Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

জয়ে গুরুকে ছুঁলেন জয়া, উদ্বেল চেন্নাই

পয়েজ গার্ডেনে আম্মার প্রাসাদোপম বাড়িটার সামনে বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মাঝবয়সি মহিলা, এমনকী বয়স্কাদের উদ্দাম নাচ। ঝাঁপর ঝাঁপর বেজে চলেছে নানা দক্ষিণী তালবাদ্য। আজ এই নাচ বোধহয় চলবে রাতভর। আর চলবে নাই বা কেন?

নেত্রীর ছবি নিয়ে উল্লাস সমর্থকদের। বৃহস্পতিবার চেন্নাইয়ে। ছবি: এএফপি

নেত্রীর ছবি নিয়ে উল্লাস সমর্থকদের। বৃহস্পতিবার চেন্নাইয়ে। ছবি: এএফপি

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০২:৫৭
Share: Save:

পয়েজ গার্ডেনে আম্মার প্রাসাদোপম বাড়িটার সামনে বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মাঝবয়সি মহিলা, এমনকী বয়স্কাদের উদ্দাম নাচ। ঝাঁপর ঝাঁপর বেজে চলেছে নানা দক্ষিণী তালবাদ্য। আজ এই নাচ বোধহয় চলবে রাতভর।

আর চলবে নাই বা কেন?

বত্রিশ বছরের রাজনৈতিক ঐতিহ্যকে গুঁড়িয়ে, গুরু এমজিআর-এর দৃষ্টান্তের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে আজ যে ইতিহাস গড়লেন আম্মা! কঠিন লড়াইয়ের পর তামিলনাড়ুতে টানা দ্বিতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হিসাবেই তাঁকে আজ বেছে নিল রাজ্যের মানুষ। তামিলনাড়ুর ঐতিহ্য প্রতি পাঁচ বছরে সরকার বদলানো। একমাত্র এডিএমকে-র স্রষ্টা এম জি আর
ছাড়া সাম্প্রতিক অতীতে কেউ পারেননি পর পর দু’বার জিততে। অভিভূত জয়ললিতা আজ তাই বলেছেন, ‘‘মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাবার জন্য আমার অভিধানে কোনও শব্দই যথেষ্ট নয়।
তামিলনাড়ুর মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়া ছাড়া আমার জীবনের দ্বিতীয় কোনও উদ্দেশ্য নেই।’’

সর্বদাই যা হয়, এই ঐতিহাসিক জয়ের পর বাতাসে ভাসছে নানা রাজনৈতিক তত্ত্ব। আর তার মধ্যেই দেড় সপ্তাহ আগে কাঞ্চিপুরমের ভারানভাসি গ্রামে এডিএমকে-র জনসভায় যোগ দিতে আসা একটি বিশেষ মুখও যেন ভেসে উঠছে। চেন্নাই-এর নিকটবর্তী এলাকা থেকে বেঙ্গালুরু হাইওয়ের আড়াই ঘণ্টা পথ পাড়ি দিয়ে সে দিন এসেছিলেন সি বৈদ্যনাথন। নিজের একটি গাড়ি কিনে চালিয়ে দিন গুজরান করেন। ডিসেম্বরে বানভাসি হতে হয়েছিল বৈদ্যনাথনকে। বলেছিলেন, ‘‘শুধু কাঞ্চিপুরম নয়, এখনও পর্যন্ত আম্মা যেখানে জনসভা করেছেন, তার অধিকাংশেই থাকার চেষ্টা করছি।’’ চপারের সঙ্গে গাড়িতে সময়ের পাল্লা দেওয়া যায় না বলে সব ক’টিতে যে যেতে পারেননি, সে আফসোস ফুটে উঠেছিল রোদে পোড়া মুখে।

কেন অসীম আনুগত্য?

কিছুটা অবশ্যই ব্যাখ্যাহীন আবেগ, যা যুক্তিতর্কের ধার ধারে না। এবং এটা জয়ললিতার ভোট ব্যাঙ্কের সম্পদও বটে। বাকিটার মধ্যে অবশ্য যুক্তি ছিল। বৈদ্যনাথন সে দিন বলেছিলেন, ‘‘উনি তো স্রেফ নেতা নন, আমাদের মা। বন্যার জলে প্রায় কুড়ি দিন ডুবে ছিল আমার গাড়ি। সপরিবার দোতলা বাড়ির ছাদে কাটিয়েছি। নিয়মিত খাবার, ত্রাণ পাঠিয়ে গিয়েছে রাজ্য সরকার। পরে টাকাও দিয়েছে। আম্মা বলেছেন, ভোটে জিতলে ক্ষতিগ্রস্তদের রেশন কার্ড পিছু আরও পাঁচ হাজার করে দেওয়া হবে।’’

এটা ঘটনা যে, বিনামূল্যে ল্যাপটপ থেকে শুরু করে সাইকেল বা সেলাই মেশিনের মতো উপহারের বিরাট একটি তালিকা শাড়ির খুঁটে বেঁধে ঘুরেছিলেন জয়ললিতা, যা শেষ পর্যন্ত মানুষের কাছে বিপণন করতে পেরেছেন তিনি। অবশ্য এই ফেরির চেষ্টা ডিএমকে শিবির থেকেও করা হয়েছে, কিন্তু জয়ার মতো কুশলী ভাবে তা করে উঠতে পারেননি বৃদ্ধ করুণানিধি। তাঁর পরিবারের অন্তর্কলহ ডিএমকে নেতৃত্বকে দুর্বল করেছে কি না, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএমকে-র এক বড় নেতা তথা অন্যতম মুখপাত্রের কথায়, ‘‘কলাইনারের প্রচার ভ্যানে ওঁর বড় ছেলে আলাগিরিকে কখনও দেখেছেন? অন্য ছেলে স্ট্যালিন তো লড়েছেন মূলত নিজের জন্য, ভবিষ্যৎ মুখ্যমন্ত্রিত্বের কথা মাথায় রেখে। শুধুমাত্র কন্যা কানিমোঝিই বৃদ্ধ পিতাকে যতটা সম্ভব সাহায্য করে গিয়েছেন।’’ ডিএমকে-র একটা অংশের আবার উল্টো মত। তাঁদের বক্তব্য, ৯২ বছরের কলাইনারের নিজেরই উচিত ছিল মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ার অবকাশ না-রেখে দ্বিতীয় প্রজন্মের হাতে ব্যাটন তুলে দেওয়া। তা হলে অনেক বেশি গড়গড়িয়ে চলত ডিএমকে-র ভোট অভিযান। বিভিন্ন ভাবে চাপে থাকা জয়ললিতাকে হারানো কঠিন কিছু ছিল না এ বারের ভোটে।

এটা ঠিকই যে ভোট শতাংশের হিসাবে জয়ললিতার আজকের জয়কে বিরাট বলা চলে না কোনও মতেই। আবার এটাও ঠিক যে এ বারের লড়াই যে কাঁটার লড়াই, তা জানতেন দু’পক্ষই। পাঁচ বছরের শাসনকালের ভার, দুর্নীতির দীর্ঘমেয়াদি অভিযোগ, সরকারি মদতে মদের দোকানের প্রসার নিয়ে রাজ্যজুড়ে ক্ষোভ— ক্ষেত্র প্রস্তুতই ছিল ডিএমকে-র জন্য। পাশাপাশি ছোট তামিল দলগুলির একলা লড়াই করার বিষয়টিও বড় ফ্যাক্টর হয়ে দেখা দিয়েছে এই ভোটে। তারা ‘পিপলস ওয়েলফেয়ার ফ্রন্ট’ গড়ে নিজেদের ঝুলিতে প্রায় কিছুই তুলতে পারেনি ঠিকই। কিন্তু শতকরা হিসাবে জয়ললিতা-বিরোধী ভোটে ভাগ বসিয়েছে। এই বিষয়টি ফিরে আসতে যথেষ্ট সুবিধা করে দিয়েছে জয়ললিতার। এ ছাড়া করুনানিধি পরিবারের ভিতরকার মান-অভিমান, অথর্বতার কারণে কলাইনারের প্রতিটি নির্বাচনী কেন্দ্রে না-পৌঁছতে পারা, পাল্টা জয়ললিতার অক্লান্ত চপার সফর এবং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নিজস্ব ভোট ব্যাঙ্কের আগমার্কা আনুগত্যকে ধরে রাখাটাই জয়ললিতাকে ইতিহাস গড়তে সাহায্য করল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

state assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE