয়ার’ হিসাবে কাজে লাগিয়ে এক মেঘাচ্ছন্ন সকালে নয়াদিল্লি পৌঁছে গেল গোটা বিশ্বের কাছে।

সলতে পাকানো শুরু হয়েছিল মোদী ক্ষমতায় আসার পরই। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তাঁর প্রথম রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনের বক্তৃতাতেই আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উদ্‌যাপনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন মোদী। সে সময় তাঁর আনা প্রস্তাবে সমর্থন করেছিলেন ১৭৭টি দেশ। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘যোগ ইতিমধ্যেই গোটা বিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয়। কিন্তু তাতে ভারতীয়ত্বের তকমা দেওয়াটাও প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারের মধ্যে ছিল। এর ফলে গোটা বিশ্বের নতুন প্রজন্ম আবার যোগের উৎস সম্পর্কে নতুন করে অবগত হবেন। আগ্রহ বাড়বে ভারতের সমাজ এবং সংস্কৃতির উপর। আখেরে পুষ্ট হবে ভারতীয় বিদেশ নীতি, যার প্রভাব অর্থনীতি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে পড়তে বাধ্য।’’

এটা ঘটনা যে এ দিন নয়াদিল্লির রাজপথে বিশ্ব সম্মেলন দেখা গেল, রাষ্ট্রপুঞ্জের অধিবেশন ছাড়া শেষ কবে এমনটা দেখা গিয়েছে তা চট করে মনে করা যাচ্ছে না। প্রাক্তন কূটনীতিক রণেন সেন বলেন, ‘‘যোগকে নতুন করে জনপ্রিয় করার উদ্যোগ যথেষ্ট প্রশংসনীয়। চিনও এ ভাবে তাদের সফ্‌ট পাওয়ারকে গোটা বিশ্বে বিপণন করে চলে।’’ প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি বিভাগে গবেষণারত রোহন মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘দু’দেশের মধ্যে যে কোনও সরকারি দৌত্যকে আরও শক্তিশালী করে তাদের মধ্যে সাংস্কৃতিক যোগাযোগ। ভারত সম্পর্কে যদি অন্যান্য রাষ্ট্রের আকর্ষণ এবং জ্ঞান বাড়ে তাহলেও সুবিধা পাওয়া যায়।’’ বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, শুধুমাত্র আফ্রিকার সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক গড়তে অথবা পূবে তাকাও নীতিতে জোয়ার আনতেই যে এই যোগ-কূটনীতি কাজ করবে শুধু তাই-ই নয়। পাশাপাশি যে সব দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি যথেষ্ট চাপের মধ্যে রয়েছে এবং ভারতের সাধারণ ভাবে কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছে, সেখানেও এই যোগ-উৎসব কিছুটা বাড়তি অক্সিজেন এনে দিতে পারে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আফগানিস্তানের হিরাটে (যেখানে সালমা বাঁধ তৈরি করছে ভারত) এ দিন যোগ চর্চা হয়েছে । হিংসা আর আতঙ্কে মোড়া ওই অঞ্চলে এই ঘটনা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক বলেই মনে করা হচ্ছে। সেখানে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত অমর সিংহের বক্তব্য, যোগের এই ‘বিশ্বায়নের’ ফলে বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা সহজ হয়ে উঠবে।

আফগানিস্তানে শান্তি ফেরানো নিয়ে সবচেয়ে উদ্বিগ্ন যে দেশ, সেই আমেরিকাও এ দিন হাজির রাজপথের যোগ উৎসবে। নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রিচার্ড বর্মার শরীর পঞ্চাশের কাছে পৌঁছেও মেদহীন, ছিপছিপে। রাজপথে পৌঁছলেন আয়ূষ মন্ত্রকের দেওয়া যোগ দিবসের লোগোওয়ালা সাদা টি শার্ট এবং কালো ট্রাক প্যান্ট পরে। যে ভাবে অবলীলায় সারলেন ৩৫টি যোগাসন, দেখেই বোঝা গেল এতে অভ্যস্ত তিনি। বললেন, ‘‘দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা। যোগাসন আমার কাছে কঠিন কিছু নয়। এর ফলে টানটান হয়ে থাকা স্নায়ু অনেকটাই আরাম পায়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এই ঐতিহ্যের কোনও তুলনা হয় না। শরীর এবং মন— এই দুইয়ের শান্তি এবং ভারসাম্যের জন্য যোগ জরুরি। মার্কিন দূতাবাসে এটি খুবই জনপ্রিয়।’’ রিচার্ডের মতনই যোগব্যায়ামে একই রকম স্বচ্ছন্দ আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত আব্দালি। চার জন সঙ্গীকে নিয়ে এ দিন এসেছিলেন রাজপথে। জানাচ্ছেন, ‘‘আমাদের শারীরিক ব্যায়ামের প্রয়োজন রয়েছে। যোগের থেকে ভাল ব্যায়াম আর হয় না। আমি তো নিয়মিত যোগব্যায়াম করি।’’ তবে সব দেশের কূটনৈতিক প্রতিনিধিই যে যোগাসনে দক্ষ, অথবা ঠিকঠাক হোমওয়ার্ক সেরে এসেছেন— বিষয়টা কিন্তু এমনটাও নয়। যেমন প্যালেস্তাইনের দূতাবাস কর্তা এইচ এইচ হামজা। হিমসিম খেলেন অর্ধচক্রাসন অথবা ত্রিকোণাসন করতে গিয়ে। দূতাবাস সূত্রের খবর, যোগ নিয়ে ভারত তথা গোটা বিশ্বে একটা নতুন করে হৈ-চৈ পড়ে যাওয়ায় সদ্য বিষয়টিতে মনোনিবেশ করেছেন তিনি! আবার বুরকিনা ফাসোর রাষ্ট্রদূত ইদ্রিস জানাচ্ছেন, তিনি গত ২৭ বছর যোগাভ্যাস করছেন! তাঁর নিজের দেশে যোগ-কেন্দ্রও খুলেছেন। ইজরায়েল দূতাবাসের মুখপাত্র হোরসান্দি জানালেন, তেল আভিভেও যোগ দিবস সাড়া ফেলে দিয়েছে। প্রায় বিশ হাজার মানুষ সেখানে রবিবার যোগাসন করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ইজরায়েলবাসীরা যোগ খুবই পছন্দ করেন। তাঁরা ভারতে আসতে চান যোগচর্চার জন্য।’’

শুধু রাজধানীই নয়। বিভিন্ন দেশের ভারতীয় দূতাবাসের উদ্যোগে এ দিন গোটা বিশ্বই যেন যোগসূত্রে জড়িয়েছেন। শুধু আমেরিকা বা ইউরোপই নয় (যেখানে যোগ-সংস্কৃতি যথেষ্ট জনপ্রিয়) আশিয়ানভুক্ত রাষ্ট্রগুলিতেও উন্মাদনা চোখে পড়ার মত বলেই জানাচ্ছেন বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা। এ দিন ভারতীয় সময় ভোর ৫টায় সাড়ে সাত হাজারেরও বেশি মানুষ জড়ো হন ব্যাংককের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁদের বিনামূল্যে যোগাসন, টি-শার্ট, কিছু খাদ্য এবং এনার্জি ড্রিঙ্ক দেওয়া হয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে। তাইল্যান্ডে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন সংলার কথায়, ‘‘গোটা অনুষ্ঠানই দুর্দান্ত হয়েছে। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উৎসাহীরা যোগ দিয়েছেন।’’ সে দেশের পর্যটন এবং ক্রীড়ামন্ত্রী কোবকার্ন ওয়াত্তানাভ্রাঙ্গুল ছিলেন অনুষ্ঠানের মুখ্য অতিথি। নরেন্দ্র মোদীর পাঠানো বার্তা অনুষ্ঠানের গোড়ায় পড়া হয়েছে। ব্যাঙ্ককের পাশাপাশি একই ভাবে যোগ অনুষ্ঠান নিয়ে মগ্ন থেকেছে ফুকেট এবং পাটায়া, ভিয়েতনামের হ্যানয়, হো চি মিন সিটি, জাপানের টোকিও।

agni roy international yoga day indian foreign policy milestone Narendra Modi burkina fasso russia yoga day celebrated 21st june yoga day নরেন্দ্র মোদী Yoga Day Celebration
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy