Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
National News

সিসিটিভি ফুটেজ নেই! মোদীর পুলিশ বলল, ঐশী হামলাকারী

এসআইটি-র প্রধান বলেন, যাঁরা চিহ্নিত হয়েছেন, তাঁদের নোটিস দিয়ে ডেকে পাঠানো হবে।

অভিযুক্তদের ছবি দেখাচ্ছে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র

অভিযুক্তদের ছবি দেখাচ্ছে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২০ ১৭:১৩
Share: Save:

৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায়, দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা চালিয়েছিল সেই ভয়ঙ্কর হামলা? এখনও কোনও উত্তর ‘নেই’ দিল্লি পুলিশের কাছে। উল্টে, আজ সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে, সে দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও দুটো ‘হামলা’র ঘটনা টেনে এনে, তাতেই অনেক বেশি জোর দিল অমিত শাহের দায়িত্বে থাকা দিল্লি পুলিশ। এবং একাধিক বার আঙুল তুলল বিভিন্ন বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের দিকে। ছাত্র সংসদের সভানেত্রী ঐশী ঘোষকেও হামলাকারী বলল। আর সেই ভয়ঙ্কর হামলায় যে এবিভিপি-র নাম জড়িয়েছে, তাদের কি ক্লিন চিট দেওয়া হল? উত্তর মেলেনি। এমনকি প্রশ্ন করার কোনও সুযোগও এ দিন সাংবাদিকদের দেওয়া হয়নি দিল্লি পুলিশের তরফে।

সাংবাদিক বৈঠক করে দিল্লি পুলিশের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (এসআইটি)-র প্রধান জয় তিরকে বললেন, ওই দিন একাধিক হামলা হয়েছিল। মুখোশধারীরা যেমন হামলা চালিয়েছিল সন্ধ্যায়, তার আগে দুপুরেও এক দফা হামলা হয়েছিল। দুপুরের হামলায় ঐশী-সহ বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে দাবি পুলিশের। আবার ৩ এবং ৪ তারিখ যে সার্ভার রুমে হামলা হয়েছিল, তার এফআইআর দায়ের হয়েছিল ৫ জানুয়ারি রাতে, মুখবাঁধা বাহিনীর হামলার পর। কেন আগের দিন এবং দু’দিন আগের ঘটনায় হামলার পরে এফআইআর দায়ের হল, তার কোনও জবাব দেননি পুলিশকর্তারা।

অন্য দিকে সন্ধ্যায় হামলার কোনও সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যায়নি বলেও দাবি করেছে পুলিশ। তবে ঘটনার অন্যান্য যে সব ভিডিয়ো ফুটেজ পাওয়া গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া এবং অন্যান্য সূত্রে, সেগুলি বিশ্লেষণ করে সন্ধ্যায় হামলার ঘটনায় জড়িতদের কয়েক জনকেও চিহ্নিত করা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন জয় তিরকে। কিন্তু তাঁদের গ্রেফতার করা হয়নি। এসআইটি-র প্রধান বলেন, যাঁরা চিহ্নিত হয়েছেন, তাঁদের নোটিস দিয়ে ডেকে পাঠানো হবে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা হবে, আর কে কে তাঁদের সঙ্গে ছিলেন।

অভিযুক্ত হিসেবে পুলিশ চিহ্নিত করেছে মোট ৯ জনকে— ঐশী ঘোষ, জেএনইউ-এর প্রাক্তনী চুনচুন কুমার, পঙ্কজ মিশ্র, বিজয় ভাস্কর, সুচেতা তালুকদার, প্রিয়া রঞ্জন, দোলন সামন্ত, যোগেন্দ্র ভরদ্বাজ এবং বিকাল পটেলকে। বিভিন্ন ফুটেজ ও এবং অভিযুক্তদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া ছবির সঙ্গে মিলিয়ে তাঁদের নাম প্রকাশ করেছে দিল্লি পুলিশ। অভিযুক্তদের মধ্যে কয়েক জন এবিভিপি সদস্য। পুলিশ বাম ছাত্র সংগঠনগুলির নাম করলেও এক বারও এবিভিপির নাম উল্লেখ করেনি।

পুলিশের চিহ্নিত অভিযোগকারী ৯ জন।

গত ৫ জানুয়ারি জেএনইউ ক্যাম্পাসে ঢুকে মুখঢাকা এক দল যুবক রীতিমতো তাণ্ডব চালায়। ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-অধ্যাপক মিলে মোট ৩৪ জন আহত হন। মাথা ফাটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সভানেত্রী ঐশী ঘোষের। কিন্তু সেই ঘটনার চার দিন পরেও তদন্তে কোনও অগ্রগতি নেই কেন, এক জনকেও কেন গ্রেফতার করতে পারল না পুলিশ— এই সব প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। এর পরেই শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে ওই ঘটনা-সহ দু’-তিন দিন আগের ঘটনার বর্ণনা এবং ছবি-সহ অভিযুক্তদের নাম জানাল দিল্লি পুলিশের এসআইটি।

জয় তিরকের বক্তব্য অনুযায়ী, ৫ জানুয়ারি মুখঢাকা বাহিনীর হামলার আগে থেকেই অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ঘিরে ক্যাম্পাসে গন্ডগোল চলছিল। ৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্ভার রুমে ঢুকে ভাঙচুর চালানো হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্মীদের হেনস্থা করা হয়। পরের দিন সার্ভার রুম ঠিক করা হলে, ফের ভাঙচুর করা হয় বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, ওই ঘটনায় জড়িতরা এসএফআই, এআইএসএফ, আইসা ও ডিএসএফ-সমর্থক। এই চারটি সংগঠনই বাম ঘেঁষা।

এর পর মূল ঘটনার দিন অর্থাৎ ৫ জানুয়ারিও দফায় দফায় ক্যাম্পাসে গন্ডগোল হয়েছিল বলে দাবি জয় তিরকের। তিনি বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী-আধিকারিক, নিরাপত্তারক্ষী-সহ সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে হলে গেটে থাকা যে রেজিস্টারে নাম লিখে ঢুকতে হয়, সেই তালিকাও বিশ্লেষণ করা হয়েছে।’’ ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে এসআইটি প্রধান বলেন, ‘‘৫ জানুয়ারি সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ ক্যাম্পাসের ভিতরে একটি জায়গায় একটি বেঞ্চের উপর কয়েক জন বসে ছিলেন। তাঁদের মারধর করা হয়। নিরাপত্তারক্ষীরা উদ্ধার করতে গেলে তাঁদেরও মারধর করা হয়।’’

পুলিশের দাবি, ‘‘এর পর বিকেল পৌনে চারটেয় আরও একটি মারপিটের ঘটনা ঘটে। ওই সময় পেরিয়ার হস্টেলে ঢুকে বেধড়ক ভাঙচুর ও মারধর করা হয়।’’ এসআইটি কর্তার দাবি, এই পেরিয়ার হস্টেলে হামলায় ঐষী ঘোষ সরাসরি যুক্ত ছিলেন। তাঁর সঙ্গে কিছু প্রাক্তন পড়ুয়া এবং স্থানীয় বাসিন্দাও ছিল বলে দাবি পুলিশের। এর পর সন্ধে সাতটা নাগাদ ঘটে মুখবাঁধা বাহিনীর হামলা। ওই সময় হামলাকারীরা সবরমতি হস্টেলে ঢুকে ভাঙচুর করে এবং মারধর করে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

কিন্তু যে মুখোশধারী বাহিনীর হামলার জন্য সারা দেশ তোলপাড়, সেই হামলা যে কারা চালাল, সেই মূল ঘটনার পিছনে কারা রয়েছে, সে বিষয়ে পুলিশ স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারল না। সার্ভার রুম বা পেরিয়ার ছাত্রাবাসে হামলায় বাম ছাত্র সংগঠনগুলি জড়িত এবং সংগঠনগুলির নাম উল্লেখ করে বলেছে পুলিশ। কিন্তু মূল হামলায় অভিযুক্তদের কয়েক জনের ছবি দেখিয়ে নাম-পরিচয় জানালেও তারা কোন সংগঠন বা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত তা এক বারও উচ্চারণ করেননি পুলিশকর্তা।

আবার সিসিটিভি ফুটেজ কেন পাওয়া গেল না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এসআইটি কর্তা জানিয়েছেন, ‘‘সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যায়নি। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া-সহ বিভিন্ন ভাবে হাতে পাওয়া বেশ কয়েকটি ভিডিয়ো ফুটেজ খতিয়ে দেখে কয়েক জনকে শনাক্ত করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

JNU JNU ATTACK JNU VIOLENCE Aishe Ghosh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE