ছবি: পিটিআই
সড়ক থেকে সিংহাসনে! ছিলেন আম্মা সরকারের সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী। হয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী! এডাপ্পাড়ি কে পালানিসামি।
আম্মা এবং চিন্নাম্মা— দু’জনের প্রতিই সমান আনুগত্য, তিন দশক ধরে নিজেকে আড়ালে রেখে দলের কাজ করে যাওয়া, বিতর্ক থেকে দূরে থেকে নেতা-কর্মীদের আস্থাভাজন হওয়ার ক্ষমতা। তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক শিবির বলছে, এত দিনে এই সব কিছুর মিলিত পুরস্কার পেলেন সালেম জেলার নেডুঙ্গুলাম এলাকার প্রাক্তন বাসিন্দা।
ইরোড-এর বাসবী কলেজে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে পড়তেই রাজনীতির নেশা মাথায় চাপে। ১৯৭৪ সালের গোড়ায় এডিএমকে-তে যোগ দেন সাধারণ সদস্য হিসেবে। ১৯৮৭ সালে এমজিআর-এর মৃত্যুর পর দল যখন ভাঙল, পালানি তখন এমজিআর-এর স্ত্রী জানকীর দিকে না গিয়ে থেকে যান জয়ললিতার পাশে। আনুগত্যের পুরস্কারও জোটে হাতেনাতে। ১৯৯০ সালে এডিএমকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পর পালানিকে সালেম জেলায় দলের যুগ্ম সম্পাদক করে দেওয়া হয়। চার বার (১৯৮৯, ১৯৯১, ২০১১ এবং ২০১৬ সালে) এডাপ্পাড়ি থেকে দাঁড়িয়ে জিতেছেন পালানিসামি। দু’বার লোকসভা কেন্দ্রে দাঁড়িয়েছিলেন। পরাজিত হন। তাতে অবশ্য রাজনৈতিক ভাবে কোনও ধাক্কা খেতে হয়নি পালানিসামিকে।
জ্যোতিষশাস্ত্রে প্রবল বিশ্বাস পালানির। তিরিশ বছর ধরে জয়ললিতার ছায়াসঙ্গী থেকে নিঃশব্দে নেত্রীকে সমর্থন জুগিয়ে গিয়েছেন। পাশাপাশি গত পনেরো বছরে চিনাম্মারও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। নিজের রাজনৈতিক উত্থানের জন্য আলাদা করে কোনও চেষ্টা না করেই আম্মা এবং চিন্নাম্মার পরিবারের জন্য যাবতীয় কাজ করে গিয়েছেন সাধারণ কৃষক পরিবার থেকে উঠে আসা এই নেতা। তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, ২০১১ সালে যখন শশিকলা এবং তাঁর স্বামীকে দল থেকে বহিষ্কার করে দেন আম্মা, তখনও তাঁর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছিলেন পালানিসামি। চিনাম্মার ভাইয়ের জামাই আর পি রাভানান্দের সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। তাৎপর্যপূর্ণ হল, এগুলো যে খুব গোপন ছিল তা-ও নয়। অথচ তার জন্য কোনও ‘শাস্তি’ আম্মার কাছ থেকে পেতে হয়নি তাঁকে। বরং এই সময়ে জয়ার মন্ত্রিসভায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাই নিয়েছেন পালানিসামি।
জয়ললিতা তখন তাঁর এক সময়ের বিশ্বস্ত নেতা, প্রাক্তন বিদ্যুৎমন্ত্রী নাথাম বিশ্বনাথনের উপর থেকে ক্রমশ আস্থা হারাচ্ছিলেন। এডিএমকে শীর্ষ নেতৃত্বের অভিযোগ, বিশ্বনাথন কেবলই ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খেতে চাইছিলেন। অতএব তাঁকে সরিয়ে আম্মার আরও কাছে চলে আসেন পালানিসামি। তিনি না পনীরসেলভম— জয়ললিতা কাকে বেশি বিশ্বাস করেন— এটাই তার পর থেকে এডিএমকে-র ঘরোয়া বিতর্কের বিষয় হয়ে থেকেছে। রাজনৈতিক শিবিরের মত হল, পনীরসেলভম যেটা কখনওই করেননি, সমান্তরাল ভাবে সেটাই করে গিয়েছিলেন পালানিসামি। অর্থাৎ চিন্নাম্মার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে যাওয়া। সেই কারণেই এই বেগতিক পরিস্থিতিতে তাঁকে সামনে নিয়ে এলেন শশিকলা।
আরও পড়ুন:
মুখ্যমন্ত্রীর রোষে সাসপেন্ড ৬ বছর, কী আছে কপালে? জানতে চান সেই ডাক্তার
পালানিসামির ঘনিষ্ঠ নেতারা আজ এও দাবি করছেন যে, হাসপাতালে যখন শয্যাশায়ী ছিলেন জয়ললিতা, তখনই সাময়িক ভাবে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য পালানিকে নাকি বলে রাখা হয়েছিল। পুলিশের কাছেও এই খবর পৌঁছে যায়। কিন্তু কী ভাবে যে পনীরসেলভম মুখ্যমন্ত্রী হয়ে গেলেন— সেই রাজনৈতিক খেলাটা আজও অস্পষ্টই থেকে গিয়েছে সমর্থকদের কাছে। শশিকলার পাশে দাঁড়িয়ে পালানি তার পরই যুদ্ধ শুরু করে দেন পনীরের বিরুদ্ধে। মহাবলীপুরমের গোল্ডেন বে বাংলোয় শশিকলার সমর্থক বিধায়কদের নিয়ে যাওয়ার আগে তাঁরা পালানিসামির বাড়িতে গিয়েছিলেন। তাঁদের ‘ভোকাল টনিক’ দিয়েছিলেন ৬৩ বছরের পালানিই।
এ বাদে এডাপ্পাড়ির চার বারের বিধায়ককে মুখ্যমন্ত্রী বাছার পিছনে অবশ্য একটি জাতপাতের রাজনীতিও কাজ করছে বলে অনেকের মত। পালানিসামি উঠে এসেছেন গোন্ডা সম্প্রদায় থেকে, যারা কিনা এডিএমকে-র ভোট ব্যাঙ্কের একটি বড় অংশ। শশিকলা নিজে থিভর সম্প্রদায়ভুক্ত, সেটাও এডিএমকে-র শক্তির আর একটা বড় অংশ। ফলে শশি এবং পালানির যুগলবন্দি এডিএমকের জমি শক্ত করে ধরে রাখবে বলেই দলীয় নেতৃত্বের আশা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy