ভোটের আগে বলেছিলেন, ক্ষমতায় এলে ১০০ দিনের মধ্যে ফেরাবেন। আজ তাঁর সেনাপতি ঘোষণা করলেন, ভবিষ্যতে যাতে না যায়, সেই ব্যবস্থা করবেন। কড়া কানুন বানাবেন তার জন্য। ন’মাসেই মোদী সরকারের সুর বদলে গেল কালো টাকা নিয়ে।
নরেন্দ্র মোদীর মুখরক্ষায় এ বার কালো টাকা নিয়ে নতুন আইন করার কথা ঘোষণা করল কেন্দ্র। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানিয়েছেন, সংসদের চলতি অধিবেশনেই তার জন্য বিল আনা হবে। সরকারের কাছে এটা স্পষ্ট, বর্তমান আইনে বিদেশে গচ্ছিত কালো টাকা ফেরত আনা বেশ কঠিন। এবং সেই কাজে সরকার যে মোটেই তেমন এগোতে পারেনি, জেটলি কি পরোক্ষে সেটাই কবুল করে নিলেন? প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা।
সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, ভবিষ্যতে যাতে আর কালো টাকা বিদেশে না যায় তার জন্য কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার পথে হাঁটতে চাইছেন মোদী। আজ বাজেট বক্তৃতায় জেটলি জানিয়েছেন, “কালো টাকা দেশের অর্থনীতি ও সমাজের জন্য একটি বড় সমস্যা। যথাযথ আইন করে কালো টাকার লেনদেন রোখা না গেলে দারিদ্র ও অসাম্য কোনও ভাবেই দূর করা সম্ভব হবে না। তাই বাজেট অধিবেশনেই কালো টাকা রুখতে একটি বিল নিয়ে আসা হবে।”
সরকারের আপাতত লক্ষ্য, চলতি অধিবেশনেই ওই বিলটি পাশ করে আইনে পরিণত করা। যাতে বিদেশে কালো টাকা পাচার বন্ধ করা যায়। একই সঙ্গে দেশীয় অর্থনীতিতে কালো টাকা রুখতে বেনামী লেনদেন প্রতিরোধেও আলাদা আইন তৈরি করবে কেন্দ্র। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর এই আইনের প্রথম নিশানা হবে আবাসন নির্মাণ শিল্প। কারণ এই শিল্পে বিপুল কালো টাকার লেনদেন হয় বর্তমানে। এর পাশাপাশি, নগদ লেনদেন কমাতে আরও বেশি করে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের উপর জোর দিয়েছেন জেটলি। প্রয়োজনে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনে বাড়তি ছাড় দেওয়ার কথাও ভাবছে অর্থ মন্ত্রক। জেটলি জানিয়েছেন, এক লক্ষ টাকার বেশি মূল্যের বেচা-কেনার ক্ষেত্রে প্যান নম্বরের উল্লেখ আবশ্যক হবে এ বার থেকে॥
কী থাকছে সেই নতুন বিলে?
(১) বিদেশে হওয়া আয় ও সম্পত্তির উপরে কর ফাঁকি দিলে ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড হবে। কোনও ‘সেটলমেন্ট কমিশন’-এর কাছেই আর্জি জানাতে পারবেন না অভিযুক্ত। তিনি যে পরিমাণ আয় বা সম্পত্তি গোপন করেছেন তার ৩ গুণ জরিমানা দিতে হবে। (২) আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে বা রিটার্নে বিদেশে থাকা সম্পত্তি নিয়ে অসম্পূর্ণ তথ্য দিলে ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ড হবে। (৩) বিদেশে অঘোষিত কোনও সম্পত্তি থেকে যে কোনও ধরনের আয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ হারে কর নেবে সরকার। এ ক্ষেত্রে কোনও রকম ছাড় দেওয়া হবে না। (৪) বিদেশে থাকা সম্পত্তি থেকে কোনও আয় না হলেও, সেই ব্যক্তিকে অবশ্যই রিটার্ন জমা দিতে হবে। (৫) কোনও ব্যক্তি, ব্যাঙ্ক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান উপরে বলা চারটি নিয়মের কোনও একটি ভাঙলে আইনি ব্যবস্থা ও জরিমানার মুখে পড়তে হবে। (৬) বিদেশি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট থাকলে রিটার্নে অবশ্যই তা উল্লেখ করতে হবে। (৭) বিদেশে কোনও আয় বা সম্পত্তি সংক্রান্ত কর ফাঁকি দিলে তা আর্থিক নয়ছয় প্রতিরোধ আইন (২০০২)-এর আওতায় আসবে। এতে তদন্তকারী সংস্থা বিদেশে থাকা ওই হিসেব-বহির্ভূত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবে। (৮) বিদেশে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে সমস্যা হলে আর্থিক নয়ছয় প্রতিরোধ আইন (২০০২)-এ এ দেশে সমমূল্যের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে পারবে তদন্তকারী সংস্থা।
কালো টাকার ব্যবহার রুখতে ফেমা আইনেও সংশোধনী আনবে সরকার। এই সব করেও কি কালো টাকা আনা নিয়ে প্রতিশ্রুতি পূরণের চাপ থেকে বেরোতে পারবেন মোদী? বিরোধী নেতা-মন্ত্রীদের বিবৃতিতে শুধু নয়, আম-আদমির আলোচনাতেও কিন্তু উঠে আসছে সংশয়। কারণ, আইন বানালেই অপরাধ বন্ধ হয় না। আইনের যথাযথ ও কঠোর প্রয়োগ ঢের বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নয়তো কানুন ফস্কা গেরো হয়েই থেকে যায়। তা ছাড়া প্রয়োগ তো পরের কথা, আইন করার আগে বিলের ধারাগুলি নিয়ে সরকার ও বিরোধী পক্ষ সহজেই একমত হবে, এমনটা বলা যাচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy