Advertisement
১০ নভেম্বর ২০২৪

রেলের কন্ট্রোল রুম দখলে নিল চিতাবাঘ

প্রথমে রেলকর্মীদের বিরাশি সিক্কার থাপ্পড়। তার পর, কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুমের ‘কন্ট্রোল’ নিজের হাতে, থুড়ি থাবায় নিয়ে নিল সে! চিতাবাঘের এমন জঙ্গি কাণ্ডকারখানায় আতঙ্ক ছড়াল উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের সদর দফতরে। প্রায় পাঁচ ঘণ্টায় চেষ্টায় চিতাবাঘকে ঘুম পাড়িয়ে কাবু করেন বনকর্মীরা।

ঘুম পাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে চিতাবাঘকে। (ইনসেটে) জখম আরপিএফ ইনস্পেক্টর। উজ্জ্বল দেবের তোলা ছবি।

ঘুম পাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে চিতাবাঘকে। (ইনসেটে) জখম আরপিএফ ইনস্পেক্টর। উজ্জ্বল দেবের তোলা ছবি।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:১৬
Share: Save:

প্রথমে রেলকর্মীদের বিরাশি সিক্কার থাপ্পড়। তার পর, কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুমের ‘কন্ট্রোল’ নিজের হাতে, থুড়ি থাবায় নিয়ে নিল সে! চিতাবাঘের এমন জঙ্গি কাণ্ডকারখানায় আতঙ্ক ছড়াল উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের সদর দফতরে। প্রায় পাঁচ ঘণ্টায় চেষ্টায় চিতাবাঘকে ঘুম পাড়িয়ে কাবু করেন বনকর্মীরা।

গুয়াহাটির মালিগাঁও এলাকায় পাহাড়ের কোলেই উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের সদর দফতর। কামাখ্যার উল্টোদিকে থাকা পাণ্ডু ও মালিগাঁও এলাকায় চিতাবাঘের বিচরণ নতুন ঘটনা নয়। আগেও এই এলাকায় অনেক মানুষ চিতাবাঘের আক্রমণে জখম হয়েছেন। কিন্তু উঁচু পাঁচিল ঘেরা রেলের সদর দফতরে এই ভাবে বাঘ ঢুকে পড়ার ঘটনা বেনজির।

আজ ভোরে রেলকর্মীরা সিসি ক্যামেরার রেকর্ডিং চালিয়ে দেখেন দফতর চত্বরে ঘুরছে বিরাটাকৃতি একটি চিতাবাঘ। খবর ছড়িয়ে পড়তেই আশপাশের মানুষ দফতরের বাইরে ‘বাঘ দেখতে’ ভিড় জমান। ক্যামেরার চোখে ধরা পড়া চিতাবাঘকে খুঁজে বের করতে আসরে নামেন আরপিএফ ও রেলকর্মীরা। গোটা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখপাত্র নৃপেন্দ্র ভট্টাচার্য বাঘে-মানুষে চোরপুলিশ খেলার গল্প শুনিয়েছেন।

তাঁর কথায়, প্রথমে দফতরের ভিতরে থাকা স্টেট ব্যাঙ্ক শাখার সিঁড়িতে বসে থাকা অবস্থায় চিতাবাঘটির দর্শন মেলে। সকাল ৯টা নাগাদ কর্মীদের আনাগোনা ও গাড়ি চলাচল শুরু হতেই গোলমালে বিরক্ত চিতাবাঘ এক লাফে দফতরের ভিতরে চলে আসে। সদর দফতরের বারান্দা বরাবর আসতে থাকে সে। চিতাবাঘের সামনে পড়েন আরপিএফ ইনস্পেক্টর টিংকু আলি। তাঁর মুখে থাবার আঘাত করে সে। চোখ বাঁচলেও কান ও মাংস উপড়ে আসে। রক্তাক্ত ওই জওয়ানকে কোনও মতে বের করে আনা হয়।

মানুষের দৌড়োদৌড়ি, চেঁচামেচিতে চিতাবাঘও ঘাবড়ে যায়। আরও দুই রেলকর্মীকে জখম করে বাঘটি বারান্দা বরাবর দৌড়তে থাকে। নৃপেন্দ্রবাবু জানান, সামনেই ছিল ‘সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুম’-এর দরজা। ওই ঘর থেকে রেলের সমস্ত গতিবিধিতে নজর রাখা হয় বলে ২৪ ঘণ্টাই সেখানে অনেক কর্মী কাজ করেন। প্রবেশপথ দিবারাত্র খোলা থাকে। দফতরের অন্য সব ঘরের কর্মীরা ভয়ে দরজা বন্ধ করলেও, কন্ট্রোল রুমের দরজা খোলাই ছিল। দরজা খোলা পেয়েই চিতাবাঘটি সেখানে ঢুকে পড়ে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ভিতরের কর্মীরা। নৃপেন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘ঘর থেকে বেরোবার একটাই দরজা। কপাল ভাল, কর্মীদের আক্রমণ না করে চিতাবাঘটি কন্ট্রোল রুমের ভিতরের টিফিন রুমে ঢুকে পড়ে। ১২ ফুট লম্বা ও ৬ ফুট চওড়া ওই ঘরে চিতাবাঘ ঢুকে পড়তেই কমার্শিয়াল সুপারভাইজার শুভঙ্কর রায় বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে ছিটকিনি টেনে দেন। কিন্তু ক্রুদ্ধ চিতাবাঘ সজোরে দরজায় ধাক্কা দিতে থাকে। প্লাইউডের দরজায় পলকা ছিটকিনি যে চিতাবাঘকে আটকে রাখতে পারবে না, তা বুঝেই রেলকর্মীরা প্রথমে দরজার বাইরে দুটি তালা ঝুলিয়ে দেন। তার পর বড় লোহার আলমারি টেনে এনে দরজার বাইরে দাঁড় করিয়ে দেন তাঁরা।

খবর পাওয়ার প্রায় ঘণ্টা দেড়েক পরে গুয়াহাটি বন্যপ্রাণ, অভয়ারণ্য ও চিড়িয়াখানা ডিভিশনের কর্মী ও চিকিৎসকরা যৌথভাবে চিতাবাঘ ধরতে আসেন। কিন্তু জনতার অতি উৎসাহে কাজে সমস্যা হচ্ছিল। বনকর্মীরা দীর্ঘ চেষ্টার পরে জানালা দিয়ে চিতাবাঘটিকে লক্ষ্য করে ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়ে। বেলা পৌনে দু’টো নাগাদ অবসন্ন হয়ে পড়া চিতাবাঘটিকে বের করে গাড়িতে তোলা হয়। আপাতত চিড়িয়াখানায় তার চিকিৎসা চলছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE